ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

প্রকৃতির সঙ্গে পদ্মের মিতালি

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০
প্রকৃতির সঙ্গে পদ্মের মিতালি পদ্মবিল, ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পড়ন্ত বিকেলে মৃদু-মন্দ আবহাওয়ায় বিলের পানির ঢেউয়ের তালে তালে মাথা উঁচু করে আছে সাদা-গোলাপি পাঁপড়ির মিশেলে একেকটা পদ্মফুল। বিল জুড়ে পদ্মফুলের এমন অপরূপ সৌন্দর্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমিদের মনকে যেন নাড়া দেয়।

কেউ বিলের পাড়ের গাছ তলায় বসে উপভোগ করছেন এ সৌন্দর্য। আবার অনেকেই নৌকায় চড়ে পুরো বিল ঘুরে দেখছেন। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধুই পদ্ম ফুল। এ দৃশ্য মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। স্বচ্ছ জলরাশিতে ভেসে থাকা পদ্মফুল পুরো বিলের কানায় কানায় ভরে আছে।  

তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাষু ও প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে নতুন ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার ঘাটুটিয়া ও মিনারকুট পদ্মবিল। প্রায় দুইশ একরের এই পদ্মবিলে আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস পদ্মফুল ফুটে থাকে।

সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেকটা পদ্মের কলি ভেদ করে পাঁপড়ি মেলে নিজের সৌন্দর্যের জানান দেয় প্রকৃতির মাঝে। সেই সৌন্দর্যকে যেন আরো নৈসর্গিক করে তোলে খাবার সংগ্রহের জন্য দলবেঁধে ছুটে আসা শালিক পাখি। তাদের কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিল। প্রতিটি পদ্ম পাতার উপরে মুক্তার মত টলমল করতে থাকা পানি যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের অলঙ্কার।

পদ্মবিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীরা ভিড় করে। তাদের কেউ কেউ ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ান বিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
পদ্মবিল, ছবি: বাংলানিউজ

বিলে ঘুরতে আসা কলেজছাত্র নাসিম হোসেন ও রাকিবুল বাংলানিউজকে বলেন, ঘাটুটিয়া পদ্মবিলের নাম শুনেছি। সরেজমিনে এসে দেখি খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আমরা তিন বন্ধু মিলে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে পুরো বিল ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। তবে যাত্রা পথে কর্নেল বাজার থেকে ঘাটুটিয়া পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দ থাকায় এবং সড়কটি সরু হওয়াই যান চলাচলে কিছুটা সমস্যা হয়। সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হলে দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধা হবে।

কলেজছাত্রী শামীমা ইয়াছমিন বলেন, এটা পদ্মবিল। এর চারপাশে গাছপালা রয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সবাই আসতে পারে। পাশে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তাও আছে।  

ঢাকা শহর থেকে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সাংবাদিক ও লেখক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই পদ্মবিলে না এলে বুঝতে পারতাম না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেকটি রূপের বিষয়। এখানকার মানুষের প্রকৃতি সংরক্ষণের যে তাগিদ তা সত্যিই আকৃষ্ট করে সবাইকে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে পদ্মবিল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।  
নৌকায় করে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে দুই শিশু, ছবি: বাংলানিউজ

তবে অনেকটা আপেক্ষের কণ্ঠে স্থানীয়রা বলেন, বিল সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক দর্শনার্থী বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে ফুল ছিঁড়ে ফেলে। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের প্রতি আহ্বান জানাই বিলের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ফুল না ছিঁড়তে।  

কথা হয় মিনারকোট গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাশে পদ্মবিল। কয়েক যুগ ধরে এই বিলে পদ্মফুল ফুটছে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয় বাসিন্দা শিপন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগে মানুষ তেমন বেশি একটা আসত না। চার/পাঁচ বছর ধরে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। ফুলগুলো যখন পানিতে ভেসে থাকে তখন এর সৌন্দর্যটা বেশি থাকে। তবে বেশিরভাগ দশনার্থীই ফুল ছিঁড়ে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট করে।  
 
ডিঙ্গি নৌকার মাঝি জয়নাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। ছোট নৌকা নিয়ে বিলের পাড়ে বসে থাকি। বিভিন্ন লোকজন নৌকায় চড়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করে। এতে প্রতিদিন ৫০০থেকে ১০০০ হাজার টাকা রোজগার হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারি।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মে. রইস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্ম বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে দর্শনার্থীরা নিরিবিলি এবং নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিলকে জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সবর্ত্র বিলের সৌন্দর্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।