ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সাইকেলে বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন

মারিয়া সালাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১০
সাইকেলে বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন

সাং ইউল আহন, ৩৪ বছর। হিউল আহন, ১৭ বছর।

বেশ হাসিখুশি চেহারার দুজন কোরিয়ান তরুণ। দেখলেই বোঝা যায়, বেশ বন্ধুবৎসল এবং ভ্রমণবিলাসী । তাদের শখ সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণ করা আর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মানুষের জীবনযাপনের রীতিনীতি উপভোগ করা। প্রিয় সাইকেলে চেপে তারা ঘর ছেড়েছে  গত সেপ্টেম্বরে, ঘুরে এসেছে মঙ্গোলিয়া এবং  ভিয়েতনাম। এই দুই সাইকেল আরোহী বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে গত মাসে। এরই ফাঁকে তারা এসেছিলেন বাংলানিউজের অফিসে, বাংলাদেশের বিশ্বপর্যটক উজ্জ্বলের সঙ্গে। উজ্জ্বল ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৫৪টি দেশ ঘুরে এসেছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের ব্যক্তিগত ও ভ্রমণসংক্রান্ত বেশ কিছু মজার তথ্য।

বাংলাদেশে স্বাগতম । কেমন লাগছে বাংলাদেশ ?

বেশ ভালো। আমরা এখানে আসার পর তেমন কোথাও বের হবার সুযোগ পাইনি, তাই এ মুহূর্তে অনেক কিছু বলতে পারছি না। বাংলাদেশের মানুষ বেশ ভালো, তারা অতিথিপরায়ণ। তবে, তোমাদের রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না, বেশ জ্যাম।

তোমাদের ভ্রমণ নিয়ে কিছু বলো।

আমরা ঘর ছেড়েছি সেই সেপ্টেম্বরে। মঙ্গোলেয়া আর ভিয়েতনাম সফর শেষ করে এলাম তোমাদের দেশে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ইন্ডিয়া এবং নেপাল। আমরা মাত্র ১০,০০০ ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। বিশ্বভ্রমণ শেষে দেশে ফিরব ২০১৫ সালে। আমাদের প্রতিদিনের খরচ মাত্র ৫ ডলার। মঙ্গোলেয়া আর ভিয়েতনামের মানুষ খুব ভালো। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। তবে মাঝে মাঝে রাস্তাতেও রাত কাটাতে হয়েছে। তারপরেও আমাদের সবকিছুই বেশ ভালো লাগছে।

হঠাৎ সাইকেলে ভ্রমণের শখ কেন হলো তোমাদের?

প্রথম থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জীবনযাপনের রীতি আমাদের আকৃষ্ট করত । খুব কাছে থেকে মানুষকে দেখতে চাইতাম। কিন্তু বিশ্বভ্রমণের মতো এত ব্যয়বহুল শখ পূরণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার আমাদের তা ছিল না। তাই অবশেষে সাইকেলই বেছে নিয়েছিলাম। এতে কষ্ট আছে ঠিকই, তবে মজাটাও খাটো করে দেখা যাবে না।

ভ্রমণের পেছনে তোমাদের  উদ্দেশ্য কী ?

বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন। আমরা ভ্রমণের সাথে সাথে ‘প্ল্যান কোরিয়া’ নামের একটি কোরিয়ান এনজিওর হয়ে কাজ করছি। আমাদের ভ্রমণকালীন অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে তাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। তারা আমাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিভিন্ন দেশে অনুদানের অর্থ পাঠাবে।

এই এনজিও কী ধরনের কাজ করে?

তারা মূলত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। বিভিন্ন দেশের শিশুদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট দেশের শাখা অফিসে প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠিয়ে থাকে। এসব অর্থ দিয়ে শিশুদের পড়ালেখা এবং আবাসনের ব্যবস্থা করে স্থানীয় অফিসগুলি।

ভ্রমণের সময়ে কখনো কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

না, তেমন কোনো সমস্যা হয়নি এখনও। বরং, দেশগুলোর মানুষেরা বেশ সাহায্য করেছেন। তোমাদের এখানেই তো আমরা অতিথি হিসেবে আছি। মঙ্গোলিয়ার এক বাসায় আমরা ১৪ দিন অতিথি হিসেবে ছিলাম। আর ভিয়েতনামের মতো অতিথিপরায়ণ দেশ আমরা আর দেখিনি।

বাংলাদেশের সাথে তোমাদের দেশের কি মিল বা অমিল পেলে?

এখনো এতটা বুঝে উঠতে পারিনি। তবে, এখানে একটা বিষয় খুব ভালো লাগল। আমাদের ওখানে যার যার খাবার বিল সে সে দিয়ে থাকে আর এখানে সবাই খেয়ে একজনই বিল দেয়।

তোমরা কি আবার কখনো আমাদের দেশে আসবে ?

আসতেও পারি কোনওদিন। তবে, এ মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য পুরো পৃথিবীটাকে একবার ঘুরে দেখা। এরপর সুযোগ হলে অবশ্যই আসব তোমাদের দেশে।

আমাদের দেশের ভ্রমণবিলাসী মানুষদের উদ্দেশ্যে কিছু বলো ।

বেড়ানোর জন্য অর্থের চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সদিচ্ছা। কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। ইচ্ছা আর অন্তরিকতা থাকলে বিশ্ব জয় করাও সম্ভব।    

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭০০, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad