ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

আম-লিচুতেও করোনার থাবা, শঙ্কায় চাষিরা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২০
আম-লিচুতেও করোনার থাবা, শঙ্কায় চাষিরা

ঢাকা: রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার পালি গ্রামের আম চাষি শফিউল আলম। তার ১০ বিঘা আম বাগান রয়েছে। এ বাগানের আমের পরিচর্যা ও কীটনাশক বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তার বাগান থেকে প্রতিবছর সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু এবার শঙ্কায় আছেন তিনি।

সামনে যতো দিন গড়াচ্ছে ততোই ভয় বাড়ছে শফিকুলের। কারণ লকডাউনে আম কতটা বিক্রি হবে তা তিনি জানেন না।

বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা আছে।  

আম চাষি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছু বন্ধ থাকলে আম বিক্রি হবে না। ১৫ দিন পর আম পাকা শুরু হবে। অবস্থা এরকম থাকলে আমাদের বড় লোকসানের মুখে পড়তে হবে।  

জানা গেছে, আগামী ১৫ মে নামবে গুটি জাতের আম। এরপর গোপাল ভোগ, রানী প্রসাদ, লক্ষণ ভোগ এবং হিম সাগর। এছাড়া ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা নামানো শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।  

শুধু আম নয়। লিচুর ক্ষেত্রে আরো শঙ্কায় চাষিরা। লিচু সাধারণত ২০ মে থেকে শুরু হয়ে ২০ জুনেই শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে করোনা সংকট থাকবে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে আসবে নারায়ণগঞ্জের কদমি লিচু। এরপরে আসবে পাতি লিচু ও চায়না-৩ লিচু। সেখানে প্রায় ১১২ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ইসহাক বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ দিন পরেই বাজারে লিচু আসবে। কিন্তু চলমান সংকটের মধ্যে লিচু বিক্রি হবে না, চাষি দামও পাবে না। আমরা মনে প্রাণে চাই করোনা সংকট কেটে যাক। মে মাসের ২০ তারিখ থেকে ভারতের মাদ্রাজি অথবা মোজাফ্ফরি জাতের লিচু বাজারে আসবে।  

মেহেরপুর জেলার বাগানগুলোতে থোকা থোকা লিচুতে ভরে গেছে গাছ। স্থানীয় মোজাফফর জাতের সঙ্গে বোম্বাই ও চায়না জাতের লিচু চাষ এবার সেখানে বেড়ে গেছে। ডালে ডালে লিচু থাকলেও চাষির মুখে হাসি নেই।

আম-কাঁঠালের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুর জেলায় দুই হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে, যা থেকে ৩৫ কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে আশা করছিল কৃষি বিভাগ এবং লিচু চাষিরা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শঙ্কায় চাষিরা।

রাজশাহী আম ও লিচুর বড় আধার। এখানে সাড়ে চার হাজার হেক্টরে লিচু চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার লাখ মেট্রিক টন।
 
মৌসুমী ফল চাষী এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন ও বাগানের খরচ উঠানো দায়। এ অবস্থায় মৌসুমী ফলের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর মনিটরিং ও মূল্যায়ন সূত্র জানায়, আম নিয়ে এখনও এ ধরনের অনিশ্চিয়তা না হলেও লিচু নিয়ে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ এবার আমের বাম্পার মুকুল এসেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে অধিকাংশ গাছে ভালো মুকুল এসেছে। আগাম মুকুল আসা গাছগুলোতে এখন আমের কড়ালি বা গুটি শোভা পাচ্ছে। আর দেরিতে মুকুল আসা গাছে ‘মটরদানা গুটি’। এই দুই পর্যায়েই কীটনাশক স্প্রে করা জরুরি। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বর্তমানে গাছের গোড়ায় পানি এবং বিভিন্ন প্রকারের সার দেওয়ার সময়। তা না হলে আমের ফলন বিপর্যয় হতে পারে।

তবে কৃষকরা বলছেন, লকডাউন চললেও কৃষি উপকরণ সরবরাহ চালু রাখার সরকারি নির্দেশনা স্থানীয়ভাবে মানা হচ্ছে না। সার ও কীটনাশকের দোকানও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে দেন-দরবার করে কীটনাশক ও সার মিললেও পরিচর্যায় এখন প্রধান প্রতিবন্ধকতা শ্রমিক সঙ্কট।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে পুঠিয়া, মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, বাগমারা, মোহনপুর ও পবায় এবার ৮৫ ভাগ আম গাছে ভালো মুকুল এসেছিল। এছাড়া কিছুটা কম হলেও তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আম বাগানগুলোয় গাছে মুকুল ছিল। কিন্তু মুকুল আসার পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি হয়নি। তারপরও ফলন ভালো হবে। নতুন শঙ্কা এখন কভিড-১৯।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দশম। এবার ২ লাখ ৩৫ হাজার একর জমিতে ১২ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।

জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে ৬০ শতাংশ ফল উৎপাদিত হয়। অথচ এই সময়ে দেশ করোনার কবলে। সুতরাং চাষীরা সমস্যায় পড়বেন। কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। পাশাপাশি সরবরাহের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে ভয়ে বাজারে যেতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (ফল ও ফুল) মো. আহসানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ৬০ শতাংশ ফল উৎপাদিত হয়। অথচ এই সময়ে করোনায় লকডাউন চলছে। ফলে চেইন সাপ্লাই সেইভাবে হচ্ছে না। মানুষ মুক্তভাবে বাজারে যেতে পারছেন না। আর কিছু দিন পরেই বাজারে লিচু আসবে। সঙ্গে আগাম জাতের আমও আসবে। করোনার প্রভাবে আম ও লিচু চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।