ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

এক বিদূষী নারী হয়ে উঠার গল্প ‘খনা’

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এক বিদূষী নারী হয়ে উঠার গল্প ‘খনা’ খনা নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: এক বিদুষী ‘খনা’ যার অন্য নাম লীলাবতী। তার গল্পটা অনেক পুরনো, কিংবদন্তীর ঘেরাটোপে বন্দি। তবু যেটুকুর তল খুঁজে পাওয়া যায় তাতে বোধ হয় যে, তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী। স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির।

পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার ‘খনা’ হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা।

খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সঙ্গে, সেই তার কাল?

প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে যা নির্ভুল, কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা, তার সে নেশা কি একরোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে করেন প্রশ্নের সম্মুখীন। এভাবেই নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় নাটক 'খনা'র কাহিনী।

বুধবার (১০ এপ্রিল) সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাটকের দল বটতলা প্রযোজিত নাটক ‘খনা’। সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত এ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার।

বাঙালির চিরায়ত লোকসংস্কৃতির অনবদ্য এ আখ্যানে ভাষাই হয়ে ওঠেছে মূল উপজীব্য। নাটকটি ইতোমধ্যেই দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হওয়ার পর দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। নাটকটিটে দর্শকরাও বাহবা দিয়েছে বেশ। প্রসংশা করেছে গল্প আর দৃশ্যকাব্যের।

দর্শনার্থী হাফিজির রহমান বলেন, এ নাটকটি প্রথম দেখলাম। অনেক আগে সত্যবাদী একজন মেয়ে ছিল, যার নাম ছিল খনা। সত্য কথা বলার দায়ে তার স্বামী তার জিব কেটে দিয়েছিল আর সেই জিব টিকটিকি খেয়েছিল। তখন থেকেই টিকটিকি হয়ে গেল সত্যের সংকেত দাতা। এমনটিই জানা ছিল খনা সম্পর্কে। এর বাইরে ওই সময় তাকে নিয়ে ভাবনার বিস্তরণ ঘটেনি। জেনেছি শুধু এইটুকুন খনার বচন। তবে এই নাটক দেখে শিখলাম, জানলাম। খনা সত্যের সাথে থেকেছে বলেই ‘খনা’ এক বিদূষী নারী হয়ে উঠেছে কাল থেকে কালে।

নাটকে অসাধারণ অভিনয় লীলা দেখিয়েছেন প্রায় সকল অভিনেতারাই। বিশেষ করে প্রধান চরিত্রে সামিনা লুৎফা নিত্রার অভিনয়ে প্রেম, দ্রোহ, সারল্য, প্রশ্ন, উত্তর, বচনের পর বচন, জেদ, বচন ভঙ্গিমা এক অনবদ্য দেহকাব্যব সৃজনে নবরস সৃষ্টি করেছেন বলেই মন্তব্য দর্শকদের।

নাটকটিতে আরো বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমিত তেওয়ারি রানা, ম. সাঈদ, পঙ্কজ মজুমদার, মোহাম্মদ আলী হায়দার, কাজী রোকসানা রুমা, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, শারমিন ইতি, মিজানুর রহমান, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, নাফিউল ইসলাম, হাফিজা আক্তার ঝুমা ও শেউতি শা’গুফতা প্রমুখ।

২০০৮ সালে ‘ধামাইল’ নাটকের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নাট্যদল বটতলা। এরপর তারা মঞ্চে আনে নাটক ‘একজন রুহুল আমিন’। র‌্যাংগস ভবন দুর্ঘটনায় নিহত রাজমিস্ত্রী রুহুল আমিনের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল নাটকটি। ‘খনা’ বটতলার তৃতীয় প্রযোজনা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এইচএমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।