ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মোড়াকরির মৃৎশিল্পীরা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মোড়াকরির মৃৎশিল্পীরা  মোড়াকরির মৃৎশিল্পীদের শিল্পকর্ম, ছবি-বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ থেকে ফিরে: খড়গুলোকে একত্রিত করে বেঁধে তার মধ্যে এঁটেল মাটির গভীর প্রলেপ টেনে তৈরি করা হয় একেকটি ভাস্কর্য। মূর্তিমান এ ভাস্কর্যগুলোর সমন্বয়েই আয়োজন করা হয় সনাতন ধর্মীয় একেকটি উৎসবের। মৃৎশিল্পীদের অভিজ্ঞতা, মেধা আর নৈপুণ্যে প্রকাশ পায় এ শিল্পের নান্দনিকতা।

লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের মৃৎশিল্পীদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে প্রতিমা তৈরির আমেজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রাথমিক পর্বটি সূচনা করে ফেলেছেন তারা।

কেউ বসে নেই, ঘরে ঘরে চলছে দুর্গাদেবীকে নির্মাণ করার সম্বিলিত প্রচেষ্টা।
 
গ্রামের পাশ দিয়ে নীরবে বয়ে যাওয়া ‘বলভদ্র নদী’ এ এলাকার মৃৎশিল্পীদের পেশা উৎকর্ষকে সুদূরপ্রসারী করে দিয়েছে। শুধু দুর্গা প্রতিমাই নয়, বিভিন্ন মূর্তি, হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা মাটির তৈরি জিনিসপত্র ক্রেতারা সহজে কিনে নৌকার সাহায্যে নদীপথে দূর-দূরান্তে নিয়ে যেতে পারেন। এই প্রয়াস চলে আসছে অনাদিকাল ধরে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের এ এক অনন্য উদাহরণ।  

মোড়াকরির মৃৎশিল্পীদের শিল্পকর্ম, ছবি-বাংলানিউজ
সম্প্রতি মোড়াকরি কুমারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, মৃৎশিল্পীদের মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ততা। এ এলাকার একেকজন মৃৎশিল্পীর অভিজ্ঞতা ১০, ১৫, ২০ বছর বা তারও বেশি। এরা প্রত্যেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে এই শিল্পনির্ভর নান্দনিক গুণের অধিকারী। এ গ্রামে মৃৎশিল্পীর সংখ্যা ১৫।
 
বারো বছরের বেশি সময় ধরে এ শিল্পে কাজ করে যাওয়া কুমারপাড়ার নিশিকান্ত পাল বলেন, দুর্গাপূজা আসতে দু’ মাসের কম সময় আছে। আমাদের গ্রামের প্রত্যেকেই এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত। এ পর্যন্ত আমি প্রায় দশটি মূর্তি তৈরির অর্ডার পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। তাই আমরা কাজগুলো গুছিয়ে রাখছি। নতুন করে অর্ডার নিতে যেন অসুবিধে না হয়।
 
দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, একেকটি মূর্তি প্রায় সতেরো হাজার থেকে চল্লিশ হাজার পর্যন্ত। এগুলো আসলে নির্ভর করে মূর্তির আকার-আকৃতি, ডিজাইন এবং খরচের উপর। বড় মূর্তি হলে ডিজাইন বড় হয়, উপকরণ বেশি লাগে তাই দামটাও বাড়তে থাকে তুলনামূলকভাবে। সাধারণত একেকটি প্রতিমা উচ্চতায় ৭ থেকে ১০ ফুট এবং লম্বা ১৫ থেকে ১৮ ফুট হয়।
 
অন্যত্র গিয়ে প্রতিমা তৈরি প্রসঙ্গে নিশিকান্ত বলেন, অন্য জায়গায় বা বিভিন্ন পূজা উদযাপন পরিষদের মণ্ডবে গিয়ে সেখানে থেকে প্রতিমা তৈরি করতে হলে নির্মাণসহ অনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে যায়। আমাদের বাড়ির প্রতিমা তৈরির তুমুল ব্যস্ততার জন্য এটা সম্ভব হয় না। তবে উপযুক্ত টাকা পেলে যাই।
 
প্রতিমা নির্মাণ প্রসঙ্গে মোড়াকরি অপর মৃৎশিল্পী নান্টু পাল বলেন, এসব মূর্তি তৈরিতে দোঁআশ এবং এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া বাঁশ, খড়, ছোট দড়ি প্রভৃতি উপকরণ তো রয়েছেই। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন লাগে একেকটি প্রতিমা পুরোপুরি তৈরি করতে।
 
আমাদের গ্রামের পাশেই রয়েছে বলভদ্র নদী। অনেকে নৌকা করে আমাদের তৈরি মূর্তি কিনে নিয়ে যান। সড়কপথের চেয়ে নৌপথে মূর্তিগুলো বহনে সুবিধা অনেক বেশি। সহজে ভেঙে যায় না বলে জানান নান্টু পাল।  
 
এই শিল্পের মর্যাদা কয় জন বুঝে বলুন আমাদের অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। অথচ একসময় এই মাটির তৈরি জিনিসের প্রচুর কদর ছিল। আর এগুলো পরিবেশ এবং মানুষের সুস্থতার জন্য উপকারী –বলেন নিশিকান্ত পাল।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।