ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন করে শিল্পকলা একাডেমি।

ঢাকা: অনেক কথা আর হাসি-কান্নার স্মৃতি নিয়ে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। চৈত্রের শেষ সূর্যটি অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো দিনের দুঃখ-বেদনা, গ্লানি ও জরাজীর্ণতা ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সমগ্র বাঙালির মাঝে এখন প্রাণান্তকর চেষ্টা। 

কী পেয়েছি বা হারিয়েছি সে হিসেব না কষে আগামীদিনে কী পাবো সে হিসেব কষতে বেশি ব্যস্ত ছিলো সাংস্কৃতিক অঙ্গণের মানুষেরাও।

শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) নাচ, গান, লাঠি খেলা, রায়বেশে নৃত্য, আবৃত্তি, শাস্ত্রীয় সংগীত, নাটক, বাউল গানসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে পুরনো বছরের জীর্ণতাকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের প্রাপ্তির প্রত্যাশার পাশাপাশি ছিল নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার মহড়া।

রাজধানীসহ সারাদেশ চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপনে শেকড় সন্ধানী নাগরিক মন ঐতিহ্যের আবাহনে উৎসবপ্রিয় বাঙালির উৎসাহ-উদ্দীপনায় শামিল হয়েছে। এসময় সাংস্কৃতিক আবহে উৎসবের রং ছড়িয়ে নতুন বছরে সফলতার পথে ধাবিত হওয়ার প্রত্যাশা ছিলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের চোখেমুখেও।

শিল্পকলা একাডেমি:
লাঠি খেলা, লোকসংগীত, পালাগান ও দলীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪২৪ উদযাপন করেছে শিল্পকলা একাডেমি।

চৈত্রসংক্রান্তির কিশোরগঞ্জের বওলাই জমিদারবাড়ির ওসমান গণি লাঠিয়ালের পরিচালনায় লাঠি খেলার মধ্য দিয়ে বিকেলে একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শুরু হয় এই আয়োজন। অনুষ্ঠানে লালনের কীর্তন পরিবেশন করেন সরকার হীরক রাজা। কালুশা ফকির গেয়ে শোনান ‘আমার মুর্শিদ পরশমনি গো’। দিতি সরকার পরিবেশন করেন ‘তুমি জানো না গো প্রিয়’। আরো সংগীত পরিবেশন করেন শান্তা তুলি পাল, ফারুক নুরী, রিতা মণ্ডল, ডলি, বিদ্যুৎ কুমার সরকার, শেখ হেমায়েত, গোলাম মোস্তফা ও রোকসানা আক্তার রূপসা। অনুষ্ঠানে গম্ভীরা পরিবেশন করে রসকস এবং পালাগান পরিবেশন করে পদ্মার নাচন।

চারুকলা অনুষদ:
নাচ, গান, আবৃত্তি ও ব্যান্ডসংগীতের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া এ আয়োজনে শিল্পীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে শিক্ষার্থীরাও নাচে গানে মেতে ওঠেন। অনুষ্ঠানে ব্যান্ডসংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল ‘ক্ষ্যাপা বাউল’ ও ‘চিত্রপট’।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন:
ব্যান্ডদল জলের গানের সংগীতাসরের মধ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। লালমাটিয়ায় বেঙ্গল বইঘরের উঠোনে সন্ধ্যায় জলের গান তাদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে। জলের গানের উন্মাদনায় অনুষ্ঠানস্থলে আগত সবাই সুরের দোলায় দোলায়িত থাকে। প্রতিটি গানের পরিবেশনার পর শ্রোতাদের ওয়ান মোর ওয়ান মোর আবেদনে আসরটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।

লালন চর্চা কেন্দ্রে:
বাংলা ১৪২৪কে বিদায় জানাতে টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বাউল গানের আয়োজন করে লালন চর্চা কেন্দ্র। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ আসরে লালনসংগীত পরিবেশন করেন টুনটুন বাউল, রুশিয়া খানম, কাজী রিবন, রকি বাউল, আনোয়ার হোসেন মিরু, ফারুক নুরী প্রমুখ।

সুরের ধারা:
নতুন বছরকে বরণের উদ্দেশে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়েছে সুরের ধারা ও চ্যানেল আই। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘চৈত্রসংক্রান্তি’র এ আয়োজন। চৈত্রের শেষ দিনের সুর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ‘সুরের ধারা’র বিভিন্ন বয়সী শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘তা তা থৈ থৈ’ এবং ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে’ শীর্ষক দু’টি গান। এ সময় অতিথি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজাসহ দেশি বিদেশি অতিথিবৃন্দ।  

স্বাগত বক্তব্য দেন সুরের ধারা’র অধ্যক্ষ শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। পরে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সহশিল্পীদের নিয়ে পরিবেশন করেন ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’ শীর্ষক গান। সম্মেলক সংগীত, একক সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য, নৃত্যনাট্য-সহ নানান আয়োজনে সাজানো মধ্যরাত পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে চ্যানেল আই।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন:চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করে সংগীত সন্ধ্যার।
সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪২৪ উদযাপন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। পুরনো বছর ১৪২৪ সালের শেষ সূর্যটি পশ্চিমাকাশে অস্তমিত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নাট্যাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। এরপর নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো প্রখ্যাত শিল্পী শাহাদত হোসেন খানের সরোদ বাদন। সবশেষে নাট্যকর্মীদের জন্য ছিলো র‌্যাফেল ড্র। অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে মুড়ি-মুড়কি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

জাতীয় জাদুঘর:
চৈত্রকে বিদায় এবং ১৪২৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখকে আহ্বান উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সন্ধ্যায় আয়োজন করে সংগীত সন্ধ্যার। এতে একক সংগীত পরিবেশন করেন শামা রহমান। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শ্রোতাদের মোহিত করেন তিনি। এসময় তার গাওয়া কয়েকটি গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ধায় জানো মোর সকল ভালোবাসা, গানের ভেতর দিয়ে যখন দেখি, আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, নুতন প্রাণদায় হে প্রাণো সখা, নব আনন্দে যাবো ইত্যাদি। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
 

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা; এপ্রিল ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।