ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

পাহাড় চূড়ার মসজিদ ও পায়রার উড়ান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
পাহাড় চূড়ার মসজিদ ও পায়রার উড়ান গোলকন্ডা দুর্গের ইব্রাহীম মসজিদ,ছবি: শুভ্রনীল সাগর

গোলকন্ডা (হায়দ্রাবাদ) থেকে: চোখের পলক ফেলতেই দু-তিন পাক সারা। ক্যামেরার সেটিং ঠিক করতে করতে আরও গোটা ছয়-সাত। মানুষ হলে এতোক্ষণে মাথা ঘুরে পড়ে যেতো! কিন্তু পায়রাদলের সে নিয়ে মাথা ব্যথা মোটেও নেই। ইচ্ছে হলেই দল ধরে চরকির মতো পাক দিয়ে মসজিদের মিনারের চারাপাশে এসে বসে।

চার নভেম্বরের সকাল। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে সূয্যিমামার মেজাজ চড়চড় করে বাড়ছে।

তার দিকে তাকানোর জো নেই, মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে। এর উপর গোলকন্ডা দুর্গের পাথুরে পথ। ৪৫০ ফুট ইতোমধ্যেই ঠেঙিয়ে সবে গাছের নিচে জিরোতে বসা, ঠিক তক্ষুণি পায়রার উড়ান। গোলকন্ডা দুর্গের ইব্রাহীম মসজিদ,ছবি: শুভ্রনীল সাগরব্যাটারা আর সময় পেলো না! পড়িমড়ি করে ক্লিক করতে করতেই তখনকার শো শেষ। এরপর নানারকম ডাক দিয়ে, হই-হুশ করে, ছোটোখাটো ঢিল ছুড়ে কাউকে নড়ানো ‌পর‌্যন্ত গেলো না। সেই যে ইব্রাহীম মসজিদের মিনারের চারপাশে গিয়ে বসলো, এরপর কেবল কুরর, কুররর আওয়াজ। অগত্যা রাস্তা মাপাই ভালো!

যাইহোক, কুতুব শাহী সালতানাতের মসনদে তখন ইব্রাহীম কুলি কুতুব শাহ। তিনি এ সাম্রাজ্যের ‘প্রথম’ সুলতান। তার আগেও তিনজন কুতুব শাহী শাসক থাকলেও ইব্রাহীম কুলিই প্রথম সুলতান উপাধি ব্যবহার করা শুরু করেন। ১৫১৮ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্প-সাহিত্যরসিক এ সুলতান সিংহাসনে বসেন ১৫৫০ সালে। সেও এক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে। গোলকন্ডা দুর্গের ইব্রাহীম মসজিদ,ছবি: শুভ্রনীল সাগরইব্রাহীম কুলির ভাই জামশেদ কুলি কুতুব শাহ নিজের বাবাকে হত্যা ও বড়ভাইদের চোখ তুলে নিয়ে ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। ইব্রাহীম কুলি পালিয়ে গিয়ে রাজ অতিথি হন বর্তমান তামিলনাড়ু অংশের বিজয়নগর রাজার। সেখানে থেকে তিনি তেলেগু ভাষা শেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার শাসনামলে তেলেগু সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বহু হিন্দু ধর্ম্বালম্বীকে তার সালতানাতের প্রশাসনিক, কূটনৈতিক ও সেনাদলের বিভিন্ন উচ্চপদে বসান।

১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে জামশেদ মারা গেলে সিংহাসনে বসেন তার নাবালক পুত্র সুবহান কুলি কুতুব শাহ। এই সুযোগে গোলকন্ডা ফেরেন ইব্রাহীম কুলি এবং সিংহাসনের দখল নেন। গোলকন্ডা দুর্গের ইব্রাহীম মসজিদ,ছবি: শুভ্রনীল সাগর১৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটা যুদ্ধে জয়ী হয়ে দখলে আনেন আদোনি ও উদয়গিরি দুর্গ। নিজ রাজ্যের নিরাপত্তা বাড়াতে গোলকন্ডা দুর্গেরও অনেক সংস্কার করেন তিনি। সেসময় দুর্গের চূড়ায় নির্মাণ করেন নয়নাভিরাম এক মসজিদ। তার নামানুসারে নামকরণ হয় ‘ইব্রাহীম মসজিদ’।

পারসিয়ান স্থাপত্যে বানানো দুই মিনারের এই মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে তিনশো বছর। নান্দনিক নকশা ও চোখ জুড়ানো কারুকাজ মসজিদের সৌন্দর‌্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুণ। সময়ের বিবর্তনে মসজিদের গায়ে রঙচটা ছোপ পড়লেও নীল আকাশের গায়ে মাথা তুলে ঠিক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই গোলকন্ডা দুর্গের এতো এতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিড়েও মসজিদ, মিনার ও পায়রার উড়ান ঠিকই আলাদা করে নজর কাড়ে!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এসএনএস

গোলকন্ডা দূর্গ: বোবা পাথরে অসমাপ্ত প্রেমের হাহাকার

৯শ বছর ধরে হায়দ্রাবাদের প্রতাপ বয়ে চলেছে যে দুর্গ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।