ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ট্রেন ধরার তাড়াহুড়ো পেরোয় ‘হাওড়া’ ব্রিজ

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
ট্রেন ধরার তাড়াহুড়ো পেরোয় ‘হাওড়া’ ব্রিজ হাওড়া ব্রিজের রূপ

হাওড়া থেকে: প্রথম দেখি ২০১১ সালে। সন্ধ্যা হবে হবে। ব্রিজের নজরকাড়া লাইটগুলো একে একে জ্বলতে শুরু করেছে। হাওড়া স্টেশনের পুরনো ভবনের সামনের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভীষণ মুগ্ধ!

নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গার অংশ হুগলী নদী। জলে অপরূপ হাওড়া ব্রিজের ছায়া।

বইয়ে কতো পড়েছি, ছবিতে দেখেছি। ইচ্ছে ছিলো আরেকটু ঘুরে ঘুরে দেখার, কিন্তু ট্রেন ধরার তাড়া ছিলো। অগত্যা যেতেই হলো।

এই হয়। যতোবার এদিকটায় আসা হয়, তা ট্রেনের কল্যাণেই। হয় যাচ্ছি, নয় আসছি। এ পথের সব বাস-গাড়ির যাত্রীদের চোখেমুখে সবসময় তাড়াহুড়ো দেখি। রোজ এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রায় দেড় লাখ যানবাহন আসা-যাওয়া করে। সবারই বলা চলে ট্রেন ধরার তাড়া। কারও মাথায় শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটার লাইন, কারও ট্রেন মিস করার আশঙ্কা। নয়নাভিরাম প্রকৌশলের হাওড়া ব্রিজ নয়, মনোযোগের পুরোটা জুড়ে থাকে ট্রেন। হাওড়া ব্রিজের রূপদাফতরিক নাম অবশ্য হাওড়া ব্রিজ নয়, রবীন্দ্র সেতু। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে হাওড়া ব্রিজের এই নামকরণ হয়। কিন্তু পুরনো নামটিই জনমুখে বেশি প্রচলিত।

পুরনো দিনের কথা উঠলো যখন একটু পেছনের পাতা ওল্টানো যাক। ১৮৭১ সালে বাংলা সরকারের আইন বিভাগ হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ করে। প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলের সঙ্গে এই ব্রিজের পরিকল্পনা, নকশা ও বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি হয়। কারিগরি কারণে ব্রিজের কিছু অংশ ইংল্যান্ডে তৈরি এবং জাহাজে করে কলকাতা নিয়ে এসে তা প্রকল্প স্থানে জুড়ে দেওয়া হয়।

নির্মাণের সময় ১৮৭৪ সালের ২০ মার্চের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ব্রিজের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়। ঈগেরিয়া নামে একটি স্টিমারের নোঙর ছিঁড়ে ব্রিজের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে এবং ব্রিজের তিনটি পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে যায়। এর ফলে ব্রিজ অবকাঠামোর ২০০ ফুট অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ পুনর্নির্মাণ করে ১৮৭৪ সালের ১৭ অক্টোবর ব্রিজটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।  

কলকাতা বন্দর কমিশনাররা ১৮৭৫ সালে ব্রিজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। ১৮৭৯ সালে আগস্ট মাসে ব্রিজটির মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে ব্রিজে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়।

বিশ শতকের প্রথমদিকে ব্রিজ কমিশনাররা তৎকালীন কলকাতা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী জন স্কটের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি প্রথমেই একটি নতুন ব্রিজ তৈরির বিষয়ে মনোযোগ দেয়। ১৯২৬ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ হয়। নতুন হাওড়া ব্রিজ কমিশনাররা ক্লিভল্যান্ড ব্রিজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে নতুন ব্রিজ তৈরির কাজ দেয়। ১৯৩৬ সালে ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪২ সালে তা শেষ হয়।  

১৯৪৩ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ততৎকালীন ২০ লাখ রুপি ব্যয়ে নির্মিত নতুন ব্রিজটি ৭০৫ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার চওড়া। ব্রিজটির উভয় পার্শ্বে ১৫ ফুট প্রশস্ত পায়ে চলার পথ।  হাওড়া ব্রিজ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়যানবাহন চলাচলের ৭১ ফুট চওড়া রাস্তায় সোমবার ফের আগমন। গন্তব্য হাওড়া স্টেশন। ফের ট্রেন ধরার তাড়া।

প্রতিবার আসি আর ঠিক করি, একদিন শুধু হাওড়া ব্রিজ দেখতেই আসবো। এবারও তাই হলো। এতো বছরের পুরনো ব্রিজ তবু এখনও বিস্ময় হয়ে রয়ে গেছে।

কোনো একদিন এসে ব্রিজ পার হবো পায়ে হেঁটে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় নিয়ে দেখবো গঙ্গার প্রবাহ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবে। ব্রিজের সবগুলো আলো জ্বলার পর ফিরবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এসএনএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।