ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

দুষ্প্রাপ্য গ্রামোফোন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
দুষ্প্রাপ্য গ্রামোফোন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হারিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎহীন যন্ত্রের নাম গ্রামোফোন বা কলেরগান। যা আজ আর চোখেই দেখা যায় না। কিন্তু একটা সময় এই গ্রামোফোনই বিনোদনের অন্যতম যন্ত্র ছিলো সৌখিন মধ্যবিত্ত সমাজের। অভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে এটিকে মূল্যায়ন করা হতো। 

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : হারিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎহীন যন্ত্রের নাম গ্রামোফোন বা কলেরগান। যা আজ আর চোখেই দেখা যায় না।

কিন্তু একটা সময় এই গ্রামোফোনই বিনোদনের অন্যতম যন্ত্র ছিলো সৌখিন মধ্যবিত্ত সমাজের। অভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে এটিকে মূল্যায়ন করা হতো।  

গ্রামোফোন হলো আধুনিক রেকর্ড প্লেয়ার, স্টেরিও এবং সিডির পূর্বরূপ। গান শোনার এই যন্ত্রটি চালাতে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগের প্রয়োজন হতো না। হাতল ঘুরিয়ে ভেতরে থাকা স্প্রিং এবং কয়েলের সাহায্যে বিশেষ ব্যবস্থায় এটিকে চালানো হতো। অনেকটা আগের দিনের চাবি দেয়া ঘড়ির মতো।  

সময়ের বিবর্তনে এই বিশেষ যন্ত্রটি আজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। তবে কালজয়ী গানগুলোর অন্যতম সাক্ষী হয়ে ইতিহাসে মর্যাদার সোনালী অক্ষরে লেখা রয়েছে গ্রামোফোনের নাম।  

এই উপমহাদেশের অন্যতম ব্রিটিশ গ্রামোফোন কোম্পানি ‘এইচএমভি’ বা ‘হিজ মাস্টার ফয়েজ’ (যার লোগোটি ছিল একটি কুকুর গ্রাফোফোনের দিকে তাকিয়ে আছে) প্রখ্যাত ও জননন্দিত শিল্পীদের গান রেকর্ড করে বাজারজাত করে থাকতো। এছাড়াও গ্রামোফোন কোম্পানিগুলো হলো আমেরিকান ‘কলাম্বিয়া’ এবং ফ্রান্সের ‘পঠে’।
 
শ্রীমঙ্গল শহরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী সুলতান মো. ইদ্রিস লেদু স্মৃতিময় দিনগুলোকে ধরে রাখতে সযত্নে সংগ্রহ করে রেখেছেন তার এ গ্রামোফোনটি।  
 
কথা প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৬৭ সালের দিকে আমাদের একটি গ্রামোফোন ছিলো। পরিবারের সবাই মিলে আমরা গান শুনতাম। আমার বাবা পেশাগত কাজে তখন সুনামগঞ্জের দিরাই, হবিগঞ্জের মাধবপুর প্রভৃতি এলাকায় থাকতেন। তখন নদীপথে পানসি নৌকা দিয়ে আমরা এই কলের গানের যন্ত্রটি সঙ্গে নিয়ে যাতায়াত করতাম। ’


 
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আগের দিনের সেই পুরানো বাংলা গান কিংবা পুরানো হিন্দী গান আমরা কলেরগানে শুনতাম। শচীন দেববর্মন, জগন্ময় মিত্র, মোহম্মদ রফি, লতা, আশা, আব্বাস উদ্দিন, ফেরদৌসী রহমান এসব শিল্পীদের মাটির রেকর্ড ছিল। ওইসব গান শুনতে শুনতে আমরা সন্ধ্যায় নদী এলাকায় ঘুরতাম। জোৎস্না রাতে আমাদের কলেরগান আর নদীর রূপালি পানির ঝলঝল শব্দ অপূর্ব সৌন্দর্য হয়ে ফুটে উঠতো। আহা: কোথায় যে গেল সেই দিনগুলো!’
 
সুলতান মো. ইদ্রিস লেদুর জ্যেষ্ঠভ্রাতা টি হ্যাভেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সিদ্দিক মো. মুসা।  

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামোফোনটি আমাদের পেছনের দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মাটির রেকর্ডে পিন দিয়ে বাজতো গান। সেই গানে মনপ্রাণ নাড়া দিয়ে উঠতো। এখন তো প্রযুক্তির এতো বিশাল সরবরাহ কিন্তু কই? এখনকার গানগুলো তো আগের গানগুলো মতো হৃদয় কাড়ে না। ’
 
পুরাতন রেকর্ড সংগ্রাহক শহীদুল আলম তিতু বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্রামোফোন কোম্পানির প্রথম রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার এফ.ডব্লিউ গেইসবার্গ বাংলাকে গ্রামোফোন জগতের সঙ্গে পরিচিত করান। ১৯০২ সালে গেইসবার্গ প্রথম একজন ভারতীয় শিল্পী গওহর জান এর রেকর্ড তৈরি করেন। ’
 
তিনি আরো বলেন, ‘সাত ও দশ ইঞ্চি ব্যাসের একটি রেকর্ডে তার গানগুলি ধারণ করা হয়। এ রেকর্ডই তাকে অল্পদিনের মধ্যে খ্যাতি এনে দেয়। কলকাতার সব সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় তার ছবি ছাপা হয় এবং এভাবেই ভারত অতিশিগগিরই গ্রামোফোন রেকর্ডের এক বিশাল বাজারে পরিণত হয়। ’ 
 
গ্রোমোফোন সম্পর্কে তিনি বলেন,  গ্রোমোফোনে তিন ধরনের স্পিড (গতি) ছিল। ৭৮ আরপিএম, ৪৫ আরপিএম, ৩৩.৩৩ আরপিএম। আরপিএম হলে ঘূর্ণানুমান গতি। প্রথম যে রেকর্ডগুলো বাজারে এসেছে যেগুলো ছিল ৭৮আরপিএম এবং এর ধারণক্ষমতা ছিল আড়াই মিনিট। তখন এই আড়াই মিনিট এর কথা শুনে তৎকালীন  শিল্পীরা হেসে বলেছেন – ‘আমরা আড়াই মিনিটে কী গান গাবো!’ সেই সময়ের গানগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল বড় বড়।  
 
পুরাতন রেকর্ড সংগ্রহ করার সুবাদে বড় বড় সঙ্গীতশিল্পীদের কথা বলে জানতে পেরেছি বর্তমান আধুনিক গানগুলো দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই মিনিট নির্ধারিত হওয়ার নেপথ্যে এই গ্রামোফোনই বিশাল ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান এই সংগ্রাহক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
বিবিবি/আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।