ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

পূণ্যার্থীদের জন্য প্রস্তুত রাসমেলা

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
পূণ্যার্থীদের জন্য প্রস্তুত রাসমেলা

রাসমেলা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এই উৎসব।

সাতক্ষীরা থেকে: রাসমেলা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এই উৎসব।

কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা দুবলার চরে কবে থেকে এই মেলা শুরু, সেই ইতিহাস অবশ্য কেউ বলতে পারে না। তবে রাসমেলা নিয়ে কথিত রয়েছে নানা ধরনের গল্প।
 
কারও মতে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে একজন হিন্দু সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে বিভিন্ন গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবনযাপন করতেন। ১৯২৩ সালে তিনিই প্রথমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছিলেন।
 
কেউ বলেন, প্রায় শতবছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নে পাপমোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নান করার আদেশ পাওয়ার পর থেকেই রাসমেলার শুরু।
 
অন্য মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসনৃত্যে মেতে ওঠা উপলক্ষেই দুবলার চরে রাস উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
 
তবে যে কারণেই হোক রাসমেলা এখন দক্ষিণবঙ্গের সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সারা বছর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাসমেলার সময়টাতেই সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি মেলে। এ সময়ে সুন্দরবনের অসাধারণ তিনটি জায়গা কোকিলমনি, তিনকোণা দ্বীপ ও নীলকমল দেখার সৌভাগ্যও হয়।
 
আর এ কারণেই পুর্ণ্যার্থী ছাড়াও হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে সেখানে। শনিবার (১২ নভেম্বর) এবারের রাস উৎসব। এ উপলক্ষে সুন্দরবনে প্রবেশের প্রস্তুতি চলছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা যাবেন রাসমেলায়। পুরো দক্ষিণবঙ্গ বিশেষ করে সাতক্ষীরা ও খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় এ বিষয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
 
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে বন বিভাগের অনুমতি (পাস) নিয়েই রওনা হবে দুবলার চরমুখী নৌকা বা ট্রলারগুলো। শুক্রবার থেকে সাতক্ষীরার মাদার নদীতে শত শত নৌকা ও ট্রলার ভিড় জমিয়েছে। সেসব ট্রলার ভর্তি রসদ নিয়ে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় যাত্রীরা।

এবার রাস মেলা উপলক্ষে আগামী ১২ থেকে ১৪ তারিখ বনে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে বন বিভাগ।

দেশি পর্যটকের পাশপাশি বিদেশি পর্যটকেরও সমাগম হয় দুবলার চরে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত এ মেলা উপলক্ষে সেখানে গ্রামীণ মেলাও বসে। বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প সামগ্রী নিয়ে হাজির হন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা।
 
হিন্দুদের পূজা আর প্রার্থনার ফাঁকে সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানো হয়। তবে ভোরে প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে রাস মেলার মূল প্রার্থনা হয়। পুণ্যার্থীরা এদিন সূর্য ওঠার আগেই দুবলার চরের সমুদ্রসৈকতে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রেও জোয়ার শুরু হয়। সেই জোয়ারের পানি প্রার্থনারতদের ছুঁয়ে দিলেই তারা স্নানে নামেন।
 
এরপরেই মেলা ভেঙে ফেরার পালা শুরু। যে ট্রলার যে পথে প্রবেশ করে সেই পথেই তাদেরকে বের হতে হয়। এ বিষয়ে বন বিভাগের রয়েছে কড়া পাহারা। বনে একটি লোক থাকা পর্যন্ত বন বিভাগের কর্মীদের সদা জাগ্রত থাকতে হয়।
 
দুবলার চরে অন্যতম আরেক আকর্ষণ জেলেদের শুঁটকি তৈরি। সাগর থেকে ধরে আনা মাছ দিয়ে এ চরেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
জেপি/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।