ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী শিয়াবুকুর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৬
ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী শিয়াবুকুর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীন!

চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখানদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রদেশটিতে ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল’ একটি জলবিদ্যুৎত প্রকল্প (বাঁধ) নির্মাণের অংশ হিসবেই তারা এটি করেছে।

এর ফলে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য তা বিরূপ ফল বয়ে আনতে পারে। কেননা শাখা নদীটির গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এই দুটি ভাটির দেশ এর পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।

চীনের তিব্বতি ভাষায় ব্রহ্মপুত্র নদের নাম ইয়ারলুং জাংবো(Yarlung Zangbo)। এই ইয়ারলুং জাংবোরই শাখানদী শিয়াবুকু। শিয়াবুকুতে বাঁধ নির্মাণের জন্য চীন তিব্বতের শিগাজে অঞ্চলে লালহো প্রজেক্ট নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পটি ভারতের সিকিম অঙ্গরাজ্যের খুব কাছে। শিগাজে থেকেই ব্রহ্মপুত্র ভারতের অরুণাচলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা শিনহুয়া শনিবার এ খবরটি দিয়েছে। লালহো প্রজেক্টকে তারা চীনের সবচে ব্যয়বহুল নদী-প্রকল্প বলে অভিহিত করেছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালে। ব্রহ্মপুত্রের শাখানদীটির গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় ভারত ও বাংলাদেশে জলপ্রবাহের ওপর কি কি প্রভাব পড়বে শিনহুয়ার খবরে তা না বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

তবে গত বছর চীন ব্রহ্মপুত্রনদে ১৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র/বাঁধ চালু করে। এ ঘটনার পর ভারতজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে চীন তখন বলেছিল, তারা ভারতের উদ্বেগকে আমলে নিয়েছে। চীন তখন এ-ও দাবি করেছিল, চীন যেসব বাঁধ নির্মাণ করেছে বা করবে সেগুলো পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেবার বা আটকে দেবার জন্য নয়। বাঁধ নির্মাণ করলেও পানির প্রবাহ তাতে পুরোপুরি বন্ধ হবে না।

চীনের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উপরোল্লিখিত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাইরে তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রনদের উপর আরও তিনটি বাঁধ নির্মাণ শুরু করার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।

চীন ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় ভাটির দেশ ভারতের জলপ্রবাহ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর কি কি সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব পড়বে, চীনকে তা জানিয়ে গত মার্চে ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদমন্ত্রী সানোয়ার লাল জাট এক বিবৃতি দেন।

প্রসঙ্গত, চীন ও ভারতের মধ্যে কোনো পানিচুক্তি নেই। একারণে নদীর পানিবন্টন ও গতিপথ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে দুদেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি তার দেখভাল করে থাকে।

যার নাম এক্সপার্ট লেভেল মেকানিজম বা ইএলএম (ELM)।   ২০১৩ সালে চীন ও ভারত সরকার আন্ত-সীমান্ত নদীগুলোর ব্যাপারে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। এর আওতায় নদীর পানিপ্রবাহের ওপর নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে থাকে ভারতকে।

চীন ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী শিয়াবুকুর গতিপ্রবাহ এমন সময় বন্ধ করে দিল যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বৈরিতা ও রেষারেষি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের সেনাঘাঁটিতে পাকিস্তানি জঙ্গিদের অতর্কিত হামলা এবং তাতে ১৯ সৈন্য মারা যাওয়ার পর ভারত সিন্ধুনদের পানিবন্টনের ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি ভারতীয় সামরিক বাহিনি  পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অতর্কিত কমান্ডো হামলা চালিয়ে  জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। এতে কম করেও ৩৮ জঙ্গি ও দুই পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারায়।

ভারতের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তানের বৈরিতা রয়েছে। আর পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে চীনের বিশেষ মিত্রতার সম্পর্ক। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী শিয়াবুকুর গতিপ্রবাহ বন্ধ করার পেছনে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রভাব আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।