ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

‘বড় হয়ে ভাওয়াইয়া ধারণ করতে চাই’ 

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
‘বড় হয়ে ভাওয়াইয়া ধারণ করতে চাই’ 

রংপুর ঘুরে: সাধনা মোহন্ত। জন্মের কিছুদিন পরই বাবা বিনয় মোহন্তকে হারায় শিশুটি।

এরপর থেকে ক্লিনিকের আয়া মায়ের কাছেই বেড়ে উঠছে সে।

শিশুটির ইচ্ছে বড় হয়ে সে উত্তরবঙ্গের লোকজ সংস্কৃতির অংশ ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী হবে। নিজের মাটির গান ভাওয়াইয়াকে নতুন প্রজন্মের কাছে জিইয়ে রাখতে চায় সাধনা মোহন্ত।  

সাধনার ভাষায়, লোকজ ভাওয়াইয়া আমার প্রাণের গান, বাবার গান, মায়ের গান। এই গানকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে চাই। বড় হয়ে ভাওয়াইয়া শিল্পী হয়ে বিশ্বে নিজেকে জানান দিতে চাই।  

সম্প্রতি রংপুর শহরের ইঞ্জিনিয়ারপাড়ায় ভাওয়াইয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গনে’ বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বলে এই শিশুশিল্পী।  

বর্তমানে মায়ের সঙ্গে নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ায় থাকে সে। পড়ছে স্থানীয় আল-মদিনা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় গান শিখছে সাধনা।

বাংলানিউজকে নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তাই তার দায়িত্ব নিয়েছি আমি।  

‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’ রংপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গান শেখায় শিশ‍ুদের। তবে কোনো ফি ছাড়াই। এখানে দোতরা, সারিন্দা, ঢোলক, বাঁশি বাজিয়েই ভাওয়াইয়া শেখানো হয় শিশুদের।  

ভাওয়াইয়া অঙ্গনের সভাপতি প্রকৌশলী খন্দকার মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা শত অবমাননার পরও রক্তের সঙ্গে মিশে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কাজ করছি। একদিন আমি কিংবা আমরা থাকবো না, কিন্তু এই শিশুরা থাকবে, তাদের কাছ থেকে হাজার বছর থেকে যাবে ভাওয়াইয়া গান।
 
‘এখানে সমাজের শিক্ষিত ও সম্পদশালীরা আসেন না। তারা শিল্পকলা কিংবা বাড়িতে শিক্ষক রেখে গানের তালিম দেন ছেলে-মেয়েদের। আমাদের এখানে গরিব ও বঞ্চিত শিশুর‍া আসে। ’

এতোক্ষণ পাশেই বসে শুনছিলেন ভাওয়াইয়া শিল্পী ও গানের শিক্ষক রণজিৎ কুমার রায়। এবার আলাপচারিতায় যোগ দিলেন তিনিও।  

বললেন, বর্তমানে ভাওয়াইয়া অঙ্গনে ১২জন শিশু গান শিখছে। তারা সবাই খুবই গরিব পরিবারের। কারও বাবা নেই, মা নেই। কিন্তু স্বচ্ছল পরিবারের কেউ ভাবের গান ভাওয়াইয়া শিখতে আসে না।

তিনি বলেন, লোকজ শিল্পীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ। ‘দিন আনি দিন খাই’ দশা। এরপরও ভালোবেসে প্রাণের সংগীতটাকে ধরে রাখছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
এমএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।