ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬
হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে... ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চিলমারী বন্দর ঘুরে: ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে.../ যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়/ নারীর মন মোর ছুইরা রয় রে.../ ও কি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে…’

এক সময়ের বিখ্যাত বন্দর চিলমারীতে এসে এভাবেই গানে গানে ব্রহ্মপুত্র তীরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রর বর্ণনা দিয়েছিলেন বাংলা গানের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাস উদ্দিন। গানে গানে তুলে ধরেন তখনকার প্রধান বাহন গরুর গাড়ি ও গাড়িয়ালের কথা।

গানে তুলে ধরেছেন গাড়িয়ালের তরুণী বৌয়ের আকুতিও।
 
কিন্তু সেই জনপদ থাকলেও কালের প্রবাহে হারিয়েছে সেই বাণিজ্য কেন্দ্র। তবুও উত্তর জনপদের খেটে খাওয়া সংগ্রামী মানুষের মুখে মুখে রয়েছে ‘হাঁকাও গাড়ি তুমি চিলমারী বন্দরে’র চিরচেনা অকৃত্রিম গ্রামীণ সুর। ঐতিহ্যবাহী সেই চিলমারীর বন্দর এখন আর নেই!

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সেটি বিলীন হয়ে গেছে। তবে বন্দর সচল থাকাকালে পাটসহ বিভিন্ন শস্য নিয়ে আশ-পাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার গরুর গাড়ি আসতো বন্দরে। এরপর সেখান থেকে জাহাজে পাট যেতো আসাম ও কলকাতায়। আর একজন গাড়িয়াল পণ্য নিয়ে পাঁচদিন-সাতদিনের জন্যে বাড়ি থেকে চলে যেতেন। ঘরে থাকতো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী, যিনি পথ চেয়ে প্রতীক্ষায় তাকিয়ে থাকতেন।

‘কত কাঁদি মুই নিদুয়া পাথারে রে’ দিয়ে আব্বাস উদ্দিন স্ত্রীর মনের বেদনা ফুটিয়ে তুলেছেন,’ বলছিলেন ভাওয়াইয়া শিল্পী পঞ্চানন রায়।

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের এ গীতিকার-সুরকার বলেন, কালের সাক্ষী এই চিলমারী। বন্দর নেই আগের মতো জাহাজ কিংবা গরুর গাড়িও নেই। তবে থেমে নেই এখানকার মানুষ। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাদের বাহনেও।

‘গরুর বদলে এখন ঘোড়া কিংবা মহিষের গাড়ি পাওয়া যায়, সেই ধুলো পথ নেই। পিচঢালা সড়কেই টায়ারের চাকা দিয়ে পণ্য নিয়ে ছুটে চলে চতুষ্পদ এসব জীব। তবে কালে ভদ্রে চর এলাকায় দু’একটা গরুর গাড়ির দেখা যেতে পারে। ’

মহিষের গাড়ি চালক আবদুর রহমান বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরি রাখছি। ধান, পাট, কাঠসহ নানান জাতের ফসল আনা নেওয়া করি।

জানালেন, গরুর থেকে মহিষ শক্তিশালী, এতে বেশি মাল টানা যায়। তাই গরুর থেকে মহিষ কিংবা ঘোড়া দিয়াই গাড়ি চালান তারা।

কুট কুট শব্দে মাল নিয়ে এগিয়ে চলে মহিষ কিংবা গরুর গাড়িগুলো। তবে আবদুর রহমান কিংবা অন্য গাড়োয়ানরা মনের অজান্তেই মাটির সঙ্গে মিশে যান আর গুন গুন করে গাইতে থাকেন- ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে…’

** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৬
এমএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।