ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সুমনের সবুজ ভুবন আশা জাগায় তরুণ প্রাণে

আহ্মেদ মিলন, শ্রীপুর প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১১
সুমনের সবুজ ভুবন আশা জাগায় তরুণ প্রাণে

শ্রীপুর (গাজীপুর): বাংলাদেশ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের এক সময়কার জননন্দিত খেলোয়াড় ইকবাল আহমেদ সুমন এখন বসবাস করছেন কৈশোরে দেখা এক স্বপ্নের জগতে। অসংখ্য পাখির ছন্দময় গান আর কিচিরমিচির শব্দ প্রতিটি ভোরে স্বাগত জানায় তাকে।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাখির ঝাঁক  পড়ন্ত বিকেলে হাট বসায় চকপাড়া গ্রামে। গোধুলির রঙে সেজে সবুজে সবুজময় গ্রামটি যেন উল্লাস করে বাতাসের তালে তালে।

ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হলে আবার পোষা আদরের বিদেশি কুকুর জেনি, জো, কেনি, পেনি হৈচৈ শুরু করে দেয়, কেন তাদের মনিব সুমন এত ঘুমাবে? অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর পরই জোনাকির মাতামাতি, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর হাসনাহেনার গন্ধে মনে হয়, এটা এক অন্য জগত, অন্য ভুবন!

ছোটবেলায় সুমন ভাবতেন, তার একটি পোল্ট্রি ফার্ম থাকবে, ফার্মে থাকবে অসংখ্য মুরগি। সেই সঙ্গে অনেক পশু-পাখি।

আলাদা একটা জগতে হরেক রকম পশুপাখির সঙ্গে তার  গড়ে উঠবে বন্ধুতা। সুমনের সেই স্বপ্নের ভুবন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে! তিনি এখন সেই জগতেই বাসবাস করছেন নিরবে-নিভৃতে!

পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে পাখি-প্রেমিক সুমন একদিন সখের বশে ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসার ছাদে কিছু লেয়ার মুরগি পোষা শুরু করেন। এর মধ্যে শিক্ষাঙ্গনের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া হয়ে যায় তার।

বড়ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে মুরগিগুলোকে রেখে একদিন সুমন পাড়ি জমান দক্ষিণ কোরিয়া। ১০ বছরের প্রবাস জীবন শেষে ২০০৩ সালে দেশে ফিরে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লতাপাতা আর ছায়ায় ঘেরা চকপাড়া গ্রামে ৯ বিঘা জমি কেনেন তিনি। সেখানেই গড়ে তোলেন তার সেই স্বপ্নের জগত। শুরু হয় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু-ছাগল আর বিদেশি কুকুর পালন। তার বাড়িটি একটু একটু করে এক সময় একটি খামার হয়ে যায়।

সুমনের মনে খামার প্রতিষ্ঠার কথা জেগে ওঠে। মাত্র ১ হাজার লেয়ার মুরগি নিয়ে চকপাড়া গ্রামে তিনি সত্যি সত্যি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে তার খামারে  মুরগির সংখ্যা বাড়তে থাকে।

সেই থেকে তার খামারে ৫ বছরে লেয়ার মুরগির সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়াও তিনি হাঁস, কবুতর, গরু-ছাগল, বিদেশি কুকুরসহ কয়েক জাতের পশু-পাখি পালন করছেন শখের বশে।

সুমনের খামারে এখন ১৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ সবের ফাঁকে তিনি লাউ, সীম, বাউকুলসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ করেন নিয়মিত। পুরো পরিবার ঢাকায় বসবাস করলেও এ সবের সঙ্গেই চকপাড়াতেই এখন সুমনের বসবাস!

এলাকাতে সফল খামারি হিসেবে সুমনের এখন বেশ নামডাক। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, মুরগির খামার বিষয়ে তার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তু তার ইচ্ছাই আজ এ আসনে বসিয়েছে। এবিষয়ে পড়াশুনা করতে করতেই তার অভিজ্ঞতার ভা-ার পূর্ণ। এ ছাড়া দেশের বড় বড় খামারগুলোতে রয়েছে নিয়মিত যোগাযোগ ও যাতায়াত।

সুমনের খামারে প্রতিদিন ১০/১১ হাজার ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। সপ্তাহে দু’দিন ডিমগুলো বিক্রির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। খামারের লাভের একটা অংশ তিনি গরিব-দুঃখীদের মঙ্গলে ব্যয় করেন।

ইকবাল আহমেদ সুমন ১৯৯৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আমন্ত্রণে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে হ্যান্ডবল খেলায় কমনওয়েলথ ক্লাব কাপে যোগ দেন। খেলার জন্য তাকে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করতে হয়।

সুমন জানান, তার এই খামার গড়ে তোলার পেছনে বড়ভাই এসএম আহমেদ খোকনের  অবদান সবচেয়ে বেশি। এ জন্য বড় ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি।

ভবিষ্যতে তিনি একটি ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠারও স্বপ্ন দেখছেন এখন।

ইকবাল আহমেদ সুমন বেকারদের উদ্দেশে বলেন, ‘কৃষির যে কোনো ক্ষেত্রে বেকাররা ইচ্ছা করলে আসতে পারেন। পাল্টাতে পারেন, বেকারত্বের অভিশপ্ত জীবন। নিজে স্বাবলম্বী হতে পারেন এবং পরিবার ও দেশকে সমৃদ্ধও করতে পারেন!’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।