ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

হুইলচেয়ারে মহরম আলীর বিশ্বভ্রমণ!

মাহমুদুল হাসান, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১১
হুইলচেয়ারে মহরম আলীর বিশ্বভ্রমণ!

মহরম আলী। বয়স চব্বিশ।

জন্মের পর হঠাৎ দেড় বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত। সঙ্গে দুটি পা এবং এক হাত হারানো।

হুইলচেয়ার ছাড়া নিশ্চল প্রায়। এ অবস্থায় একাই বিশ্বভ্রমণ!

প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে এ দু:সাহসিক অভিযানে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) অভিনন্দন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে শুরু হয় মহরম আলীর এ স্বপ্নযাত্রা। নাম ‘মহরম হুইলস’।
তিনি ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত যাবেন নিজের হুইলচেয়ারে বসে। আকাশ পথ নয়, শুধু বাস, ট্রেন এবং জাহাজে সম্পন্ন হবে এ পুরো ভ্রমণটি।

বিশ্বের সব প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে একটি ‘বিশ্বপ্রতিবন্ধী তহবিল’ গঠনের ধারণাকে সবার সামনে উপস্থাপন করাই এ বিশ্বভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য।

রাশিয়া প্রদত্ত জিপিএস প্রযুক্তির একটি অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে তিনি পাড়ি দিতে চান ৩টি মহাদেশ। এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা। ভ্রমণ করবেন এ তিন মহাদেশের ১৬টি দেশ। সুপরিকল্পিত এ ভ্রমণে সময় ব্যয় হবে ৬ থেকে ৮ মাস।

অনুষ্ঠানে মহরম আলী বলেন, গত বছরের শেষদিকে কানকুনের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল একটি ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু পুনরুদ্ধার তহবিল’ গঠন।

বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যম হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো কানকুনে প্রস্তাবিত তহবিলের তাৎক্ষণিক আপডেট জানানোর জন্য। সংবাদপত্রে তহবিলের খবর পড়ে ভাবলাম যদি বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধীদের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন পুনরুদ্ধার তহবিলের মতই একটি নতুন তহবিল গড়া যায় তাহলে তো মন্দ হয় না!

তার মতে, এ বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবতে থাকলাম। এক বন্ধুর পরামর্শে হুইলচেয়ারে বিশ্বভ্রমণ করে বিশ্বের সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম।

এ তহবিল হতে পারে জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক কিংবা নতুন কোনো সংস্থার। এ তহবিল ধনী দেশগুলো প্রতিবছর নির্দিষ্ট অঙ্কে চাঁদা প্রদান করবে। এতে ধনী ব্যক্তিরা বা যে কেউ যে কোনো সময় অর্থ প্রদান করতে পারবেন।

এ তহবিল থেকে নতুন কোনো নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের মতো গরীব দেশগুলোর সংস্থাগুলোকে অর্থ প্রদান করা হবে।
একাই দীর্ঘভ্রণে বিভিন্ন অসুবিধা মোকাবেলা করবেন কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে মহরম বলেন, আমি জানি এটি করতে গিয়ে আমি নানা অসুবিধায় পড়বো। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস আমি পারবো। এ ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য আমি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলা নিজেই ভ্রমণ করেছি। উল্লেখ্য, এর আগে আমি ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়াও ভ্রমণ করেছি।

এ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভ্যালরি এ টেইলর মহরম আলীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহরম আলীর এ বিশ্বভ্রমণে আমরা শরীরিকভাবে তার সঙ্গে থাকবো না। কিন্তু মানসিকভাবে আমরা সবসময়ই তার সঙ্গে থাকবো।

তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের এ সাহসী অভিযান অন্য সব প্রতিবন্ধীদের উৎসাহ যোগাবে।
এ ভ্রমণের অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে কাজ করছে মস্কোভিত্তিক প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সাইট www.bezgraniz.ru. কো পার্টনার হিসেবে কাজ করছে সিআরপিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

মহরম আলীর এ ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোনো আপডেট জানতে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে Mohoram’s Wheels লিখে সার্চ দিলেই প্রয়োজনীয় সবগুলো লিঙ্ক পাওয়া যাবে।

তবে সবচেয়ে মজার লিঙ্কটি হচ্ছে www.bezgraniz.ru. এ সাইটে যে কেউ দেখতে পাবেন লাইভ ট্রাভেল ম্যাপ। ভ্রমণকালীন সময়ে এ সাইটের মাধ্যমে মহরম এখন পৃথিবীর কোন দেশে, কোন শহরে এমনকি কোন রাস্তায় বা কোন হোটেলের কত নম্বর কক্ষে অবস্থান করছেন তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।