ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

এসওএস শিশুপল্লী: থমকে যাওয়া জীবন যেখানে গতি পায়

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১১
এসওএস শিশুপল্লী: থমকে যাওয়া জীবন যেখানে গতি পায়

ঢাকা: শাহানা সেবা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের ছাত্রী। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সব পথই এখন তার সামনে খোলা।

জীবনের এই গতিময়তা তাকে এনে দিয়েছে এসওএস শিশুপল্লী।

এসওএস এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঠিক এই কথাগুলোই বলছিলেন শাহানা সেবা।
 
জানালেন, তার বয়স যখন ৮ বছর তখন এক গাড়ি দুর্ঘটনায় বাবা ও মাকে হারান। এরপর ঢাকা এসওএস শিশুপল্লীতে হয় তার আশ্রয়। শিশুপল্লীর জীবন স্মরণ করে সেবা বলেন , শিশুপল্লীর অবস্থা অত্যন্ত ভাল, বাড়িঘর খুব সুন্দর । এখানে আমি ধীরেধীরে ভাল গুণ ও জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলেছি । এখন আমি ব্যাংকের বৃত্তি নিয়ে পড়ছি। আমাকে শিশুপল্লী এখনো সহযোগিতা করে।

সেভ আওয়ার সোল নাম নিয়ে গয়ে ওঠা এ শিশুপল্লীতে আশ্রয় পেয়ে শাহানা সেবার মতো জীবনের আলোকিত পথে এগিয়ে চলেছে আরও হাজারো শিশু।

আজ ২৩ জুন আন্তর্জাতিক এসওএস শিশুপল্লী দিবস।

এসওএস শিশুপল্লী অনাথ শিশুদের পরিবারের মতো আদর ভালোবাসা-সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে বড় করে তোলে, এমনটাই বলছিলেন এর ন্যাশনাল ডিরেক্টর গোলাম আহমেদ ইসহাক।

তিনি বলেন, শিশুর বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজন মাতা-পিতার স্নেহ, ভালবাসা, যত্ন, পারিবারিক বন্ধন ও স্থায়ী আবাস। কিন্তু যে সন্তান তার শৈশবেই মা-বাবাকে হারিয়েছে তাদের পারিবারিক আবহে গড়ে উঠার সুযোগ করে দিয়ে চলেছে শিশুপল্লী।  

আর এ কাজে ধর্ম, বর্ণ বা গোষ্ঠী ভেদাভেদ সবকিছুর উর্ধ্বে থাকে এসওএস শিশুপল্লী।

আন্তর্জাতিক এসওএস শিশুপল্লী সংস্থা এক আন্তর্জাতিক বেসরকারি দাতব্য গোষ্ঠী। ১৯৪৯ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক এসওএস শিশু সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন অস্ট্রিয়ার চিকিৎসক ড. হারম্যান মেইনার।

তিনি অষ্ট্রিয়া থেকে কাজটি গোটা বিশ্বে সম্প্রসারিত করেন। তিনি দিয়ে গেছেন অগণিত অনাথ শিশুকে পরিবারের ভালোবাসা ও শিক্ষার আলো। ড. মেইনার মারা যাবার পর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান হেলমুট গুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমানে বিশ্বের ১৩২টি দেশে আর অঞ্চলে ৪৫২টি শিশুপল্লী, ৩৪৮টি যুবপল্লী, ২৬৭টি কিন্ডারগার্টেন, ১৮২টি নানা ধরনের স্কুল, ১২১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র আর ২৫৭টি সামাজিক আদানপ্রদান কেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে এসওএস শিশুপল্লীসহ নানা ধরনের কল্যাণমূলক ব্যবস্থায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০টি অনাথ শিশু জীবনযাপন ও পড়াশুনা করছে।

বাংলাদেশে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও সিলেটে ৬ টি শিশুপল্লী রয়েছে ।

১৯৭২ সালের ১৭মে ঢাকার মিরপুর রোডে শ্যামলীতে দেশের প্রথম এসওএস শিশুপল্লীর কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এ নিয়ে সরকারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয় ১৯৭৩ সালে।

বর্তমানে শিশুপল্লী ছাড়াও দেশে ৫ টি ইয়ুথ ফ্যাসিলিটি সেন্টার বা এসওএস যুবপল্লী, ৪ টি হারম্যান মেইনার স্কুল, ৪ টি  স্যোস্যাল সেন্টার, ৪টি পারিবারিক সেন্টার আছে।

শিশুপল্লীর মডেলটি বিশ্ব্যব্যাপী একরকম। প্রত্যেক শিশুপল্লীতে ১০-১২টি পরিবার থাকে। প্রতিটি পরিবারে ৮-৯জন অনূর্ধ ১৪ বছর বয়সী অনাথ ছেলেমেয়ে আছে।

নিজের সন্তান নেই এমন একাকী বা অবিবাহিতা মহিলা তাদের মা হয়ে পরিবার পরিচালনা করার দায়িত্ব পালন করেন । ১৪ বছর বয়স হলে অনাথ ছেলে শিশুপল্লী ত্যাগ করে যুবপল্লীতে সমষ্টিগত জীবনযাপন শুরু করে ।

এসওএস এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে শিশুপল্লীর অনাথ-ছেলেমেয়ের মধ্যে অধিকাংশই বড় হয়ে সমাজে সম্মানজনক স্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শিশুপল্লী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ বলেন, এসওএস এবং আমাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবারহারা অনাথ-ছেলেমেয়েরা আবার একটি পরিবার পেয়েছে। সরকারের বলিষ্ঠ সমর্থনে এবং এর কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হচ্ছে।
 
এসওএস শিশুপল্লীর ন্যাশনাল ডিরেক্টর গোলাম আহমেদ ইসহাক আরও বলেন, একজন শিশু অনাথ হলেই এসওএস শিশুপল্লীতে আশ্রয়, লেখাপড়া, খাওয়া ও পারিবারিক বন্ধনে থেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পাবে।

মা, ভাই-বোন, বাসস্থান ও শিশুপল্লী এ চারটি নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে চলছে বিশ্বব্যাপী এসওএস শিশুপল্লীর শাখাগুলো।

তিনি বলেন, এখানে ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণ, দায়-দায়িত্ব সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের আলোকে প্রাত্যহিক জীবন যাপনে সকল সুখ-দুঃখ একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে।

শিল্পপতি ও বিত্তশালীরা সহায়তার হাত বাড়ালে এসওএস শিশুপল্লী কার্যক্রম আরো গতিশীল করা সম্ভব হবে বলে জানালেন ঢাকার এসওএস শিশু পল্লীর সহকারী পরিচালক হোসাইন আসিফ খান চৌধুরী ।

হিসাব কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, এককালীন ডোনেশন বা সম্পত্তি উইল প্রদানের মাধ্যমে ছাড়াও একজন শিশুর বার্ষিক স্পন্সর বাবদ মাসিক ১০০০ টাকা করে বার্ষিক ১২০০০ টাকা। শিশু সহায়তার জন্য মাসিক ৫০০ টাকা করে বার্ষিক ৬০০০ টাকা এবং শিশুপল্লীর বন্ধু হিসাবে মাসিক ২০০ টাকা করে বার্ষিক ২৪০০ টাকা প্রদান করে যে কেউই এ উদ্যোগে সহযোগিতা করতে পারবেন।  

বাংলাদেশ সময় ১৬৫০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।