ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কাবুলি কাণ্ড: আনলাকি ‘৩৯’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১১
কাবুলি কাণ্ড: আনলাকি ‘৩৯’

এতদিন ১৩ সংখ্যাটিকে আমরা ‘অপয়া ১৩’, ‘অশুভ ১৩’ বা সরাসরি আনলাকি থারটিন বলে অবজ্ঞা করে আসলেও এবার ‘৩৯’ সংখ্যাটি এ অপছন্দনীয় তকমা ললাটে ধারণ করতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। দুনিয়ার আর কোথাও না হলেও অন্তত সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় খুদাদাদ আফগানিস্থান অর্থাৎ ঈশ্বরদত্ত আফগানিস্থানে অনেকের কাছেই আজকাল  চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে- ‘থারটি নাইন’ সংখ্যাটি।

মূলত, তের’র চেয়ে এটিই এখন তাদের কাছে বে-শক আনলাকি সংখ্যা হিসেবে মনে হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থার খবরে জানা গেছে- রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত আফগানিস্থানের কাবুলে এখন আনলাকি ‘৩৯’ এর ফাঁদে পরে বিশাল অংকের ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গাড়ি বিক্রেতারা। এরই মধ্যে কারো কারো ব্যবসায় লালবাতি জ্বলার উপক্রম! কাবুলে মোটর গাড়ির নাম্বারের সিরিয়ালের প্রথম দু’টি কমন ডিজিট লাকি না হলেও আনলাকি বলে অন্তত চিহ্নিত ছিল না। কিন্তু সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটিই এখন তালেবান  আর মার্কিন সেনার নৈমিত্যিক সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত কাবুলের গাড়ির ড্রাইভার, ক্রেতা এমনকি বিক্রেতাদের কাছেও চরম আনলাকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ঘটনাটি কাবুলে এতই আলোচিত যে, ‘৩৯’ নম্বর লেখা প্লেট লাগানো গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতেও অনেকে বিব্রত বোধ করছেন। এমনকি ছোট শিশুরা পর্যন্ত বলছে-‘ওই দেখ ৩৯ যাচ্ছে, ওই গাড়িটা আনলাকি। ’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী  ইউনাইটেড ন্যাশন্স এর একটি প্রজেক্টে কর্মরত মোহাম্মদ আশরাফের ভাষ্য ঠিক এমনি। তিনি বলেন, ‘এজন্য এখন আমি ও আমার পরিবারের কেউই ওই নম্বর লাগানো মোটরগাড়িতে গাড়িতে চড়ি না। ’

কাবুলের একটি গাড়ির শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাওয়েদ এর কাছে শোনা  গেল আনলাকি ৩৯ কে ঘিরে আরও করুন অভিজ্ঞতার কথা। ১০ হাজার ডলারে কেনা টয়োটা করোলা গাড়িটি তিনি শুধুমাত্র ‘৩৯’ নম্বর এর কারণে এখনও বিক্রি করতে পারেননি।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন- এটি যদি আমি মাত্র ৬০০ ডলারেও বিক্রি করতে চাই, তবুও এখন আর কেউ তা কিনতে ইচ্ছুক নয়।
বুঝুন ৩৯ এর ঠেলা!

নিরীহ ‘৩৯’ নম্বরটি হঠাৎ কিভাবে এত দ্রুত কাবুলে  ‘আনলাকি’ হয়ে পড়লো এ প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব কেউ দিতে না পারছে না। কিন্তু বিষয়টি মানছে সবাই। তবে শহরের খোঁজ-খবর রাখনেওয়ালা মানুষজন খোঁজ লাগিয়ে যা জেনেছে তা হলো এই-  কাবুল ও ইরানের সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাতের এক পতিতা সরদারের ঝকমারি টাইপের রেইনবো ডেকোরেটেড একটি বাহারি গাড়ি আছে যার নম্বর ৩৯।

পতিতা সর্দারের রঙচঙে গাড়িটা এতই ফ্যাশন দুরস্ত যে আশপাশের ছেলেবুড়ো অনেকেই নিজেদের প্রিয় গাড়িটির খোল-নলচে পাল্টে ওই গাড়ির ক্লোন করতে উঠেপড়ে লেগে পড়েছে।

অপরদিকে, কাবুলে আমদানি করা নতুন কিছু গাড়িকেও ফ্যাশনেবল করে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য পতিতা সরদারের গাড়ির অনুকরনে রেইনবো ডেকোরেটেড করা হয়।

রক্ষণশীল কাবুলিরা ৩৯-কে আনলাকি করার সমুদয় দোষ চাপাচ্ছেন ওই পতিতা সরদারের ঘাড়ে। তাই- খারাপ কোনও ঘটনা না ঘটিয়েও ওই গাড়ি এবং নাম্বারটি আনলাকি।
 
আশপাশের লোকজনও সরদার সাহেবকে এখন তার গাড়িটির নম্বর দিয়েই সম্বোধন করে ‘৩৯’ বলে।

এদিকে, রাজধানী কাবুল ও হেরাত এলাকার ভাষা একই রকম হওয়ায় কাবুলে মুখে মুখে  খুব দ্রুত ৩৯ নম্বরটি ছড়িয়ে পড়ে। এবং কাবুলবাসীর  ধারণা- যেহেতে ‘৩৯’ নম্বরের সেই ঝিকঝাক ঝাকানাকা গাড়িটি পতিতা সরদারের, সুতরাং ৩৯ নম্বরটি অবশ্যই আনলাকি। কারণ, যৌনকর্মীর পয়সায় চলা পতিতা সরদারের গাড়ির নম্বরের সঙ্গে নিজের গাড়ির নম্বরের মিল থাকাটা রুশ তাড়ানো আর বুশ ওবামার সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে ঝুঝতে থাকা আফগানিদের জন্য অস্বস্তিকরই বটে।

তবে, আনলাকি ‘৩৯’ বিষয়ে কাবুলের গাড়ি ব্যবসায়ী ইউনিয়নের প্রধান নাজিবুল্লাহ আমিরী সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়েছেন দুর্নীতীবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘাড়ে। তার মতে- এটি সম্পূর্ণ পুলিশের কারসাজি। যে সংখ্যাটি নিয়ে এত হৈচৈ সেই ৩৯ মূলতঃ গাড়ির পেছনের নম্বর প্লেটে লাগানো ৫ডিজিট এর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের অংশ। এটি ওই নম্বর সিরিজের  প্রথম দু’টি ডিজিট মাত্র। আগে এটি ছিল ৩৮। পরে কাবুল পুলিশ  ৩৮দিয়ে শুরু প্রথম দুই ডিজিট এর এই সিরিজটিকে ৩৯ এ পরিবর্তিত করে।

যার ফলে এখন গাড়ির পেছনের নম্বর প্লেটে নতুন রেজিস্ট্রেশন নম্বর এর প্রথম দু’টি নম্বর ৩৮ এর পরিবর্তে ৩৯ লিখতে হচ্ছে যা মিলে যাচ্ছে পতিতা সরদারের গাড়ির নম্বরের সঙ্গে।

নাজিবুল্লাহ সাংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- ‘এ সুযোগে কাবুলের পুলিশ ট্রাফিক বিভাগ ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন নম্বর এর জন্য ২০০ ডলার এবং নম্বর পরিবর্তন করার জন্য নিচ্ছে ৫০০ ডলার। এটা নতুন গাড়ি ক্রেতার নিকট থেকে ট্রাফিক পুলিশের ভিন্ন পন্থায় টু-পাইস কামানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
’  
অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ পুলিশের মতই কাবুল ট্রাফিক পুলিশের উপ-প্রধান  নির্বাহী আকবর খান ব্যবসায়ী ইউনিয়নের প্রধান নাজিবুল্লাহর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন- এসব নিছকই ইরান সীমান্তবর্তী এলাকা হেরাত থেকে আমদানী করা গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।

তবে কাবুলের গাড়ি ব্যবসায় আনলাকি ‘৩৯’ এর বিরূপ প্রভাব ফেলার কথা তিনি স্বীকার করেছেন!

খান সাহেব আরও বলছেন-  ৩৯ আসার আগে আমরা প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্লেট ইস্যু করলেও এখন করছি দিনে মাত্র এক বা দু’টি।
    
আসাদুল হক খোকন, বাংলানিউজ পাঠক

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ২১ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।