ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ছোটরাও পৃথিবী বদলে দিতে পারে

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১১
ছোটরাও পৃথিবী বদলে দিতে পারে

পৃথিবীকে শুধু বড়রাই বদলে দিতে পারে এমন ধারণা ভুল। অনেক সময় ছোটদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বড় হয়ে ওঠে।

দেখা যায় সবচে বড় পরিবর্তনটা তারাই করে দিচ্ছে। এমনই দুজন হচ্ছেন থানডিউই চামা এবং এনকোসি জনসন। এই দুই আফ্রিকান কিশোরের বিস্ময়কর কর্মকান্ডে বড়রাও আজ নির্বাক হয়ে যায়।

প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দেয় ডাচ একটি সংগঠন। যেসব শিশু বিশ্বের শিশুদের অধিকার রক্ষায় নিজের অবদান রাখতে পারে তাদের উৎসাহিত করাই এর মূল লক্ষ্য । ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছরই এই পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে। তাদের অবদানের জন্য এনকোসি জনসন ২০০৫ এবং থানডিউই চামা ২০০৭ সালে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি পায়।

এই দুজনকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো কিছুটা অন্যরকম ছিল তাদের প্রচেষ্টা। এসো, তাদের গল্প শোনা যাক।

এনকোসি জনসন
এনকোসি পৃথিবীর সবচে আলোচিত এইচআইভি পজিটিভ শিশু। তার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে, ১৯৮৯ সালে। তার বাবা কে সে নিজেও জানে না। তার জন্মের পর যখন এনকোসির মা জানতে পারেন তার সন্তান এইচআইভি পজিটিভ, তখন তাকে ফেলে রেখে চলে যান। তাই মা শব্দের অর্থও জানে না এনকোসি। পরে গেইল জনসন নামে একজন ভদ্রলোক দত্তক পুত্র হিসেবে তাকে ঘরে তুলে নেন। সেখানেই বেড়ে ওঠে এনকোসি।

তবে সে মানুষের নজরে পড়ে ১৯৯৭ সালে, যখন তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হঠাৎ করেই বহিষ্কার করা হয়। কারণ হিসেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিল : ‘এনকোসি এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার কারণে অন্য শিশুরা ক্লাসে আসতে ভয় পায়। ’ শুরু হয়ে যায় হৈচৈ। আফ্রিকা পেরিয়ে ঘটনাটি পৌঁছে যায় বিশ্বের মানুষের মাঝেও। রাজনৈকিতভাবেও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়াল। এরই ফল হিসেবে পরে আফ্রিকান সরকার বাধ্য হয়  ‘যে কোনো রোগীকে স্কুলে ভর্তি করা যাবে’ এমন আইন পাস করতে।  

কিন্তু এনকোসি বিশ্ববাসীর নজর বিশেষভাবে কাড়ে ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক এইডস সম্মেলনে। ওখানে সে এক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ভাষণ দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের মনে জায়গা করে নেয়।

ওই সম্মেলনে এনকোসি বলেছিল, ‘আমাদেরকে তোমরা মূল্য দাও। আমাদের তোমরা গ্রহণ করো। আমরা সবাই মানুষ। আমরা তোমাদের মতই সাধারণ। আমাদের হাত আছে, পা আছে। আমরাও হাঁটতে পারি, কথা বলতে পারি। তোমাদের যা যা প্রয়োজন আমাদের সেই সবই প্রয়োজন। তোমরা যেমন ভালোবাসা চাও, আমরাও তো ভালোবাসা চাই। আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তোমরা ভয় পেয়ো না। আমি-তুমি একদম এক। ’

এনকোসির কথাগুলো শুনে নেলসন মেন্ডেলা সেদিন কেঁদে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এনকোসি হচ্ছে আইকন। এমন আইকন যে কিনা জীবনের জন্য যুদ্ধ করে। ’ আর এই ভাষণই ২০০৫ সালে এনকোসিকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার এনে দেয়।

থানডিউই চামা
দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যামবিয়ান প্রদেশের ১৬ বছরের মেয়ে থানডিউই চামা। চামা ২০০৭ সালে সারা পৃথিবীকে বিস্মিত করে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়ে বসে। ২৮ জনকে পেছনে ফেলে চামা এই পুরস্কার জিতে নেয়। সম্মানজনক এই পুরস্কারটি তার হাতে তুলে দেয় আরেক নোবেল বিজয়ী বিট্টি উইলিয়াম। কী এমন করেছিল চামা?

সময়টা ১৯৯৯। তখন চামা মাত্র আট বছরের মেয়ে। প্রতিদিন স্কুলে যায়। খেলাধুলা করেই সময় কাটে। একদিন চামা স্কুলে গিয়ে শুনতে পায় তাদের স্কুল বন্ধ। কারণ হলো, শিক্ষক সংকট। ঘটনাটি খুব আঘাত দেয় তাকে। তবে এজন্য ঘরে বসে থাকবে, এমন মেয়ে সে নয়। সে তার বন্ধুদের উৎসাহিত করে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু আশপাশে আর কোনো স্কুল নেই। তাহলে কী করা যায়? চামা তার বন্ধুদের বোঝায় যে, তাদের পড়াশোনা করতে হবে। এজন্য যত দূরেই হোক, স্কুলে যেতে হবে। এ ব্যাপারে বড়রা বাধা দিলেও সে ঠিকই তার বন্ধুদের রাজি করাতে পারলো। এবং সংখ্যাটিও কম নয়, ৬০ জন! একদিন এই ৬০ জনকে নিয়ে সে হাঁটা শুরু করলো। উদ্দেশ্য, তারা হাঁটতে হাঁটতে যে স্কুল পাবে সেই স্কুলেই ভর্তির জন্য আবেদন করবে।

অনেকটুকু পথ হেঁটে পেয়ে গেল জ্যাক সিক্যাপ স্কুল। সব শিশুর জন্য শিক্ষাকে নিশ্চিত করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করলো। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিনা বাধায় সবাইকে ভর্তি করিয়ে নিলো। আর এতো সুন্দর কাজটি কি সবার নজরে না পড়ে পারে? চামা কিন্তু থেমে থাকেনি। চামা পরে চার্চে গিয়ে তাদের স্কুল বন্ধ ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানায়। এবং সব শিশুকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করে।

শুধু কি তাই, চামা এইডস নিয়েও সবাইকে সচেতনতা গড়ে তোলার অনুরোধ করে। চামা গুরুগম্ভীরভাবে এই বিষয়ে বলে, ‘সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। আমার স্কুলেই আমি এই অধিকারগুলো নিয়ে পড়েছি। তাই আমি যখন এই যুদ্ধে নামছিলাম আমি জানতাম আমাকে কী করতে হবে। কারণ, যদি আমাদের সুযোগ দেওয়া হয় আমরা সব মন্দকে বদলে ফেলতে পারি। ’  

উৎস: লিস্টভার্স ওয়েবসাইট

বাংলাদেশ সময় ১৮৪৫, জুন ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।