ঢাকা, রবিবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ মে ২০২৪, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

হঠাৎ আবিষ্কার হয়েছিল যেসব জিনিস

আতিফ আতাউর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
হঠাৎ আবিষ্কার হয়েছিল যেসব জিনিস

দৈনন্দিন জীবনে আমরা কত কী না ব্যবহার করি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কত রকম জিনিস আমরা ব্যবহার করি।

কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি কী করে হলো এসব জিনিসের আবিষ্কার। পৃথিবীতে অনেক জিনিস আছে যেগুলো অনেক চিন্তা ভাবনা করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপর আবিষ্কৃত হয়েছে। আবার এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো নেহাত হঠাৎ করেই আবিষ্কার হয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডিসকভারি’। বাংলায় আকস্মিক আবিষ্কার। তেমনি কিছু আকস্মিক আবিষ্কারের গল্প


টুথপেস্ট
সকালবেলা ব্রাশ হাতে নিয়ে টুথপেস্ট টিউবের পেট টিপে যদি পেস্ট না পাওয়া যায় তখন মেজাজটা বিগড়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু কী করে এই টুথপেস্ট আমাদের ঘরে এলো। টুথপেস্ট আবিষ্কারের হাজার হাজার বছর আগে চীন, মিশর ও ভারতে প্রথম দাঁত মাজা ও সুস্থ থাকার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এসময় মানুষ গাছের বাকল, লবণ ও ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে এক ধরনের মিশ্রণ তৈরি করত। এরপর পারস্যের এক ব্যক্তি জিরইয়াব নতুন এক ধরনের মাজন তৈরি করেন। এটা ছিল পরিশোধিত ও সুগন্ধযুক্ত। তারপর নানা হাত ঘুরে আজকের মাজন ও পেস্ট চলে আসে আমাদের ঘরে।



ব্রাশ
সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার জন্য আমরা যে আধুনিক ঝকঝকে রং বেরংয়ের ব্রাশ ব্যবহার করি তার আবিষ্কারের গল্পটাও বেশ মজার। ১৭৭০ সালে দুষ্কর্মের অভিযোগে ইংল্যান্ডের উইলিয়াম অ্যাডিস নামের এক ভদ্রলোককে জেলে যেতে হয়। সেসময় জেলের ভেতর মোটা কাপড় দিয়ে দাঁত মাজতে হতো। ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগত না তার। তিনি চিন্তা ভাবনা করে বের করেন চমৎকার একটি আইডিয়া। খাবার শেষে পড়ে থাকা একটি হাড়ের এক দিকে বেশ কিছু ফুটো করে জেলের সেপাইদের কাছ থেকে চেয়ে নেন ঘোড়ার লেজের কিছু চুল। তারপর কায়দা করে ফুটো গলিয়ে চুলগুলো বেঁধে দিয়ে তৈরি করেন ব্রাশ। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে আরো সুন্দর করে বানালেন ব্রাশ। খুলে বসেন মস্ত একটি কারখানা। এরপরই আধুনিক ব্রাশের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া।


কলম কাহিনী
কলম ছাড়া কি একদিনও আমাদের চলে। এখন হয়ত মোবাইল, ল্যাপ্টপ কিংবা কিংবা কম্পিউটারে কলম ছাড়া অনেক কিছু লিখে রাখা যায়। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষেত্রে কলমের কোনো বিকল্প নেই। প্রথম কলম আবিষ্কারের পেটেন্ট নেন রোমানিয়ার পেত্রাশ পোনারু। সেটা ১৮২৭ সালের কথা। এসময় পোনারুকে প্রচুর নোট নিতে হতো। তাই সহজে এবং দ্রুত কোনো কিছু লেখার তাড়না থেকেই পোনারু আবিষ্কার করেন ফাউন্টেন পেন। আর আজকে আমরা যে বলপেন ব্যবহার করি তার আবিষ্কারের গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ। জন লাউড নামের একজন মার্কিনি তার চামড়ার ব্যবসার জন্য চামড়ার ওপর লেখার বলপেন আবিষ্কার করেন। কিন্তু এটা দিয়ে চামড়ায় লেখা গেলেও কাগজের ওপর লেখা যেত না। এর প্রায় ৫০ বছর পর হাঙ্গেরির একজন সাংবাদিক তরল কালির পরিবর্তে কলমে ছাপাখানার শুকনো কালি ভরে দেন। তারপর কলমের নিবের মাথায় বসিয়ে দিলেন ছোট্ট একটি ঘুরন্ত বল। যাতে কালির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ব্যস, বিশ্ব পেয়ে গেল সহজে লেখার জন্য আধুনিক বলপয়েন্ট পেন।



পেন্সিল
পেন্সিলের ব্যবহার শুরু হয় ১৫৬৫ সালের পর থেকে—যখন এর আবিষ্কার হলো। ধারণা করা হয় ইংল্যান্ডের বরোডেলে প্রচুর পরিমাণ গ্রাফাইট আবিষ্কৃত হয়। এখানকার মেষ পালকেরা একদিন দেখেন এই গ্রাফাইট দিয়ে ভেড়ার গায়ে দাগ দিলে তা সহজে উঠে যাচ্ছে না। এরপর থেকে আস্তে আস্তে গ্রাফাইটের ব্যবহার শুরু। কিন্তু বারবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এটি কাঠের সঙ্গে বেধে ব্যবহার করা হতো। তারপর বিবর্তিত হয়ে আজকের পেন্সিলের রূপ পেয়েছে।


সেফটি পিন

আমেরিকার ওয়াল্টার হান্ট সেফটি পিনের জনক। কিন্তু নেহাত ধার পরিশোধ করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন আজকের বহুল ব্যবহৃত সেফটি পিন। তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ ডলার ধার নিয়েছিলেন। সেই ধার পরিশোধ করার জন্য কিছু একটা আবিষ্কারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এ সময় একটি পিতলের তার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এদিক সেদিক করে আজকের সেফটি পিনের আকারে রূপ দিলেন। ১৮৪৯ সালের এপ্রিল মাসে সেফটি পিনের পেটেন্ট ৪০০ ডলারে বিক্রি করে তারপরই বন্ধুর ধার শোধ করেছিলেন হান্ট।


ভেলক্রো
নামটা একটু অচেনা লাগলেও ভেলক্রোর সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। আমাদের জুতা বা ব্যাগ পরার সময় কাপড়ের একটি অংশ আরেকটি অংশের ওপর রেখে একটু চাপ দিলেই লেগে যায়। আবার একটু টান দিলেই পচ শব্দ করে খুলে যায়। এটার নামই ভেলক্রো। এর আবিষ্কারক সুইজারল্যান্ডের একজন প্রকৌশলী জর্জ ডে মেস্ত্রাল। তিনি একবার তার পোষা কুকুর নিয়ে আল্পস পাহাড়ের কাছে এক জঙ্গলে বেড়াতে যান। ফিরে এসে লক্ষ্য করেন তার জামা ও কুকুরের গায়ে প্রচুর বারডক গাছের বীজ লেগে আছে। সেগুলো সরাতে গিয়ে তিনি বীজগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখেন তাতে হাজার হাজার হুক জাতীয় পদার্থ লেগে আছে। যা সহজেই কাপড়ে আটকে যায়। এরপর সিন্থেটিক কাপড় দিয়ে জর্জ বানিয়ে ফেললেন জিনিসপত্র খোলা-বন্ধের এক চমৎকার উপায়—ভেলক্রো।



কফি
কফি আবিষ্কারের গল্পটা আরো চমকপ্রদ। ইথিওপিয়ার কালদি নামের এক মেষ পালক। ছাগল চড়াতে গিয়ে একদিন লক্ষ্য করেন অন্য দিনের তুলনায় তার ছাগলগুলো রীতিমতো উত্তেজিত, বলা যায় দাপাদাপি করছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কালদি এক রকম বুনো ফল খুঁজে পান। যেটা খেয়ে ছাগলের এই অবস্থা। তারপর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এই বুনো ফলের কথা। সেই ফলই আজকের কফি বিন।

তবে এর আরেকজন আবিষ্কর্তা মনে করা হয় ইয়েমেনের শেখ ওমর নামের নির্বাসিত এক ভদ্রলোককে। বনের মধ্যে ক্ষুধায় যখন তার মরমর অবস্থা তখন তিনি এই বুনো ফল চোখে দেখেন এবং খেয়ে ফেলেন। তারপর তো তিনি রীতিমতো ফিট।


চুইংগাম
চুইংগামের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নেই—এমন দাবি খুব কম মানুষই করতে পারবে। চলতি পথে, খেলার মাঠে চুইংগাম আমাদের পরিচিত সঙ্গী। এর আবিষ্কারক আমেরিকার টমাস অ্যাডামস। সাপোডিলা গাছের আঠা জাতীয় নির্যাস জমাট করে রাবার বানানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর কিছুই যখন দাঁড় করাতে পারছিলেন না তখন অন্যমনস্ক হয়ে সেটা মুখে পুরে ফেলেন। তারপর দেখলেন আরে এ তো মন্দ লাগছে না। আবার ফুরুচ্ছেও না সহজে। এরপর তাতে নানা সুস্বাদু উপকরণ মিশিয়ে চুইংগামের এক বিশাল কারখানাই খুলে বসেন ভদ্রলোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
এএফএ/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।