ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

আমার স্কুল

উদয়ন বিদ্যালয়: উদীয়মান প্রজন্মের ধারক

শাহরিনা রহমান, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, উদয়ন বিদ্যালয় | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১১
উদয়ন বিদ্যালয়: উদীয়মান প্রজন্মের ধারক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জগন্নাথ হল পেরিয়ে চোখ আটকে যায় কীর্তিমান সব মনীষীর স্থির মূর্তিতে। তাঁদের মাঝ দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলার স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা শহীদগণ, আর সবার শীর্ষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির হাতে বাংলাদেশের পতাকা।

সেই পতাকার রক্তিম উদীয়মান সূর্যকে ধারণ করে নিয়েছে উদয়ন বিদ্যালয়। এই রক্তিম উদীয়মান সূর্য ইঙ্গিত দিচ্ছে সম্ভাবনাময় মেধাবী এক প্রজন্মের, যাদের উন্মেষ ঘটেছে উদয়ন বিদ্যালয় থেকে।

ফিরে দেখা:
উদয়ন বিদ্যালয়ের প্রকৃত নাম ছিল ঢাকা ইংলিশ প্রিপারেটরী স্কুল। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পতœী মিসেস হেজ বার্ণওয়েল দুটি শেড নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের জন্য একটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখন এটি ঢাকার উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয় এবং স্বাধীনতার পর এটি পরিচিত হয় উদয়ন বিদ্যালয় নামে। ১৯৭৬ সালে এটি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন পায়। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সকলের সহায়তায়, প্রখ্যাত স্থপতি সামসুল ওয়ারেসের নকশায় গড়ে ওঠে পাঁচতলা বিশিষ্ট নয়নাভিরাম নতুন ভবন।

উদ্দেশ্য:
প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানো। শিক্ষার্থীদের শৈশব থেকেই শেখানো হয় সামাজিক মূল্যবোধের প্রায়োগিক দিক, শেখানো হয় সামাজিকতা।

ক্লাসের ফাঁকে:
উদয়ন বিদ্যালয়ে রয়েছে সুবিশাল এবং সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিটির বৈশিষ্ট্য হল- এখানে কেজি থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য বই মজুদ আছে। পাঠ্যবই ছাড়াও আছে সাহিত্য নির্ভর প্রচুর বই। ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি গিয়ে পড়াশুনা করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের যুক্তিমনস্ক করে তুলতে উদয়ন বিদ্যালয়ের বিতর্ক ক্লাব সক্রিয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বিতর্ক চর্চা করে থাকে। সেই সাথে আন্তঃ ক্লাস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। যেমন, জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিশু একাডেমী বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উদয়ন বিদ্যালয় সাফল্য অর্জন করছে।

উদয়ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই সংস্কৃতি চর্চাতেও। এখানে রয়েছে উদয়ন সাংস্কৃতিক সংসদ।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে উদয়ন বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন খেলার মাঠ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও উদয়ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই খেলাধুলায়। বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে একটি করে "খেলা" ক্লাসে শিক্ষার্থীদের স্বল্প পরিসরে শরীরচর্চা ও কুচকাওয়াজ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।

উদয়নের শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের ভাণ্ডার অফুরন্ত।   বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জাতীয় গ্রন্থাগার, জয়নুল-কামরুল জাতীয় শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, মিতসুবিশি শিশু চিত্রাংকনসহ সম্মিলিত মেধা তালিকায় রয়েছে উদয়ন বিদ্যালয়ের স্ব-গর্ব উপস্থিতি। প্রতিবছর প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা, জয়নুল বৃত্তি পরীক্ষা, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় উদয়ন বিদ্যালয় লাভ করে যাচ্ছে শতভাগ পাস এবং শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের গৌরব।

শিক্ষার্থীকে জ্ঞানে বড় করে শুধুমাত্র একজন সফল মানুষ করে তোলা নয়, তাকে একজন মহৎ মানুষ করে গড়ে তোলাও উদয়ন বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। উদয়ন বিদ্যালয় চায় তার প্রাঙ্গনে গড়ে উঠুক একঝাঁক মেধাবী, মননশীল, মহৎ ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম; যে প্রজন্ম শুধু উদয়ন বিদ্যালয়কেই গর্বিত করবে না; গর্বিত করবে দেশকেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬, জুন ১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।