ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র

একনজরে একাত্তরের বাংলাদেশ

জুলফিকার আলী কানন, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১১
একনজরে একাত্তরের বাংলাদেশ

মেহেরপুর ঐতিহাসিক মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকেন্দ্রে এখন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। নির্মাণকাজ এখনো খানিক বাকি থাকলেও সেখানে দাঁড়ালেই দেখা যায় একাত্তরের বাংলাদেশকে।



মুক্তিকামী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শপথ গ্রহণ, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাসমৃদ্ধ তথ্য এবং নিদর্শন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প  হাতে নেয়। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র নির্মাণ। মানচিত্রটিকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া দেখানো হয়েছে যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের চারটি পথ দিয়ে শরণার্থী গমন, ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, আ স ম আবদুর রবের পতাকা উত্তোলন, শাজাহান সিরাজের ইশতেহার পাঠ, শালদাহ নদীতে যুদ্ধ, কাদেরিয়া বাহিনীর জাহাজ দখল ও যুদ্ধ, শুভপুর ব্রিজে সম্মুখযুদ্ধ, কামালপুর ও কুষ্টিয়ার মিরপুরের যুদ্ধ, চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস, পাহাড়তলী ও রাজশাহীর হত্যাযজ্ঞ, জাতীয় শহীদ মিনার ধ্বংস, সচিবালয়ে আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ, জাতীয় প্রেসক্লাব ধ্বংস, তৎকালীন ইপিআর পিলখানা আক্রমণ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও বুদ্ধিজীবী হত্যার চিত্র।

এছাড়া রয়েছে জাদুঘর, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গ্রন্থসমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, সেমিনার কক্ষ, মিলনায়তন, স্মৃতিকেন্দ্রের অফিস ভবন, গ্রন্থভা-ার ও বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ৪০টি ভাস্কর্য নির্মাণ, জাতীয় নেতৃবৃন্দের তৈলচিত্র, মিলনায়তন ভবনের গায়ে ম্যুরালচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঋতুকে দৃশ্যমান করে তোলা, ফোয়ারা নির্মাণ, স্বাধীন বাংলার পতাকার প্রতিকৃতি, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল খোদাই করে লিপিবদ্ধ করা, মুজিবনগর সরকারের প্রতীক নির্মাণ এবং ফলকে মুজিবনগর সরকারের প্রচারপত্র নির্মাণ সংযুক্ত করা।

মানচিত্রের দক্ষিণপাশ ঘেঁষে রয়েছে এন্টি ফাংগাস টাইলস দিয়ে প্রতীকী বঙ্গোপসাগর। মানচিত্রের বাইরে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালরাত্রি, মুক্তিকামী মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পাকবাহিনীর নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, ১২ আনসার কর্তৃক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং সেক্টর বণ্টনসহ আরোরা, নিয়াজী ও এ কে খন্দকারের উপস্থিতিতে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভাস্কর্য।

রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা দর্শনার্থী আবেদা সুলতানা এবং মহির উদ্দীন জানান, প্রতি বছরই আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দেখতে আসি। ইতিহাসের পাতা থেকে যা শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে মাত্র একদিনে শিক্ষার্থীরা স্মৃতিকেন্দ্র থেকে তা শিখতে পারবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে পর্যটকরা আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ থেকে জানতে পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

একই কথা জানালেন যশোর থেকে আসা প্রকৌশলী আবদুর রহমান ও সুলতান কামাল। তারা আরও বলেন, শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ নয়, সে সময়কার পাকবাহিনী ও আলবদর রাজাকারদের নির্মম নির্যাতন দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা তাদেরকে ঘৃণা করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মানচিত্র নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার জেবিবি ২০০৫ সালে কাজ শুরু করলেও মাঝপথে নকশার কিছুটা পরিবর্তন এবং সংযোজন-বিয়োজন করা হয়। তাছাড়া সরকার পরিবর্তনের কারণে নির্মাণকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এখনও সব কাজ শেষ হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও কিছু নকশার পরিবর্তন আনা হয়েছে।  

মেহেরপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ খাদেম বাংলানিউজকে জানান, ২০০৯ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংযোজন-বিয়োজনের কারণে সম্পন্ন হয়নি। এ বছরের জুন মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০২৫, এপ্রিল ৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।