ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

৩০ টাকায় প্লেনের টিকিট!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪
৩০ টাকায় প্লেনের টিকিট! ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিমানসহ পাখা গুটিয়ে অলস পড়ে থাকা বিমান নিয়ে নতুন করে চালু হয়েছে বিমান বাহিনী জাদুঘর।    
 
রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিমে আইডিবি ভবনের বিপরীতে জাদুঘরটিতে মোট ১৯টি বিমান, দু’টি হেলিকপ্টার এবং বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত তিনটি রাডার দর্শকদের দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।


 
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হান্টার বিমানসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে বিমান বাহিনীর এই জাদুঘরের উদ্বোধন হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর।
 
বিমান বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য, এর সাফল্য ও ক্রমবিকাশকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ জাদুঘরের গোড়াপত্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
 
এবার ঈদ এবং দুর্গাপূজায় রাজধানীবাসীর বিনোদনের অন্যতম খোরাক যুগিয়েছে বিমানবাহিনী জাদুঘর।
 
জাদুঘর উদ্বোধন করেন বিমান বাহিনীপ্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারী।
 
নির্মাণকাজের কিছু অংশ এখনও বাকি থাকলেও প্রতিদিনই দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে এই জাদুঘরে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার দর্শনার্থী আসছেন এসব বিমান ও প্রদর্শণ সামগ্রী দেখতে।
 
বিমানের টিকিট ৩০ টাকা
দেশের প্রথম পরিবহন বিমান ‘বলাকা’ও রাখা হয়েছে প্রদর্শনের জন্য। এতে ৩০ টাকা দিয়ে ওঠারও সুযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ। অকেজো বিমানগুলো পুরোনো আদলে ফিরিয়ে এনে এগুলোর ভেতর এয়ারকন্ডিশনার যুক্ত করা হয়েছে।
 
এ বিমানে ওঠার জন্য লাইন ধরে টিকিট সংগ্রহ করছেন দর্শনার্থীরা।
 
রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি ১৯৫৮ সালে প্রথম ওড়ানো হয়। ১৯৭৩ সালে বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়।
 
বিমান বাহিনীতে ‘বলাকা’ নামে পরিচিত এই বিমানটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। ডিভিডি ও ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানো হচ্ছে বলাকার মধ্যে। একটি বিশ্রামকক্ষ ফিরিয়ে আনা হয়েছে আগের মতো করে।
 
আরো যা আছে
জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হবে ঐতিহাসিক ড্যাকোটা বিমান। এটা নিয়ে আসা হবে জাদুঘরে। গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে উপহার দেয় ভারত।
 
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রাকালেও এর বিশেষ ভূমিকা ছিল।
 
এছাড়াও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে এ্যালিউট হেলিকপ্টার। যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনানিবাসে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর আঘাত হানা হয়েছিল। এই হেলিকপ্টারটি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়।
 
বিমান বাহিনীর যাত্রী পরিবহন প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত কানাডায় তৈরি একটি 'অটার' বিমানও রয়েছে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এটিও কর্মক্ষম ছিল।
 
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত একটি এফ-৮৬ যুদ্ধবিমানও স্থান পেয়েছে জাদুঘরে।
 
মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত তিনটি যুদ্ধবিমান হান্টার, মিগ-২১ এফএল এবং ন্যাটও জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে।
 
বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত জার্মানির তৈরি গ্লাইডার, চীনের তৈরি এফ টি-৫ মডেলের বিমান, সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এমআই-৮ হেলিকপ্টার এবং রাশিয়ার তৈরি এন-২৪ এয়ার ক্র্যাফট উন্মুক্ত রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।
 
প্রতিটি বিমানের কাছে সুদৃশ্য গাছ বানিয়ে পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।
 
দর্শনার্থীদের ভিড়
প্রতিদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা গড়ে এক হাজার থাকলেও শুক্র ও শনিবার সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসেন জাদুঘরে। এক শুক্রবার বিকালে জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, সব বয়সের মানুষ এসেছেন দেখার কৌতূহল মেটাতে।
 
বিমান, হেলিকপ্টার ও রাডারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর শহীদদের স্মরণ করতে তৈরি করা হয়েছে একটি শহীদ কর্ণার।
 
একটি ডিজিটাল ম্যাপও তৈরি করা হয়েছে।
 
বিমান বাহিনীর নানা রকম দ্রব্যাদি নিয়ে রয়েছে ‘নীলাদ্রি’ নামে একটি স্যুভেনির।
 
শিশুদের মনোরঞ্জন ও বিনোদনের জন্য চিলড্রেন্স পার্ক, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জিরাফ, হরিণ, শিম্পাঞ্জিসহ নানা রকম পশু-পাখির প্রতিরূপ।  
 
বিমান ছাড়াও জাদুঘরের উত্তর দিকে সুদৃশ্য লেক এবং দক্ষিণে মনোরম সবুজ বৃক্ষসারি ও বনানী যে কারোরই মন কাড়বে।
 
পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন ধানমণ্ডির আকরামুল ইসলাম। পাঁচ বছরের ছেলে নীরবের বায়না ধরে পুরো পরিবার নিয়ে ওঠেন বলাকায়।
 
আকরামুল বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রজন্মের শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান জানার পাশাপাশি বিমানে ওঠার সুযোগ সত্যিই মজার ব্যাপার।
 
পরিকল্পনা
বলাকার মতো করে আরো ২/১টিতে দর্শনার্থী ওঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
 
বিমান বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত পোশাক, র‌্যাংক, ক্যাপ-ব্যাজ প্রদর্শনের বিশেষ গ্যালারি স্থাপন হবে।
 
তৈরি করা হবে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি। মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর অবদানকে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি নির্মিত হবে।
 
সময়সূচি
রোববার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। এছাড়া সোম থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে জাদুঘর।
 
এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
 
প্রবেশ ফটকের ঠিকাদার মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান ঝণ্টু বলেন, বিমান একটা স্বপ্ন। এখানে তা ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। বিমান বাহিনীর নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দর্শনার্থীদের নিরাপদ বিনোদন দিচ্ছে বিমান বাহিনীর এই জাদুঘর।
 
প্রধান ফটকে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।