ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

নার্সারি ব্যবসা : লাভজনক পেশা

শাপলা সুলতানা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১১
নার্সারি ব্যবসা : লাভজনক পেশা

পথ চলতে চলতে প্রায়ই আমাদের চোখ আটকে যায় ঢাকার রাস্তার পাশে সারি করে সাজিয়ে রাখা ফুল আর ফলের গাছের চারার দিকে। এসব গাছের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এই মুগ্ধতা থেকেই বৃক্ষপ্রেমীরা নিজেদের বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগিয়ে থাকেন। তবে শুধু আঙিনাতেই নয়, ঘরের বারান্দা, ছাদ, অফিস, স্কুল-কলেজের মাঠ আর রাস্তার ডিভাইডারে হরেক রকম ফুল-ফলের গাছ শোভা পায়।

নগরের বৃক্ষপ্রেমীদের এই চাহিদা মেটাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট ছোট নার্সারি । এসব নার্সারির সাথে অনেক মানুষ  যুক্ত। তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে নার্সারি ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। নার্সারিকে জীবিকা হিসেবে নেওয়া নুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে মাত্র দশ হাত জায়গায় নিজের নার্সারি গড়ে তুলেছেন।   পারিবারিকভাবেই তিনি এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা থাকলে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারেন। তাদের পরিবার নার্সারি থেকে অর্জিত আয় দিয়েই খাওয়া-পরার খরচ চালান।   নার্সারি ছোট হলেও মাসে সব খরচ বাদে ভালোই লাভ থাকে বলে জানান নুরুল ইসলাম।

কার্জন হলের সামনের ফুটপাথজুড়ে আরো কয়েকটি নার্সারি আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা করে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, পরিবেশ ভালো রাখছি এ কারণে সবাই এটাকে সুদৃষ্টি দিয়েই দেখেন। তাছাড়া এ জায়গা ব্যবহারের জন্য কোনো ভাড়া দিতে হয় না।

কার্জন হলের মতো ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাথেও বেশ কয়েকটি নার্সারি গড়ে উঠেছে। এখানকার একটি নার্সারির মালিক সোহেল। সোহেল জানান, অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে এটি অনেক নিরাপদ এবং অল্প পুজিতে করা যায় বলে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেক মানুষ এখানে গাছ কিনতে আসেন। পরিচিত অনেক ক্রেতা আছেন যারা নিয়মিত গাছ নেন। আবার অর্ডার দিয়েও অনেকে গাছ কেনেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাস্তার পাশে বেশ বড় কয়েকটি নার্সারি গড়ে উঠেছে। এখানকার গ্রিন গার্ডেন নার্সারির কর্মী আকবর আলী বললেন, প্রায় ১১ বছর তিনি এ কাজে নিযুক্ত। এখন মাসে তিনি ৫৩০০ টাকা বেতন পান। গাড়ি দুর্ঘটনার পর অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না বলে এ কাজে এসেছেন । এই নার্সারির আরেক কর্মচারী অনেকটা অভিযোগের সুরে বললেন, নার্সারি করার জন্য যেসব অভিজ্ঞতা লাগে সবই তার আছে, অথচ টাকার অভাবে নিজে একটা নার্সারি দিতে পারছেন না। ব্যাংক থেকে যদি ২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণ দিত তাহলে খুব সহজে নিজেই একটি নার্সারি দিতে পারতেন। তিনি আরো বললেন, এই ব্যবসা খুব নিরাপদ এবং ভালোভাবে করতে পারলে প্রচুর লাভ পাওয়া যায়। বর্তমানে ঢাকা শহরে গাছের চারার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এসব নার্সারিতে ফুল, ফল, ঔষধি সব গাছ পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর জন্য মাটির পাত্র, পোকা দমনের জন্য সারও পাওয়া যায় কিছু নার্সারিতে। শহরের জায়গাস্বল্পতার কথা মাথায় রেখেই তারা ছোট ছোট টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। ফলে ছাদে বা বারান্দায় সহজেই গাছ লাগানো যায়। যাদের নার্সারি একটু বড় তারা সরকারি-বেসরকারি অফিস সাজানোর দায়িত্বও পান। আগারগাঁওয়ের আকবর আলী বলেন, বিভিন্ন মেলার সময় তার এখান থেকে গাছ ভাড়া করে নিয়ে যান আয়োজকরা।

কোন ধরনের গাছ বেশি বিক্রি হয় জানতে চাইলে কৃষি উপকরণ নার্সারির ইমারত হোসেন বলেন, মূলত মৌসুম অনুযায়ী গাছ বিক্রি হয় । শীতকালে ফুল  আর বর্ষায় ফল বা অন্যান্য গাছ বেশি বিক্রি হয় । গোলাপ, বনসাই এবং ক্যাকটাস সারা বছরই বিক্রি হয় । এসব নার্সারিতে  ১০ টাকা  থেকে ২০ হাজার টাকার গাছ পাওয়া যায়। নার্সারির জন্য যেসব গাছ আনা হয় তার সরবরাহ আসে সিরাজগঞ্জ, সাভার এবং যশোর থেকে। তবে কিছু নার্সারির নিজস্ব বাগানও আছে।

রাস্তার পাশে নার্সারি গড়ে তোলায় কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তারা জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্যা হয় না, বরং রাস্তার পাশে থাকায় সহজেই মানুষের চোখে পড়ে । ফলে বিক্রি ভালো হয় । তবে মাঝে মাঝে এলাকার চাঁদাবাজদের কিছু টাকা দিতে হয়।

নগরের রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা এসব নার্সারি ব্যবসায়ীদের জন্য ঢাকা জেলা নার্সারি মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি আছে। সমিতির সভাপতি সাইদ হাসান বলেন, শহরের বাসাবাড়িতে জায়গা কম থাকায় আমরা চাই মানুষ অল্প পরিসরে গাছ লাগাক, তাই শহরের ছোট নার্সারিগুলোকে আমরা নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকি।

তবে ফুটপাথের অধিকাংশ ছোট নার্সারি মালিকরা তাদের জন্য যে সমিতি আছে এটাই জানে না। তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে থাকেন। নার্সারি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান লাভের জন্য ফার্মগেটের খামারবাড়িতে ব্যবস্থা আছে।
রাস্তার পাশের এসব নার্সারিকে ভালো চোখেই দেখেন সাধারণ মানুষ। এ প্রসঙ্গে কার্জন হলের সামনের এক-ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফুটপাথে ময়লা-আবর্জনার চেয়ে ফুল গাছ থাকা অনেক ভালো। আর এখান থেকে সহজে ও কম দামে আমরা গাছ কিনতে পারছি।

অনেকের মতে, ইট-পাথরের এই শহরে যেখানে সবুজের দেখা পাওয়া মুশকিল, সেখানে এই নার্সারিগুলো একটুখানি সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। অন্যদিকে এর সাথে জড়িতরা জীবিকারও সুযোগ পাচ্ছে। নার্সারি ব্যবসাকে যদি আরো গুরুত্বের সাথে দেখা হয়  তাহলে অনেকে এ ব্যবসার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাবেন।

বাংলাদেশ সময় ১৪৩৫, মার্চ ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।