১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী ১৬ মার্চ ২০১১ বিকেল ৪টায় একাডেমীর সেমিনার কক্ষে আলোচনা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন গোটা বাঙালি জাতির জন্য গৌরবময় ও অহংকারের দিন। বাঙালির জাতিসত্তা নির্মাণে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের মনীষী ও রাজনীতিবিদগণ সফল হলেও জাতিরাষ্ট্র নির্মাণে তাঁরা সফল হননি। বাঙালির জন্য স্বতন্ত্র-স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের একমাত্র নির্মাতা হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নির্মিত রাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী পরিচিতির জন্য সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এটা সম্ভব হলেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্যাপন এবং তাঁর স্বপ্ন সফল হবে।
কথাশিল্পী মাহবুব তালুকদার বলেন, ১৭ই মার্চ বাঙালি জাতির জন্মদিন। কেননা এ দিনেই বাঙালি জাতিসত্তা আমাদের মধ্যে নবরূপে সঞ্জীবিত হয়েছে। বিশ্বে বাঙালির আত্মপরিচয় তথা নতুন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, একদিনে নয়, বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তোলেন। আমি আশা করি, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি অবস্থান করতেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানামাত্রিক দিক নিয়ে তাঁরা লিখলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু ক্লারিজ হোটেলে অবস্থানকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বাংলাদেশকে কমনওয়েলথের সদস্য করার জন্য এডওয়ার্ড হিথকে অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, ক্লারিজ হোটেলে আমি বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখি এবং আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলি। এই মহান মানুষটির নেতৃত্ত্বে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে তিরিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। হোটেলে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুর ভেতরেও ঘরে ফেরার গভীর টান আমরা লক্ষ করেছি এবং হোটেলের বাইরে যখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছিল তখন বারবারই তিনি জানালার পাশে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। সারাবিশ্বের দলিল-দস্তাবেজের সাক্ষ্যই প্রমাণ করে ঘোষণা কে দিয়েছিলেন।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার মূল স্তম্ভ হিসেবে সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করেন। এই মূল নীতিগুলো দেশকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য
অবশ্যম্ভাবী। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত সংবিধানের চার মূলনীতি যথাযথ পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং আবৃত্তি করেন আহ্কামউল্লাহ।
বাংলাদেশ সময় ১২৫৯, মার্চ ১৭, ২০১১