ঢাকা: আজ থেকে ৩৭ বছর আগের কথা। অস্বাভাবিক শরীর নিয়ে ব্রাজিলের মন্টে সান্টোতে জন্ম নেয় একটি শিশু।
ডাক্তাররা শিশুর মাকে পরামর্শ দিলেন তাকে মেরে ফেলার। কিন্তু নাড়িছেঁড়া ধন বলে কথা! পরম মমতায় তাকে বুকে তুলে নিলেন। সেই ছেলের বয়স এখন ৩৭। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে তিনি এখন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা! যার নিজের বেঁচে থাকাই একসময় প্রশ্নের মুখে পড়েছেলো, তিনিই এখন অন্যকে বেঁচে থাকার রসদ জোগান।
পুরো নাম ক্লদিও ভিয়েইরা ডি অলিভিয়েরা (৩৭)। জীবন-মরণের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি আজ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

যাকে নিয়ে এত কথা, তাকে নিয়ে তার বক্তব্য শুনব না, তা কী হয়! তার জীবনের মতো কথাতেও ঝরে পড়লো সেই দৃঢ়তা, ছোট থেকেই আমি নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করি। অন্যদের উপর নির্ভর করে চলাটা আমি একদম পছন্দ করি না!

আমি টিভি ছাড়তে শিখেছি। এছাড়াও সেলফোন তোলা, রেডিও ছাড়াসহ কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতেও শিখেছি আমি, যোগ করেন ক্লদিও।
মুখে কলম ধরে ক্লদিও লেখেন। শুধু তাই নয়, ঠোঁট দিয়ে সেলফোন চালানো, মাউস ধরাসহ অনেক কাজই করে থাকেন তিনি। শহর ঘোরার জন্য তার আছে বিশেষ ধরনের জুতো।

সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়টি হলো, পরিবারের বাকি ‘স্বাভাবিক’ সদস্যদের মতোই হেসে-খেলে জীবন কাটাচ্ছেন ক্লদিও।

এ বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের মত, আমরা কখনোই তাকে আলাদা করে ভাবিনি। আট বছর বয়স থেকেই সে নিজের পায়ে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াত। এজন্য তার আত্মবিশ্বাসের প্রশংসা করতে হয়। এটাই তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
জানা যায়, ক্লদিও যাতে নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারেন, সেভাবে বাড়িতে পরিবর্তন এনেছেন তারা। বিছানার পাশে লাইট, প্লাগগুলো তার সুবিধামতোই লাগানো হয়েছে। তার অস্বাভাবিক আকারের কারণে তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে পারেন না। তবে এ কারণে তার চলতে-ফিরতে কোনো অসুবিধাই হয় না।

সম্প্রতি চিকিৎসকরা অবশ্য খারাপ খবরই শুনিয়েছেন। তাদের ভাষায় তার শরীরের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী ‘কনগেনশিয়াল আথ্রোগ্রাইপোসিস’। সহজে বললে, তার হাত-পায়ের জয়েন্টগুলো ধীরে ধীরে প্রসারিত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।

কিন্তু এসব কে থোড়াই কেয়ার করেন ক্লদিও, ‘আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। আমি নিজেকে একজন গণ মানুষের বক্তা হিসেবেই ভাবতে চাই। তাদেরকে আমার সবকিছু দিয়ে আত্মবিশ্বাস জোগাতে চাই!’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪