গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: ঝম ঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ব্রহ্মপুত্রের বুকে শ্যালোইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাসিয়ে দিলেন সাইদুল ইসলাম (৩৫)।
ইঞ্জিনের প্রচণ্ড খট খট শব্দের মধ্যেই ঢেউয়ের বিপরীতে নৌকা চলছে ময়মনসিংহ সদর থেকে গৌরীপুরের ভাঙনামারীর উদ্দেশে।
নৌপথে স্থানীয় জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর্থিক সঙ্গতি অর্জন করেছেন সাইদুল। তার ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ময়মনসিংহ শহরের থানাঘাট এলাকা থেকে গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনমারী পর্যন্ত মোট ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে এক ঘণ্টা।
চলতি বর্ষায় ব্রহ্মপুত্র নদের ময়মনসিংহ অংশে পানি বেড়েছে। আর এ সুযোগে গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনামারী উপজেলার বাসিন্দারা নদীপথে শহরে যাতায়াত করছেন। যদিও বছর জুড়েই এ ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলে। তবে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয়দের কাছে অনেক বেশি বেড়ে যায় নদীপথের গুরুত্ব।
ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে সড়কপথে ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে নদীপথে যাতায়াত খরচ অনেক কম। এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই পাঁচবছর ধরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা সার্ভিস ধরে রেখেছেন উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের খুলিয়ারচর মুন্সীবাড়ি এলাকার সাইদুল ইসলাম।

এখন তার তিনটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে। মাঝারি সাইজের এসব নৌকা প্রতিদিন একবার করে শহরের থানাঘাট থেকে ভাঙনামারী পর্যন্ত আপ-ডাউন করে। প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী ধারণক্ষমতার এসব নৌকা ভাঙনামারী বটতলা ঘাট থেকে ময়মনসিংহ শহরের থানাঘাটের উদ্দেশে ছাড়ে সকাল আটটায়। সকাল নয়টায় ময়মনসিংহে এসে পৌঁছায়।
আবার প্রতিদিন শহর থেকে যাত্রীদের নিয়ে ভাঙনামারীর উদ্দেশে যন্ত্রচালিত এসব নৌকা প্রতিদিন থানাঘাট থেকে ছাড়ে দুপুর দেড়টা, বিকেল তিনটা ও পাঁচটায়।
সাইদুল জানান, ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী তিনি কখনোই পরিবহন করেন না। দুর্ঘটনা এড়াতেই তিনি সব সময় এ বিষয়টি মনে রেখে নদীর বুকে নৌকা চালান।
নৌপরিবহনে সময়সূচি মেনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ নৌকা সার্ভিস। ফলে, স্থানীয় লোকজন ভোগান্তির সড়কপথ এড়িয়ে তার নৌকায় চড়ে শহরে যাতায়াত করেন এমনটি জানান, উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের খেলার আলগী গ্রামের নঈমুদ্দিন (৫০)।
এ নৌকা সার্ভিসে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন ভাঙনামারী ইউনিয়ন থেকে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। সকালের সার্ভিসে শিক্ষার্থীরা শহরে এসে আবার বিকেলের সার্ভিসে চড়ে বাড়ি ফিরে যায়।
সাইদুলের শ্যালো ইঞ্জিন নৌকার ভেতরেই কথা হয়, আরিফুর রহমান ও সারোয়ার হোসেনের সঙ্গে। এ দুজন ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের বাড়ি উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের গজারিয়াপাড়া এলাকায়।
এ দু’শিক্ষার্থী জানান, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় প্রতিদিন মাত্র ২০ টাকা খরচ করে তারা শহরে কলেজে আসা-যাওয়া করেন। সড়কপথে আসলে প্রতিদিন তাদের খরচ হতো ৬০ থেকে ৭০ টাকা। একই রকম কথা জানান নৌকার আরেক যাত্রী শহরের মহাখালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী তোশামনি (১৭)।

সাইদুল জানান, প্রতিদিন একটি নৌকা আপ-ডাউনে তার পাঁচ লিটার ডিজেল খরচ হয়। তিনশ ৫০ টাকার ডিজেল খরচায় আপ-ডাউনে তার ইনকাম হয় এক হাজার পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা। মাল্লা (হেলপার) ভাতাসহ সব খরচ বাদে তার প্রতিদিন লাভ হয় সাত থেকে আটশ টাকা।
তিনি জানান, শহরের থানাঘাট থেকে এ নৌকা উপজেলার ভাঙনামারীর ঘাটে পৌঁছানোর আগেই কমপক্ষে চারটি ঘাটে আবারও যাত্রীর খোঁজে নৌকা ভেড়ানো হয়। ভাঙনামারী ছাড়াও উছাখিলা, তারুন্দিয়া ও চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের লোকজন তার এ নৌকা সার্ভিসে চড়ে শহরে যাতায়াত করেন।
নৌকার মাঝি সাইদুল আরো জানান, যাত্রী ছাড়াও তার নৌকায় করে প্রতিদিন ভাঙনামারী ইউনিয়ন থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা শহরের বাজারে আনা-নেওয়া করেন। এতে করে তাদের পরিবহন ব্যয়ও হয় অনেক কম।
উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের ভোলার আলগী গ্রামের বাসিন্দা আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর জানান, সাইদুলের এ নৌকা সার্ভিসের জনপ্রিয়তা দেখে আরো অনেকেই ব্রহ্মপুত্রে বাণিজ্যিকভাবে শ্যালোইঞ্জিন চালিত নৌকা চালাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, আগষ্ট ২৪, ২০১৪