ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৫ মে ২০২৫, ০৭ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

গ্রামে প্রকৃতির অপরুপ ছোয়া

নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাক্টিং আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৬, আগস্ট ৩, ২০১৪
গ্রামে প্রকৃতির অপরুপ ছোয়া বাংলানিউজের জন্য ছবিগুলো তুলেছেন শফিকুর রহমান দীপু

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে ফিরে: নগরজীবনের ব্যস্ততায় কখনো যেমন দেখা হয়না আকাশের তারকারাজি। যা সহজেই চোখে ধরা খায় গ্রামে।

এরকম প্রকৃতির হাজারো নিদশর্নই যেনো অপরুপ করে তুলেছে গ্রামীণ জীবন। যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। শহরজীবনের পাকা রাস্তা যেমনটা খুবই দরকারি মনে হয়, তেমনটি গ্রামের কাঁচা রাস্তাও অনেক সময় নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে। IMG_1IMG_1সিরাজগঞ্জের একেবারে অজপাড়াগাঁ রামেশ্বরগাতী গ্রামটিতে গিয়ে এমনটাই মনে হয়েছে। পাশের গ্রামপাঙ্গাশী গ্রামের সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধে  জন্ম নেওয়া আনন্দ বাজার নামের নতুন বাজারটি যেনো আরও বেশি প্রাণ এনে দিয়েছে। IMG_2গ্রামের দিগন্ত জোড়া মাঠ যেমন আপনাকে কাছে টানবে, তেমনি গ্রামের ক্ষেত খামার, খাল-বিল, ছোট ছোট ব্রিজ, কালভার্ট, কচুরি পানা, ফড়িংয়ের দেখা পাওয়াটাও আপনাকে নিয়ে যাবে মুগ্ধতার আমেজে। IMG_3গ্রামে এখন আধুনিকতার ছোয়া লাগছে। সবার হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে। হাঁট-বাজারগুলোতেও শহরের দোকানের মতো মানসম্পন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিসেবাও। আগে যেমন পুরো এক পাড়ার মানুষ একটি ইন্দ্রা(বড় আকারের কুয়া) থেকে পানি তুলতো, থাকতো কুয়া, সরকারি টিউবওয়েল। এখন আর তেমনটি নেই। এখন আর হয়না অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ পানি নিয়ে ঝগড়া বিবাদ-মারামরি। IMG_4প্রতি বাড়িতেই এখন নিজস্ব টিউবওয়েল, স্যানিটারি ল্যাট্রিন। অনেক গ্রামেই আছে পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থা। তাই আগের মতো এখন আর কাউকে ওভাবে ছোট বোতল নিয়ে তেল কিনতে বাজরের দিকে যেতে দেখা যায়না, আগের মতো নেই সন্ধ্যার আগে আগে হারিকেন মোছার কাজ, কিংবা বাতির কুপি পরিষ্কারের কাজ। IMG_5ফজরের নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি গ্রুপ ঘুম থেকে উঠে বেড়িয়ে পড়ে মসজিদের পানে। অনেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন হাঁটতে। আগে যেমন রাত ৮টা না বাজতেই সবাই ঘুমিয়ে যেতো, এখন আর এ চিত্র নেই। অনেক বাড়িতেই টিভি রয়েছে। IMG_6বাজারের ছোট্ট চায়ের দোকানেও রয়েছে মিনি টিভি, আছে বড় টিভিও। গ্রামে এখনও তেমনটা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হয়নি। শিক্ষকরা তাদের মতো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সার্বিক মান খারাপ হ্ওয়াতে হয়তোবা সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। IMG_7আগে যেমন গ্রাম মানেই কাঁচা ঘর, ছনের ঘর, আধা পাকা বাড়ির দেখা মিলতো, সুন্দর ডিজাইনের ওয়াল পাকা বাড়িকেই সবাই বড় বাড়ি, ধনী বাড়ি মনে করতো এখন তা আর নেই। এখন বেশিরভাগ বাড়ি নিদেনপক্ষে চারপাশ পাকা করা। আছে ছাঁদ করা বাড়িও। হচ্ছে দ্বিতল-তিত্বল বাড়িও। IMG_bg
একসময় ইউনিয়ন পরিষদে যেদিন চাল-আটা দিতো সেদিন গরীব মানুষের অনেক বড় জমায়েত হতো, এখন ওই চাপ আর নেই। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে। ৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানই এমনটা জানিয়েছেন। কারণ গ্রামীণ শ্রমিকদের(কামলা) মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। একসময় ৬০/৭০ টাকায় যে কামলা পাওয়া যেতো এখন তা ২০০/২৫০ টাকায়। তবে মজুরি বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত ও কৃষকরা।
IMG_9
কারণ তারা যে টাকা খরচ করে চাষাবাদ করছেন তা উঠে আসছে না। এ বছর আখ চাষ করে তারা যেনো বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ ১ তাওয়ের খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকার মতো, কিন্তু বিক্রি করা যাচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকায়। এতে লাভ তো দূরে থাক, মোট খরচই উঠবে না। তারপরও কৃষকদের মাঝে কোনো হতাশা দেখিনি। তারা হয়তো অন্য ফসল দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করছে।
IMG_10
সব মিলিয়ে বলা যায়, যান্ত্রিক জীবনের বাইরে গ্রামের কয়েকটা দিন আপনাকে যে পুরো রিফ্রেশ করে তুলবে তা বলা যায় নি:সন্দেহে। তাই দেশের বাইরে না হোক, সম্ভব না হোক নীলগিরি, কক্সবাজার, জাফলং, মাধবকুণ্ডু যাওয়া, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসুন চিরচেনা গ্রাম থেকেই। গ্রামীণ জীবনের এখনকার প্রাণচাঞ্চল্য ভাল লাগবেই।
IMG_12
গ্রামীণ জীবনের এ ছবিগুলো সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাশী ইউনিয়নের রামেশ্বরগাঁতী গ্রাম থেকে গত ৩১ জুলাই‘২০১৪ ইং তারিখে তোলা। পেশায় মার্চেন্ডাইজার শফিকুর রহমান দীপুর ক্যামেরায় উঠে এসেছে এসব চিত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।