ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৫ মে ২০২৫, ০৭ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রহস্যময় মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, পৃথিবীর গভীরতম স্থান

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০০, আগস্ট ১, ২০১৪
রহস্যময় মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, পৃথিবীর গভীরতম স্থান

বলতে পারেন, বিশ্বের গভীরতম স্থান কোনটি? উত্তরটা হলো মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ সম্পর্কে আজও পুরোটা জানা সম্ভব হয় নি বলেই পৃথিবীর মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও বিস্ময়কর স্থান এটি।



প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে রয়েছে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ। সেই দ্বীপপুঞ্জের নামেই রাখা হয়েছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নাম। মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে অবস্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চের। এর দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৫শ’ ৫০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬৯ কিলোমিটার।

এখানকার সবচেয়ে গভীর অংশটির নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ। বিজ্ঞানীদের মতে এটি প্রায় ১১ কিলোমিটার গভীর। তবে এর পুরোপুরি সঠিক গভীরতা বিজ্ঞানীরা এখনো জানাতে পারেন নি। তারা বলেছেন এই জায়গাটি নাকী আরো গভীর হতে পারে!

এইচএমএস চ্যালেঞ্জার ২ নামক একটি জাহাজের নাবিকেরা ১৯৪৮ সালে পৃথিবীর গভীরতম এই বিন্দু আবিষ্কার করে। তাই সেই জাহাজের নামানুসারেই রাখা হয়েছে চ্যালেঞ্জার ডিপের নাম।  

চ্যালেঞ্জার ডিপ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের দক্ষিণ দিকে রয়েছে। এখানে পানির চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। কত বেশি জানেন? প্রায় ১০০০ গুণ! সেজন্য এখানে পানির ঘনত্বও বেশি।   এই অংশটিতে পানির তাপমাত্রা ১-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে চ্যালেঞ্জার ডিপ যেকোনো মানুষের জন্যই বিপজ্জনক জায়গা। পানির চাপের কারণে এখানে সাধারণ সাবমেরিন চলতে পারে না।

মজার কথা হলো, মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা যেমন দুঃসাধ্য, তার চেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতম বিন্দু পর্যন্ত যাওয়া। সমুদ্রের নিচে হওয়ায় এবং পানির চাপ বেশি থাকায় কোনো মানুষের পক্ষে এখানে যাওয়াটা অত্যন্ত কঠিন। মাউন্ট এভারেস্ট এখন পর্যন্ত অনেকেই জয় করেছেন, কিন্তু চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতম বিন্দুতে এখন পর্যন্ত চারবার অবতরণ করেছে মানুষ।

১৯৬০ সালে ইউএস নেভির লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ ও জ্যাকুস পিকার্ড প্রথম মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তলায় অবতরণ করেন। এরপর ১৯৬৬ ও ২০০৯ সালে দুবার মানুষ অবতরণ করেছে ভয়ংকর এ স্থানে। সর্বশেষ ২০১২ সালে কানাডার চলচ্চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন এখানে অবতরণ করেন।

আরো একটা মজার তথ্য হলো আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের পুরোটা যদি তুলে এনে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু এভারেস্টের চূড়াটাও সমুদ্রের উপর থেকে দেখা যাবে না। বরং চ্যালেঞ্জার ডিপ এতটাই গভীর যে আস্ত এভারেস্টটা রাখার পরেও উপরে আরো জায়গা রয়ে যাবে।

সমুদ্রের নিচে এখনো অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে না মানুষ। তাই মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সঠিক গভীরতাও আমাদের অজানা। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জলের নিচের সব তথ্যও জানবে মানুষ, জয় করবে সমুদ্রের নিচের রাজ্যও। তখন নিশ্চয়ই অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ছুটবেন পৃথিবীর গভীরতম স্থানে অবতরণ করার রোমাঞ্চকর অভিযানের হাতছানিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।