ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২, ০৮ মে ২০২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘দুই-আড়াইশ ট্যাকা দিয়াই আমগো ঈদ’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৩, জুলাই ৩০, ২০১৪
‘দুই-আড়াইশ ট্যাকা দিয়াই আমগো ঈদ’ ছবি: রাজীব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘আমাগো আবার ঈদ আছে নাকি? ঈদ হইল বড় লুকগো লাইগা। পার্কে গেলেও লাগে ট্যাকা, এতগুলান ট্যাকা।

তাই পোলাপাইনগো লইয়া রিকশায় ঘুইরা আর দুই-আড়াইশ ট্যাকা ভাইংগা আমগো ঈদ কাটতাছে। ’ ঈদ কেমন কেটেছে জানতে চাইলে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন বস্তিবাসী খাদিজা।

স্বামী এক মেয়ে আর ছোট দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। স্বামী আমিনুল একজন রিকশাচালক। থাকেন মালিবাগ বস্তিতে।

গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওযার কথা বলতেই খাদিজার পাশে থাকা স্বামী আমিনুল বলেন, গেরামের কতা কইয়া কী হইবো। আমগো বাড়ি বরিশাল। মেলা বছর যাই না। সেইহানে আমগো কোন বাড়িঘর নাই।
bosti_1
খাদিজা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আর আমিনুল রিকশা চালায়। দুজনের আয় দিয়ে খানিকটা টানাটানির মধ্য দিয়েই সংসার চলে তাদের।

খাদিজা জানায়, অসুস্থ মাকে নিয়ে ঈদের দিনের সব আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে। আর এই ঈদে একটু সেমাই একটু পোলাও মাংস রান্না করে পরিবারকে খাওয়ানো সামর্থ্য তাদের নেই।

‘ঈদ শুধু ধনীদের জন্য, দরিদ্রদের জন্য ঈদ হলো আফসোস। আমি যে বাড়িতে কাম করি হ্যারা খিচুরি আর মাংস দিছিলো তাই সবতে মিইলা খাইছি। আর বাচ্চাগো ঈদে একসেট কইরা জামা-কাপড় দিছে’ বলেন খাদিজা।
bosti_3
বুধবার মালিবাগ বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতে পলিথিন ও বেড়া দিয়ে ছোট ছোট ঘর তৈরি করেছে ছিন্নমূল বস্তিবাসিরা।

ঘরের পাশেই মাটির চুলায় চলছে তাদের রান্নার কাজ। চুলোর আশপাশে বাচ্চারা খেলায় মগ্ন। আবার কেউ প্রতিদিনের মতো দিন কাটাচ্ছে।

ফুটপাতে বসবাসকারীদের কেউ রিকশা চালায়, কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আর বাচ্চারা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ ও বোতল কুড়ায়, আবার কেউ ভিক্ষাও করে।    

মালিবাগ বিশ্বরোড বস্তিতে চোখে পরে কপালে দু-হাত ঠেকিয়ে চিন্তাগ্রস্থ এক বৃদ্ধকে ।

কেমন কাটছে এবারের ঈদ জানতে চাইলে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলেই তিনি বলেন,  ‘কোনোমতে কাটতাছে। মহাজন ট্যাকা দেয় নাই। কেমনে বাজার করমু, কি খামু?’
bosti_4
শইরলে বল নাই তাই বইয়া থাইকা ইট বাঙ্গার কাম করি। ২০০ টাকা রোজ পাই। এই বাজারে ২০০ ট্যাকা দিয়া কি হয়? ঈদে পরিশ্রমিক না পেয়ে মনোকষ্ট নিয়ে কথাগুলো বললেন এই বৃদ্ধ। তার নাম কমল।

বৃদ্ধ জানান, মায়ের কমলা নামের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রাখা হয়েছে কমল। পরিবারের বড় ছেলে বিয়ে করে গাজীপুরের থাকেন। এখন সাথে থাকে তার এক মেয়ে।

বস্তির পাশে রিকশায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় এক শিশুকে। নাম রাকিব। মা এক বোন আর রাকিবসহ তিন জনের সংসার তাদের। বোতল কুড়িয়ে মাকে এনে দেয়। এগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা পায়।
bosti_5
‘ঈদের দিন আমরা দুইজন শিশুপার্কে গেছিলাম, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে দেয় নাই, কয় টিকেট লাগবো। তারপর রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে দিন কাটাইছি’ জানায় রাকিব।

এভাবে ঈদ কাটানোর পরেও তার চোখেমুখে নেই কোন কষ্টের ছাপ।   

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।