ঢাকা: দার্জিলিংয়ে বসে যেমন মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়, তেমনি বাংলাদেশের কোনো পাহাড় থেকে মেঘ ছুঁয়ে দেখার একমাত্র স্থান ছিল এটি। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের এই স্থানটি এক সময় ছিল দেশের সেরা পর্যটন স্পট।
বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ের রানি ‘চিম্বুক’। এর দুই প্রান্ত থেকে রুমা ও থানচি যাওয়ার রাস্তা। মেঘের দেখাও পাওয়া যায়। দেখা যায় পাহাড়ের বুক চিরে নদীর ছুটে চলা। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে আঁকাবাকা সড়ক যেন রহস্যেঘেরা। হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। কখনো কখনো পুরো শরীরে ঠান্ডার পরশ বুলিয়ে চলে যায় যায় সাদা মেঘ। সযতনে গোছানো এক টুকরা সৌন্দর্যের নাম ছিল চিম্বুক।
১০/১২ বছর আগে কারো যদি চিম্বুকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে নি:সন্দেহে তিনি আজ চমকে উঠবেন। সাজানো গোছানো বাংলার দার্জিলিংয়ের বর্তমান হাল দেখে কারো বোঝার উপায় নেই এর হারানো সৌন্দর্য কতটা সুন্দর ছিল।

সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬০০ ফুট উঁচু পাহাড়টি আগে এটি যতটুকু গোছানো ছিল এখন তার কিছুই নেই। ঘন জঙ্গল ও পুরাতন ভবনের চিহ্ন দেখে বরং যে কেউ আঁতকে উঠতে পারেন এই ভেবে যে এখানে কি কখনো মানুষের পদচিহ্ন ছিল।
প্রধান সড়ক বেয়ে আগে যে কেউ চাঁদের গাড়ি কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে চিম্বুকের মূল পাহাড়ে উঠে যেতে পারতেন। এখন সেই পাহাড়ি রাস্তা দেখলে হেঁটে উঠতেও ভয় লাগে। তাই তো চাঁদের গাড়ির চালক আবদুল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ওখানে উঠতে পারবেন না। পায়ে হেঁটে ওঠার কথা বলতেও সে সায় দিল না। বললেন, ওই খানে উঠে কি করবেন এখন আর কিছুই নেই।
তবু ১০ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করে মন চাইছিল আবারো চিম্বুক পাহাড়টি দেখে আসতে। চালকের নিষেধ সত্ত্বেও স্যাঁতস্যাঁতে ইটের রাস্তা, ওপরে ঘাসে ঢাকা, কোথাও আবার ইটও নেই। জুতা পায়ে উঠতে গিয়ে পা ফসকে পড়ারও উপক্রম হয়েছিল। তবু বহু কষ্টে উঠলাম।
চাঁদের গাড়িরচালকের নিষেধের যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম। উপরে উঠে তো আঁতকে উঠলাম। এ কোথায় এলাম। বাংলার দার্জিলিংয়ের একি হাল। মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউজটিকে রীতিমতো ভুতুড়ে বাড়ি মনে হলো। বাড়ির আশপাশে আবর্জনার স্তুপ। ওপরে টিনের চালা ময়লার স্তুপে ঢাকা। ঘন ঘাস ও জঙ্গলে বাড়ির চারপাশ ঢেকে গিয়েছে। পা ফেলতেও ভয় লাগছে। সাপ-জোকের ভয় লাগছে। মনে হয় গত ১০ বছরেও এখানে কেউ পা রাখেনি। রেস্ট হাউজের পাশে বসার জন্য সুন্দর কংক্রিটের বেঞ্চ ছিল।
এই বেঞ্চে বসে পর্যটকের চিম্বুক ও এর আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। কিন্তু বেঞ্চটি দেখে বসার ইচ্ছেই উবে গেল। দূর থেকেই তাকিয়ে রইলাম। স্যাতস্যাতে বেঞ্চে পরপাছাও বাসা বেধেছে। আশপাশ ঢেকে গিয়েছে ঘন ঘাস, লতাপাতা ও আবর্জনায়। এগুলো থেকে ওদিকে পা ফেলতেও ভয় লাগবে যে কারো।

১০ বছর আগে পর্যটকদের জন্য এখানে ওয়াশ রুম ছিল। এখনও আছে। তবে তার কোনো দরজা নেই, পরগাছায় ঢেকে গিয়েছে এর সবটা।
সড়ক ও জনপথের এই সম্পত্তি এখন দেখার কেউ নেই। পর্যটন মন্ত্রণালয়ও এর মালিক না। তাই তার ওপরও এর দায়িত্ব পড়ে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখনো রেস্ট হাউজটি সুন্দর করে করা যেতে পারে। পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এর দায়িত্ব দেওয়া হলে তারা পর্যটন করপোরেশন কিংবা অন্য কাউকে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে। এতে এই স্থানটি যেমন আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে তেমনি পর্যটকের ভিড়ে সরব হয়ে উঠবে পাহাড়ের রানি চিম্বুক।
বান্দরবানে পর্যটন স্পট ‘নীলগীরি’ হওয়ার আগে চিম্বুকই প্রধান আকর্ষণ। এখন নীলগীরিতে গিয়ে যেকেউ মেঘ দেখতে পারেন। নতুন নতুন পর্যটনের স্পটের সঙ্গে পুরাতন স্পটকে ধরে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
বেঙ্গল ট্যুরস এর ব্যবস্থাপনা পরিচারক ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক মাসুদ হোসেন মনে করেন, নতুন নতুন পর্যটন স্পট আবিষ্কার করতে হবে তেমনি পুরাতন স্পটগুলোকেও ধরে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, জুলাই২৯, ২০১৪