ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

জীবনের ছবি আঁকা হল না দেবব্রতের

দেবোত্তম কুমার দেবনাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১

ঢাকা: জীবনের ছবি আঁকত দেবব্রত দাশ। ওর রুমে গেলে দেখা মিলতো মাদক বিরোধী ছবিগুলো যেন জীবনের কথা বলছে।

বেঁচে থাকার মাঝে যে কত আনন্দ সে কথাই যেন বলছে ছবিগুলো। কিন্তু এই জীবনবাদী ছবিগুলোর শিল্পীই আজ একটি হয়ে ছবি হয়ে গেছে।
 
শনিবার ভোরে যশোরে ঘটে যাওয়া বাস-ট্রেন সংঘর্ষে ওর সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। আর পরিবারের জন্য রেখে গেছে একরাশ দুঃখ আর স্মৃতি।

গতকাল বিকালে দেখা হয়েছিল ওর সাথে। ওর পরনে ছিল একটি কালো জামা। তাই দেখে আমি বলেছিলাম কিরে শোকের মাস বলে কি তোর গায়েও শোক লেগেছে? ও বলেছিল, “না, এই কালো জামাটা আমার খুবই প্রিয়। ” তারপর জানায় রাতেই বড়ি যাচ্ছে। সাবধানে যেতে বলি তাকে। দেব বলে, “ঠিক আছে বাড়ি থেকে এসে দেখা হবে। ” কিন্তু ওর সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না। দেব তার প্রিয় কালো রঙের মধ্যে আজ হারিয়ে গেছে।  

দেবব্রতর বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা ছিল একজন জয়নুল আবেদিন হবে। আর এই কারণেই ছোটবেলা থেকেই শুরু করে আঁকাআঁকি। তারপর এইচএসসি পরীক্ষার পর ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। ২০০৫ সালে শুরু হয় তার চারুকলা জীবন। ও সবসময় বলত ও একজন বড় শিল্পী হবে। আর এই কারণেই সারাদিন পড়ে থাকত চারুকলায়। হাতে থাকত রং তুলি আর কাগজ। তাকে চারুকলার বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যেত আপন মনে বসে ছবি আঁকছে।
 
জগন্নাথ হলের অক্টোবর ভবনের ৪৩৯ নং রুমে থাকত ও, কিছুদিন আগে এসেছিল গোবিন্দ চন্দ্র দেব ভবনের ৭৪ নং রুমে। রুমে খুব কমই থাকত সে।

ওর বড় ভাই এর সাথে ওর ছিল বন্ধুর মতো সম্পর্ক। বড় ভাইয়ের সাথে প্রায়ই কথা হত ওর। খুব মজা করত ওরা দুই ভাই। মাঝে মাঝে বলত আমরা দুই ভাই একসাথে বিয়ে করব। আর বিয়ের পর একসাথে বউ নিয়ে ঘুরতে বের হব।

ওর অনেক ইচ্ছে ছিল চারুকলার সবচেয়ে বড় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ‘জয়নুল চিত্র অংকন প্রতিযোগিতা’য় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতে নিজেকে অন্যতম শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা।  

বিভিন্ন জায়গায় ও বিনা পয়সায় ছবি আঁকতে যেত। সংসদ ভবনে, শহীদ মিনারে হলের পূজার সময় ও ছিল  একজন আকান্ত কর্মী।

দেবকে আর দেখা যাবে না চারুকলার ক্যাম্পাসে, ওকে আর দেখা যাবে না জগন্নাথ হলের মন্দিরে, ওকে আর দেখা যাবে না ছবি আঁকা ক্যানভাসের সামনে। যে রং এর আঁচড়ে পটের ছবিতে ফুটিয়ে তুলতো জীবনের ছবি আজ দেব নিজেই হয়ে গেছে একটি ক্যানভাসের ছবি- নির্জীব, নিশ্চুপ।

দেবের হাতের তুলি আর কোনদিন কোন ক্যানভাসে আঁচড় টানবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যাপি, মলয়সহ আরো যারা স্মৃতির আতলে তলিয়ে গেছে কালের স্রোতে তাদের সাথে নতুন যোগ দিয়েছে দেবব্রত দাশ।

আর কত মায়ের সন্তান কেড়ে নেবে, আর কত ভাইয়ের আশাকে নিঃস্ব করবে, আর কত শিল্পীকে ছবির পটে একটি ছবি করে দেবে মানুষের সামান্য একটু অসচেতনতা, এই নিষ্ঠুর রাস্তা!

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।