ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

এক স্বপ্নের বাঁশিওয়ালা

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১
এক স্বপ্নের বাঁশিওয়ালা

যাত্রার রাজার পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান তিনি, তবে হাতে তার তলোয়ার থাকে না, থাকে বাঁশি। একুশের বইমেলা এবং  রাজধানীর  এ প্রান্তে ও প্রান্তে বাঁশিতে তিনি বাজিয়ে যান মাটি-মানুষ আর দেশের গান।



বললেন, ৫২ বছর ধরে বাঁশি বাজান তিনি, তবে কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় গ্রহণ করেন না। এমনকি সামরিক রাষ্ট্রনায়ক এরশাদের সাথে ৯ বছর বাঁশি বাজানোর পরও তার কাছ থেকে এক কাপ চাও খাননি।

ওপরে যার কথা বলা হলো, তিনি কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা বংশীবাদক মো. আলাউদ্দিন খান।

অমর একুশে বইমেলায় যাওয়া অধিকাংশ মানুষেরই নজর কাড়েন তিনি। এই শিল্পী অনেক বছর ধরে বইমেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজিয়ে যান ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া আর দেশের গান। ‘ও কী গাড়িয়াল ভাই’ অথবা ‘উজান গাঙের নাইয়া’...এমন মাটির সুরের গান কার না ভালো লাগে! ইট-কংক্রিটের শহরের মানুষরা যেন শত কোলাহলের মাঝে তার বাঁশির সুরে খুঁজে পান গ্রামীণ ছোঁয়া।

তাই তিনি বাজালেই মানুষ জড়ো হন তার বাঁশি শুনতে। কেউ আবার ছবি তুলতে চান তার সাথে। এভাবে তিনি যেখানে যান তাকে ঘিরে একটা ভিড় জমে ওঠে।

এখন বাঁশি তার নিত্যসঙ্গী হলেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি বন্দুক হাতে যুদ্ধ করেছেন সক্রিয়ভাবে। এখনো তিনি যুদ্ধ করে যাচ্ছেন দেশের জন্য। এই যুদ্ধ তার বাঁশি বাজানোর মাধ্যমে।

বাঁশি বাজানোর পর সবার কাছে চারটা চাওয়ার কথা বলেন তিনি। তার প্রথম চাওয়া সরকার বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে, ধূমপায়ী বা মাদকাসক্তদের যেন কোনো চাকরি দেওয়া না হয়; দ্বিতীয়টিও সরকারের কাছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য। তার দাবি, ৬৫ বছর বয়সী এক সন্তানের পিতা-মাতাকে ৩ লাখ টাকা পুরস্কার দিতে হবে। তাহলে সবাই জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত হবে। তিনি কারো কাছ থেকে এত দিন বাঁশি বাজিয়েও কিছু নেননি। তিনি চান জাতীয় প্রেসকাবে বসে সবার সাথে এক কাপ চা খেতে। এ চা তিনি তখনই খাবেন যখন দেশ সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত হবে। এটি তার তৃতীয় চাওয়া। তার শেষ চাওয়াটি ভারত সরকারের কাছে।   যে ভারত এ দেশের স্বাধীনতা আনতে সহায়তা করেছে সেই দেশ কীভাবে এ দেশের মানুষ হত্যা করে। তিনি ভারতের প্রতি এ দেশের মানুষ হত্যা বন্ধ করার দাবি জানান।

তিনি যে শুধু শহরের ঘুরে ঘুরেই বাঁশি বাজান তা নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বাজান। সম্প্রতি তিনি একটি টিভি চ্যানেলেও লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবারের বিশ্বকাপে বাঁশি বাজানোর। তার সংসার চলে তার ছেলের একটি দোকান আর দুটি বাড়ি ভাড়ার টাকায়।

এই বাঁশিওয়ালার নিজের কোনো মোবাইল নম্বর নেই। যোগাযোগ করতে হলে তার ছেলে জুয়েলের নম্বরে (০১৯১২৩৮৮৩১২) ফোন করতে হবে।

তার যে চারটি চাওয়া আছে সেগুলো পূর্ণ হলেই দেশ স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছুতে পারবে বলে মনে করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। তার বাঁশি সেই স্বপ্নের কথাই বলতে চায়।

বাংলাদেশ সময় ২০২৪, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।