ঢাকা: শিক্ষাব্যবস্থায় ভাইরাস আক্রমণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মো. মোস্তাইম বিল্লাহ মুরাদ।
রোববার বাংলানিউজের ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস-প্রতিকার কোন পথে’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মুরাদ বলেন, আমার ২ ভাগনি (বোনের মেয়ে) এবার এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমি খুশি হলেও চারপাশের কাউকে বলতে পারছি না। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁস। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি আমার ভাগ্নিকে যদি একদিনে একা রুমে বসিয়ে ২০ জন শিক্ষকের প্রহরায় রেখে ২০ সেট প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলা হয়, তাতেও আমার ভাগ্নি গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাবেই। কারণ সে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে আমাদের জেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। সেই মেয়ে এসএসসিতে বোর্ড রেকর্ড করা রেজাল্ট করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। হয়তো নাম্বার বিবেচনায় তাই হবে।
কিন্তু এতো সফলতার পরেও কেন আমি উৎসাহিত নই এই প্রশ্নের জবাব একটাই-
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাইরাস আক্রমন করেছে।
এই ভাইরাসের কিছু উদাহরণও দিয়েছেন তিনি।
বাংলানিউজকে এক ই মেইল বার্তায় মুরাদ বলেন, আমার বাসার সামনের ফটোকপির দোকানে গত ৬ মাসে প্রচুর ভিড় দেখেছি। দেখেছি ফটোকপির ব্যবসা সবচেয়ে ভালো চলে যে কোনো বোর্ড পরীক্ষার সময়। পরীক্ষার আগের দিন রাতের ১০টা পর্যন্তও দেখি এলাকার ছাত্রদের ভিড় লেগে থাকে ওই দোকানে। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের দিন হাতে পেলে এমন হবে না তো কী হবে?
পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি জানান, ফেসবুক একজনের স্ট্যাটাসে এক বন্ধু অন্যবন্ধু বলেছে, দোস্ত আমাদের সময় যদি কেউ আমার বাবার মতো করে পরীক্ষার খাতা দেখত তাহলে আমি নিশ্চিত ‘বি’ এর বিপরীতে এ গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেতাম।
এসময় তিনি ভাইরাস আক্রমনের আরেকটি উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, এবার পিএসসি পরীক্ষার মাঝামাঝিতে আমার আপু (প্রাইমারি স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হেড মাস্টার) আমাকে বলে, তুই ইন্টারনেট থেকে আমাকে আগামী কালের পরীক্ষার প্রশ্নটা সংগ্রহ করে দে। আমার চোখ তো তখনই কপালে উঠেছে। আপা তুমি কি বল এসব? আপু বলল, তুই যা ভাবছিস তা না। আমি শুধু মিলিয়ে দেখতে চাই যে আসলেই আউট হওয়া প্রশ্নের সাথে মিলে কিনা। আমি বললাম যে আপু তোমার সেটাও দেখার দরকার নাই। আপু আমার কথায় সন্তুষ্টি রেখেই চুপ করে গেল।
তিনি আরও উদাহরণ টেনে বলেন, এলাকার এক ভাইকে পরীক্ষার সময় তার ছোট ভাইয়ের জন্য প্রশ্ন সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতে দেখলাম। পরীক্ষার শেষে দেখলাম প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে সরকারের ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। পরে তার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতেই অনেকটা লেজ গুটিয়েই সামনে থেকে কেটে পড়লেন বলা যায়।
এরকম অভিভাবকের অভাব নেই আমাদের সমাজে। আর এরকম আরও শ’খানেক উদাহরণ দেওয়া যাবে।
কিন্তু আসলেই যারা সত্যিই পড়ে ভালো রেজাল্ট করে তারা আমার মতোই চুপ করে থাকে।
সবশেষে তিনি বলেন, জানি আমার এই কথা দায়িত্বশীল কারো কানে যাবে না। তবুও আমি চিৎকার করেই বলতে চাই- এই রকম নিরাপত্তাহীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘৃণা ছাড়া ভালোবাসা যায় না। এই সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৪