ঢাকা, বুধবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২, ০৭ মে ২০২৫, ০৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ দেখছেন ঢাবির আকলিমা

নাগরিক মন্তব্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৬, জুন ১, ২০১৪
‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ দেখছেন ঢাবির আকলিমা

ঢাকা: প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার। এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।



রোববার বাংলানিউজের ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস-প্রতিকার কোন পথে?’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এর চেয়ে ভয়ংকর আর কোনো ষড়যন্ত্র হতে পারে না। প্রশ্নফাঁস এখন একটি প্রকাশ্য বিষয় হয়ে গেছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যত কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আকলিমা বলেন, আমরা দেখেছি পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র পত্রিকায় পাওয়া গেছে। সেই প্রশ্ন দিয়ে পরের দিন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী এটিকে গুজব বলে চালিয়ে দিয়ে বিষয়টি চামাচাপা দিতে চেয়েছেন।

আকলিমা অভিযোগ করেন, পরে যখন ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু মিলে যায় তখন মন্ত্রী ও সচিব তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি লুকোনোর চেষ্টা করেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী প্রায়ই দাবি করেন, আগেও প্রশ্ন ফাঁস হতো, এখনও ফাঁস হয়। এটাকে তারাই প্রথমে সামনে এনেছেন।

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়ে আকলিমা বলেন, জনগণ জানতে চায়, প্রশ্ন ফাঁস যদি আপনারাই সামনে এনে থাকেন তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের কেন সামনে আনতে পারছেন না?

তিনি আরও প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে ‘হুমকি’ দিলে রাত পার না হতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ বছরের পর বছর পার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসে জড়িতদের কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না?

ঢাবির এ শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৮ মে এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া কারণে সে পরীক্ষা বাতিল করা হয়। কিন্তু গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত এর কোনো রহস্য বের করতে পারেনি।

এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া সেসব প্রশ্ন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। ফাঁসকারী নিজের মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত দিয়ে দেয়। সরকার তাদের এদেরও ধরছে না। এতে স্পষ্টতই বোঝা যায়, সত্যিই ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ আছে।

বিভিন্ন সময় প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জানতে পারে, সেবার নরসিংদী কোচিং সেন্টার নামেই একটি প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন ফাঁস করে। ২০১১ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসে ৮-১০ জন সন্দেহভাজনের নামের তালিকা পায়।

২০১৩ সলে প্রাথমিক সমাপনী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসে নারী কর্মচারীসহ একটি সিন্ডিকেটের নাম শনাক্ত করে। এমনকি চলতি বছর মে মাসে একটি পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্রসহ চতুর্থ শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তা বিজি প্রেসে হাতেনাতে ধরা পড়েন।

এতো উৎস থাকার পরও দোষীদের খুঁজে বের করা যাচ্ছে না। আকলিমার দাবি, সরকারের আন্তরিক ইচ্ছার অভাবেই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।

জনগণ সেসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জানতে চায় বলেও মন্তব্য করেন আকলিমা। ।

তিনি দাবি করেন, তদন্ত কমিটি যদি সেসব প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়, আর তারা তাদের গ্রেফতার করতে না পারে তবে এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায় হয়ে থাকবে। আর যদি জড়িতদের নামের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না দিতে পারে, তবে তারাই জড়িত বলে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।