রামপাল, বাগেরহাট: পাখি ও পুলিশের মধ্যে টিকে থাকার যুদ্ধ চলছে রামপাল থানা কমপ্লেক্সে। এই অসম যুদ্ধে একে অপরের মুখোমুখি তারা।
রামপাল থানা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করলেই হাজারো পাখির কিচির-মিচিরে মন ভরে যাবে যে কারোরই। থানার একমাত্র পুকুরের চারপাশের মেহগনি, শিরিষ, খেজুর গাছে বাসা বেঁধেছে শতশত পানকৌড়ি আর বক।
বিনা ঘোষণাতেই পাখিরা এই গাছগুলোকে করেছে তাদের স্থায়ী অভয়াশ্রম। এখানেই তারা বাসা বেঁধে প্রজনন, বাচ্চা পালনের কাজ সারছে নিশ্চিন্তে।
ঘের আর জলা-জঙ্গলে জেলা বাগেরহাট এমনিতেই এক সময় শীতের অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু অবাধে পাখি শিকারে পাখিদের আনাগোনা এক সময় শূন্যের কোটায় নেমে যায়।

সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা রামপালে এমনিতেই বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। গ্রামের মধ্যেও অনেকে দেশি বন্দুক বানায় বলে কথিত আছে।
বর্তমানে আইনের চোখে পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও বন্দুকের ছড়াছড়িতে একেবারে বন্ধ হয়নি পাখি শিকার। তাই উপায়ন্তর না দেখে শতশত পাখি আশ্রয় নিয়েছে থানা কমপ্লেক্সের গাছগুলোতে।
কিন্তু এতে বাধ সাধছে পুলিশ। পাখিদের এই আশ্রয় গ্রহণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে থানা প্রশাসন। পাখি তাড়াতে তারা কয়েকবার কেটেছে গাছের ডাল। কিন্তু তাতেও দমেনি পাখির দল। কেটে ফেলার পরও গাছের অবশিষ্ট ডালেই জড়াজড়ি করে স্থান করে নিয়েছে তারা।

পাখিদের বিরুদ্ধে পুলিশের এ অবস্থান কেন বাংলানিউজের এই প্রশ্নের জবাবে থানার এক এসআই শোনান পাখি-পুলিশের টানাপড়েনের গল্প।
তিনি বলেন, এটি একটি লবণ কবলিত জনপদ। নদী-খাল, টিউবওয়েল সবখানেই লবণের আগ্রাসন। এ পানি কোন কাজেই ব্যবহার করা যায় না। তাই থানার স্টাফসহ এই এলাকার মানুষের একমাত্র অবলম্বন থানার পুকুর। এই পুকুরের পানিতেই চলে সবার রান্না, খাওয়া ও গোসলের কাজ। আর এই পানি নিয়েই পাখির সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছে পুলিশের।
তার ভাষ্যমতে, পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে হাজার হাজার পাখির বাস হওয়ায় পাখিগুলোর বিষ্ঠা পড়ছে পুকুরে। তাছাড়া বক ও পানকৌড়ি পানি নির্ভর প্রজাতি হওয়ায় তারা বেশির ভাগ সময়ই পুকুরের পানিতে সময় কাটায়।

তিনি জানান, এতে পাখির বিষ্ঠা পুকুরের পানি নষ্ট করেছে। পানি হয়ে পড়েছে ব্যবহারের অযোগ্য। পুকুরে নামলেই চুলকানিসহ বিভিন্ন ত্বকের অসুখ দেখা দিচ্ছে। পানি ব্যবহারে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত রোগ। এতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পুলিশের জীবন।
অন্য এক এ এস আই জানান, পাখির অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে কয়েকবার গাছের ডাল কাটা হয়েছে। কিন্তু গাছতো একেবারে কাটা যায়না, মাথায় কিছু ডাল রাখাই লাগে। পাখিরা সেই ডালেই আশ্রয় নিয়েছে।
এতো জায়গা থাকতে পাখিরা থানায় কেন, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, ওরা বুঝতে পেরেছে এটা আইনের জায়গা। এখানে কেউ শিকার করবেনা, ঘাটাবে না।

তাহলে আপানারা ওদের ঘাটাচ্ছেন কেন, জবাবে অন্যএক পুলিশ সদস্য বলেন, ভাই নিজেদের জীবন তো বাঁচে না। এই গরমে গোসল না করে থাকা যায়! এই পুকুরই আমাদের একমাত্র খাওয়ার পানির উৎস। কিন্তু পাখির কারণে সেই উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে।
থানার গেটের শরবত ব্যবসায়ী শরাফত বলেন, আরো অনেক পাখি এখানে ছিল। কিন্তু পুলিশের অত্যাচারে অনেক পাখিই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪