ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

বিশ্বজুড়ে বসন্ত উৎসব

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১
বিশ্বজুড়ে বসন্ত উৎসব

বসন্তকে দেখা হয় নতুন জীবনের বার্তাবাহক হিসেবে। জাতিতে জাতিতে বিভিন্ন ধরনে আয়োজন করা হয় এই উৎসবের।

এই ঋতুভিত্তিক উৎসব একেক দেশে আয়োজন করা হয় একেক সময়। কখনো কখনো আবার একই উৎসব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যায় প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। এমনই কয়েকটি প্রধান ‘বসন্ত উৎসবের’ কথা বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।

নওরোজ
‘নওরোজ’ অর্থ নতুন দিন। প্রাচীন ইরানের উৎসব এটি। বসন্তের প্রথম দিনটিকেই গণ্য করা হয় বছরের প্রথম দিন হিসেবে। ইরানি পঞ্জিকা মতে সাধারণত এই উৎসব আয়োজন করা হয় ২১ মার্চ। এর আগ-পিছুও হয় মাঝে মাঝে।

প্রাচীন গল্পে দেখা যায় ইরানের বাদশাহ জমশেদ এই উৎসবের প্রচলন শুরু করেন। বছরের এই দিনে জমশেদের অধীনস্থরা জড়ো হতো তার সিংহাসনের চারপাশে। ছড়িয়ে দিত মণি-মুক্তা। রাজার শুভকামনা করে জয়ধ্বনি দিত। আর বলত আজ থেকে শুরু হলো নতুন দিন বা ‘নওরোজ’।

প্রায় তিন হাজার বছর ধরে উদযাপিত এই উৎসবের উৎপত্তি ইরানে হলেও ‘নওরোজ’ আজ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের উত্তর-পশ্চিম ও ইউরোপের বলকান অঞ্চলে। ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

জাপানের চেরি ফোটার উৎসব
সেই সপ্তম শতাব্দীর কথা। সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা বসন্তের এমন দিনে বাড়ির বাইরে এসে খোলা হাওয়ায় গা ভাসাতে ভালোবাসতেন। এ সময় পুরো দেশটাই যেন ছেয়ে যায় চেরি ফুলে। প্রকৃতিতে দেখা দেয় অপরূপ রূপময়তা।

জাপানিরা চেরি ফুলকে ‘সাকুরা’ বলে ডাকে। এই উৎসবকে ডাকে ‘হানামি’ বলে। এই গাছ কোরিয়া, চীনসহ অনেক দেশে জন্ম নিলেও জাপানে রয়েছে প্রায় চারশরও বেশি প্রজাতি।

হানামিতে আয়োজন করা হয় নানারকম অনুষ্ঠানের। এতে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছে আধুনিক ভাবনা। জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে সাকুরা জানুয়ারিতেই ফুটতে শুরু করলেও হানামির মূল আয়োজনটা শুরু হয় মার্চ মাস থেকে।

চীনা নতুন বছর
চীনেও বছর শুরু হয় বসন্তের প্রথম দিনে। তাই ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর ভেতর এটি প্রধান। চীনে যেহেতু চান্দ্র মাসের হিসাব, তাই ঋতুর চেয়ে চাঁদের চেহারাটা একটু বেশি প্রাধান্য পায়। তবে নতুন চাঁদের মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এই মোচ্ছব। তারপর টানা পনের দিন চলে মউজ-মাস্তি।

প্রাচীনকাল থেকেই এই উৎসব চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে আয়োজন করা হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন রূপকথা। তবে সব অঞ্চলেই ঘটা করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় ঘরদোর। দূর করে দেওয়ার চেষ্টা চলে পুরোনো জঞ্জাল। কেনা হয় নতুন জামা। শুরু করা হয় নতুন জীবন।

হোলি উৎসব
হোলি উৎসব হলো রঙের উৎসব, হিন্দি ছবি দেখে তা-ই শেখা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের শুরুতে হয় এই উৎসব। তারিখটি নির্ভর করে চাঁদের ওপর। এই বসন্ত উৎসব ভারত ও এর আশপাশের অঞ্চলে উদযাপিত হয়।

ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, একদিন অসুর হিরণ্যকশিপু আক্রমণ করে বসল স্বর্গলোক। অবতার বিষ্ণু নরসিংহের রূপে এসে হত্যা করল এই অপদেবতাকে। রক্ষা পেল স্বর্গ। সেই শুভ দিনটিকে এই অঞ্চলে স্মরণ করা হচ্ছে স্মরণাতীত কাল থেকে। এই বছর হোলি উদযাপন করা হবে ২০ মার্চ।

জল ছিটানো উৎসব
সক্রান বা জল ছিটানো উৎসবে থাইল্যান্ড জেগে ওঠে নতুন চেহারায়। তিন দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হয় ১৩ এপ্রিল। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক মিল। বাংলা ‘সংক্রান্তি’ শব্দটিই শ্যামদেশে ‘সক্রান’।

প্রথা অনুযায়ী, এই উৎসবে জল ছিটানো হয় শরীর ও মনের কালিমা দূর করার বাসনা নিয়ে। জলে ভিজে মানুষগুলো নিজেকে পবিত্র করে নেয়। ধুয়ে ফেলে গেল বছরের তিক্ততা।

এই উৎসবের সঙ্গে যুগে যুগে যোগ হয়েছে বিভিন্ন আচার। তবে নিয়ম করেই যাওয়া হয় মন্দিরে। ধর্মের কাছে, বুদ্ধের ও সংঘের কাছে চাওয়া হয় আশ্রয়। তবে শুধু ধর্মের ভেতরেই আবদ্ধ নেই এই উৎসব। পর্যটনপ্রধান শহরগুলোতে আয়োজন করা হয় অনেক ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময় ২২০০, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad