ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২, ০৮ মে ২০২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ত্রিশালে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের স্মৃতি-বিস্মৃতি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৩৬, মে ২৫, ২০১৪
ত্রিশালে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের স্মৃতি-বিস্মৃতি

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) কাজির শিমলা গ্রাম থেকে ফিরে: কবি নজরুলের শৈশব-কৈশোর স্মৃতি জাগানিয়া ময়মনসিংহের ত্রিশাল। দিন দিন এ উপজেলায় নজরুল স্মৃতি উজ্জ্বল হচ্ছে।

বিদ্রোহী কবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ উপজেলার কাজির শিমলা দারোগা বাড়ির আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র। কিন্তু এ স্মৃতিকেন্দ্রের জরাজীর্ণ দশা স্মরণ করিয়ে দেয় স্মৃতিরা এখানে বিপন্ন।

অনেক স্মৃতি নিদর্শন সংরক্ষণের অভাবে বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু বিস্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে। নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত এ উপজেলার কথা সবার মনে থাকলেও নজরুল জয়ন্তীকে ঘিরে এ স্মৃতিকেন্দ্রের কথা বছরে একবার মনে করেন সবাই। যেন স্মৃতিকেন্দ্রের স্মৃতিকথা বিস্মৃতিতে ঢাকা।

ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ত্রিশাল উপজেলার স্বপ্নপুরীর মতো মিষ্টি গ্রাম কাজীর শিমলা। ১৯১৪ সালে এ গ্রামেই প্রথম পা পড়ে আমৃত্যু সাম্যের জয়গান করা এ কবির। প্রিয় কবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে ২০০৮ সালের ২৫ অগাস্ট নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এ গ্রামেই উদ্বোধন করা হয় নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের দ্বিতল ভবনের।

কিন্তু উদ্বোধনের ৬ বছর পরেও লোকবল সঙ্কট, নজরুল চর্চা ও গবেষণার পরিবেশ না থাকা ও স্মৃতিকেন্দ্রের ভগ্নদশায় ক্রমশ কমছে নজরুল গবেষক, ভক্ত-অনুরাগীদের আনাগোনা।

জানা গেছে, নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রে আছে ১০০ আসনের একটি মিলনায়তন। রয়েছে পাঠাগার কক্ষ। এ কক্ষে রয়েছে নজরুল রচনাবলি, নজরুল বিষয়ক বিভিন্ন লেখকের বই ও নজরুলকে নিয়ে বিভিন্নজনের গবেষণাপত্র সম্বলিত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বই। এখানে আছে নজরুলের গানের ক্যাসেট। স্মৃতিকেন্দ্রে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে নজরুলের ঘুমানোর খাট। রয়েছে অফিস কক্ষ, একটি ডাবল ও সিঙ্গেল কক্ষ।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্মৃতিকেন্দ্রের বাইরে রঙের প্রলেপ উঠে গেছে। ভবনের প্রবেশপথের ও ভেতরে দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ছে। স্মৃতিকেন্দ্রের দু’তলার সিড়ির ডান পাশে, পাঠাগার কক্ষ ও অফিস কক্ষের বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।

আলাপ হয় এ স্মৃতি কেন্দ্রের পাহাড়াদার আজিজুল হকের (৪০) সঙ্গে। তিনি জানান, দ্বিতল ভবনের এ স্মৃতিকেন্দ্রে সাকুল্যে জনবল তিনিসহ ৩ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঝাড়ুদার, মালি ও কেয়ারটেকারের কাজ তাকে একাই করতে হয়।

২০০৩ সাল থেকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করা এ পাহাড়াদার আরো জানান, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের গর্ব। কিন্তু জাতীয় কবির এ স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন-অবহেলার মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

স্থানীয় কাজির শিমলা গ্রামের বাসিন্দা কাজী শাহাদাত (৫০) বলেন,

সরকার অনেক টাকা খরচ করে এ স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এখানে কিছু বই পুস্তক ছাড়া দর্শনার্থী আকৃষ্ট করার মতো কিছুই নেই। ফলে দিন দিন এখানে নজরুল ভক্ত-অনুরাগী ও গবেষকদের আসা-যাওয়া কমছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হুদা বলেন, এ স্মৃতিকেন্দ্রে অতিথিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রচারণা চালানো হলে এখানে সারা বছরই নজরুল ভক্ত-অনুরাগী ও গবেষকদের সমাগম বাড়বে।

কাজির শিমলা দারোগাবাড়ির আঙিনায় এ নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রেই জাতীয় কবির ১১৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২৬ মে বিকেলে আয়োজন করা হয়েছে কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের।

জরাজীর্ণ ভবনের সামনের আঙিনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ চলছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি।

তবে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় রয়েছে ত্রিশালের নজরুল প্রিয় নামাপাড়া বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়ি এলাকার নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রটি। ৩ তলা ভবনের এ স্মৃতিকেন্দ্রে রয়েছে মিলনায়তন ও তৃতীয় তলায় আছে পাঠকক্ষ। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন। তবে এ স্মৃতিকেন্দ্রেও রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কট।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।