মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নিভৃত পল্লী আশাপুরে জেলার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি নিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী ছবিঘর তৈরি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। তিনি জেলার প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার ছবি দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের শোবার ঘর।
মানিকগঞ্জের সবচেয়ে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন টাইগার খেতাব। জেলার সবচে বড় যুদ্ধ গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধের একজন সফল সেনানি ছিলেন তিনি। ওই যুদ্ধে ৮৩জন পাকসেনার প্রায় অর্ধেকই নিহত হয়েছিল লোকমান হোসেনের ব্রাশ ফায়ারে।
ছবিঘরের স্থপতি লোকমান হোসেন জানান, ২০০৮ সালে ছবি সংগ্রহের উদ্যোগ নেন তিনি। পরিচিত সব মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের কাছ থেকে এক-একটি করে ছবি চেয়ে তিনি তার ছবিঘরে জমা করতে থাকেন। অনেকে আগ বাড়িয়ে ছবি দিয়েছেন, আবার অনেকে দেই দিচ্ছি করে অনেক দিন ঘুরিয়েছেন। বিশেষ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়েছে তার। জেলার প্রত্যন্ত অনেক গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন ছবি সংগ্রহের কাজে। পকেটের টাকাও খরচা করেছেন অনেক। তবে এখনো শেষ হয়নি তার ছবি সংগ্রহের কাজ ।
তিনি আরো জানান, নিজের একটুকরো জমিতে তিনি এই ছবিঘর প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেখানে নিজের খরচে একটি চালাঘর তুলবেন। ইতোমধ্যেই নিজের কয়েকটি গাছ কেটে কাঠের ব্যবস্থা করেছেন। কিছু পুরনো টিন আছে আর কিছু টিন কিনতে হবে। কিছু টাকার ব্যবস্থা হলেই তিনি ঘরের কাজ শুরু করতে পারেন।
শত অভাব-অনটনের মাঝেও কোনওদিন কারো কাছে হাত পাতেননি লোকমান হোসেন। সংসার চালাতে নৌকার মাঝি হয়েছেন, মাছের ব্যবসা করেছেন, এমনকি যাত্রাপালায়ও নাম লিখিয়েছেন কিন্তু কোনওদিন কারো কাছে করুণার পাত্র হননি।
দেশের মুক্তিযুদ্ধ, বিশেষ করে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো ভুলে না যায় তাই তাদের জন্যই তার এই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশ সময় ২৩০০, জানুয়ারি ৬, ২০১০