ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

রাতদুপুরে, খাবারের টানে

শরিফুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১১
রাতদুপুরে, খাবারের টানে

পোলাও, কাচ্চি বিরিয়ানি কিংবা তেহেরী। সবই পুরনো ঢাকার সুস্বাদু খাবার।

আর এ খাবার ভোজনরসিকদের কাছে সবসময় প্রিয়। মোঘল আমল থেকে বাঙালিদের রসনা তালিকায় এসব খাবার যুক্ত হয়। এ খাবারের লোভে শাসকগোষ্ঠী ঢাকা ছেড়ে একসময় যেতে চাইতেন না- এমন কথাও লোকমুখে শোনা যায়। তবে বর্তমান সময়ের অনেকেই রাতদুপুরেও ছুটে আসেন। ভিড় করেন পুরনো ঢাকার বিভিন্ন দোকানে। এসব খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঘরে ফেরেন তারা।

রাতের খাবারের আসর মানে নাজিমউদ্দিন রোডের নাজিরাবাজার এলাকা। এই এলাকায় হাজীর বিরিয়ানি, নান্নার শাহী মোরগ পোলাও, হানিফের বিরিয়ানির মতো বিখ্যাত দোকান রয়েছে। এর মধ্যে সারারাত খাবারের ব্যবস্থা রেখে আসর জমজমাট করে রাখে মামুন বিরিয়ানি হাউস। হাজীর বিরিয়ানি এই এলাকার সবচে বিখ্যাত। চাহিদা বেশি হওয়ায় রাত আটটার মধ্যেই বিরিয়ানি শেষ। আর রাত দশটা বাজতেই শেষ হয় হানিফের বিরিয়ানি। মামুন বিরিয়ানির হাউসের ম্যানেজার বলেন, ‘আমাদের এখানে সব শ্রেণীর লোকজন আসে। রাতে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকে। তাই ছাত্র,  শিক্ষক, প্রশাসনের লোকজন থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা এখানে খেতে আসেন। এজন্য আমরা সারারাত খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। ’

তিনি বলেন, ‘রাতে এখানে আশপাশের জুতা স্যান্ডেলের কারখানার শ্রমিকদের দেখা যায়। তারা রাত দুটা-তিনটা পর্যন্ত কাজ করে দল বেঁধে খেতে আসে। কোথাও খাবার না থাকায় সারারাত আমাদের খাবারের চাহিদা থাকে অনেক। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের তেহারি ৩৫ থেকে ৪০, কাচ্চি বিরিয়ানি ২৫ থেকে ৩০ কেজি আর মোরগ পোলাও চলে ৮০ থেকে ৯০ প্লেট। বিশেষ দিনগুলোতে খাবারের চাহিদা থাকে অনেক বেশি । সে কারণে বসার জায়গা না পেয়ে লোকজনকে বাইরে দাঁড়িয়ে খেতে হয়। ’

চাঁনখারপুল এলাকা জমজমাট থাকে রাত নয়টা থেকে বারটা পর্যন্ত। এখানের নান্নার শাহী মোরগ পোলাও, মামুন বিরিয়ানি হাউস, নিরব হোটেলের মতো বিখ্যাত দোকানগুলো থাকে লোকে লোকারণ্য। নান্নার শাহী মোরগ পোলাও দোকানের ম্যানেজার মোশারফ বলেন, ‘মোরগ পোলাও বলতে সবাই নান্নার দোকানকেই বোঝে। আমাদের অন্য খাবার থেকে এটাই বেশি চলে। অফিসফেরত যাত্রীরা খাবার খেতে অপেক্ষা করেন রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা-দশটা পর্যন্ত। ছাত্ররা দোকানে ভিড় করে নয়টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত। ’

রাতে নান্নার শাহী মোরগ পোলাও খেতে আসা এআইইউবির বিবিএর শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা একত্র হয়ে বিশেষ কোনো দিবসকে সামনে রেখে এখানে খেতে আসি। সাধারণত এই দিনগুলো হয়ে থাকে জন্মদিন অথবা জাতীয় কোনো দিবস। এছাড়া মন চাইলে মাঝে মাঝে একাও চলে আসি। ’

নান্নার শাহী মোরগ পোলাওয়ের কারণে বেগমবাজারের বেচারাম দেউড়িও বিখ্যাত। এটাই নান্নার প্রধান দোকান। তবে রাত দশটার পর এখানে ভিড় থাকে না।

হোটেল নিরব সবসময় থাকে সরব। এই হোটেল বিভিন্ন রকম ভর্তার জন্য বিখ্যাত। তবে রাতদুপুরে সবার আকর্ষণের তালিকায় থাকে তেহারি, কাচ্চি বিরিয়ানি ও মোরগ পোলাও।

এছাড়া আছে মিলব্যারাক, আলমগঞ্জ (গেন্ডারিয়া থানার পাশে) এলাকা। এখানের আসর শুরু হয় ভাই ভাই, বুদ্ধু ও অলি বিরিয়ানি হাউসকে কেন্দ্র করে। তবে আসর বেশি জমজমাট থাকে ভাই ভাই হাউসে। এ হাউসের স্বত্বাধিকারী মিনার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের খাবার সবসময় তরতাজা থাকে। এছাড়া সীমিত লাভে বিক্রি করায় সবার কাছে তা আকর্ষণীয়। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা আছেন, যারা প্রতিদিন রাতে কাজ থেকে ফেরার পথে এখান থেকে বিরিয়ানি নিয়ে ফেরেন। ’

রাতে খাবার খেতে এলে ওয়ারীর হেয়ার স্ট্রিটের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন-চারজনের একটা দল আছে। যারা মাঝে মাঝেই মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। পুরান ঢাকার তেহারী, বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও আমাদের খুব প্রিয়। ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝে এখানে চলে আসি। দিনের চেয়ে রাতেই মজা বেশি পাই। তাই রাতেই বেশি আসা হয়। ’

পুরনো ঢাকার বিভিন্ন দোকানভেদে প্রতিটি আইটেমের দাম ভিন্ন। মোরগ পোলাও ৭০ থেকে ৮৫  টাকা, খাশির কাচ্চি ৬৫ থেকে ৮৫ টাকা, খাশির বিরিয়ানি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং গরুর তেহারি ৩৫ থেকে  ৪০ টাকা।

বাংলাদেশ সময় ২২৫০, জানুয়ারি ৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।