ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ইতিহাসের সেরা ১০ উদ্ভাবন

নুসরাত জাহান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০
ইতিহাসের সেরা ১০ উদ্ভাবন

যখনই কিছু উদ্ভাবিত হয় তখন কিছুটা হলেও মানুষের জীবনে তা প্রভাব রাখে। আর এটাই আমাদেরকে আর সব প্রাণী থেকে আলাদা করেছে।

প্রতিদিনের ছোট ছোট উদ্ভাবনই একদিন বড় আকার ধারণ করে এবং আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

তবে সভ্যতার ইতিহাসে এমন কিছু উদ্ভাবন রয়েছে, যা মানবসভ্যতাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাসের শুরু থেকে এটির তালিকা করলে তা নিঃসন্দেহে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে টপটেনজ ডট নেট মানব-ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উদ্ভাবনের একটি তালিকা করেছে। এগুলো একই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এবং বিতর্কিত। কিন্তু কিছু তালিকার সঙ্গে যে আপনি একমত হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।  

আসুন জেনে নেওয়া যাক ধারাবাহিকভাবে :

১. ভাষা

 খুবই যুক্তিসঙ্গত কারণে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটিই এক নম্বর উদ্ভাবন, এমনকি বিভিন্ন কারণে এটা মানব সভ্যতার সংজ্ঞাও। আমাদের কথা বলা, লেখার ক্ষমতা এবং সর্বোপরি আমাদের একটি সত্যিকার সাংস্কৃতিক পরিচয় দেওয়ার জন্য ভাষার অবদান অসামান্য। সব প্রাণীই কোনও না কোনওভাবে যোগাযোগ করে এবং এদের মধ্যে অনেকে আবার পুরোপুরিই স্পর্শকতার। কিন্তু মনুষ্যসমাজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী। ভাষার প্রকৃত বয়স সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও এটা এতটাই পুরাতন যে আমাদের মস্তিষ্ক এর সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারেও হয়ে উঠেছে দক্ষ। ভাষা ছাড়া কোনও প্রযুক্তিই গড়ে উঠতে পারে না এবং ভাষা ছাড়া কোনও সভ্যতারই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

২. রান্না

আগুনকে মানুব-উদ্ভাবনের মধ্যে যুক্ত করা হলেও আদতে মানুষ তা উদ্ভাবন করেনি। বরং আগুন পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম থেকেই ছিল এবং বলা ভালো যে মানুষ তা আবিষ্কার করেছে মাত্র এবং আবিষ্কার করেছে আগুনের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার, যার মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি। এভাবে আগুন খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সুবিধা দিয়েছে। আর এভাবেই খাদ্য আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে এবং সভ্যতার বিকাশে সাহায্য করেছে। আর বর্তমানে রান্না শুধু খাবার প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা পরিণত হয়েছে শিল্পে ।

৩. যন্ত্রপাতি

হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতিকে আমরা বলতে পারি ‘প্রথম প্রযুক্তি’। এটা এমন একটি জিনিস যা দিয়ে আমরা কোনও কিছু নির্মাণ, পরিবর্তন, মেরামত এবং ধ্বংস করতে পারি। এছাড়া যে কোনও প্রযুক্তি তৈরি করতে প্রথম যে জিনিসটির  প্রয়োজন হবে তা হচ্ছে হাতিয়ার।  

৪. পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা

মানুষকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রাচীন রোমানদের কৃতিত্ব দিতেই হবে (তবে ধারণা করা হয় এ ব্যবস্থাটি আরো প্রাচীন। মহেঞ্জোদারো এবং প্রাচীন চীনা সভ্যতায় এর কিছু নিদর্শনও পাওয়া গেছে)। তবে এ ব্যবস্থাটি পুরোপুরি জনপ্রিয় হয় বিশ শতকে। এখনকার সভ্য ও সম্পন্ন মানুষ সেই সময়ের কথা এখন হয়তো মনেই করতে পারবে না যখন তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যেতে হতো। এর পথ ধরে আরও এসেছে শাওয়ার, টয়লেট পেপার ও সিঙ্ক যা আমাদের ঘরে থাকতে সাহায্য করেছে।

৫. মুদ্রণযন্ত্র

১৪৩৯ সালে গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র উদ্ভাবন করে এ জগতে বিপ্লব ঘটানোর আগে পৃথিবীর যাবতীয় কিছু হাতেই লেখা হতো। আর কোনো কিছু লেখাটা শুধু সময়সাপেক্ষ আর জটিল ব্যাপারই ছিল না, বরং অনেক ব্যয়বহুলও ছিল। তাই তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ ও চিঠিপত্র এবং সাহিত্য, ধর্ম ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা বা গুটিকয়েক ব্যক্তিগত নোট ছাড়া আর তেমন কিছু লেখা হতো না। কিন্তু মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবন পুরো পরিস্থিতিকেই বদলে দেয়। কেননা এর আবিষ্কার ও ব্যবহারে জ্ঞানের সব শাখার ক্রম-উন্নতি ও বিস্তার ঘটে খুব সময়ে এবং অবশ্যই আগের তুলনায় অনেক কম খরচ ও পরিশ্রমে।

৬. চেতনানাশক

চিকিৎসাবিজ্ঞানের এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্ভাবন, যা মূলত খুব কার্যকর এবং নিরাপদভাবে ব্যথার অনুভূতি নষ্ট করে দিতে সাহায্য করে। এটি বর্তমানে আধুনিক সব অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর আগে যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিই ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এমনকি ব্যথা কমানোর উপায় ছিল আরও যন্ত্রণাদায়ক। আর এখন এমন চেতনানাশক উদ্ভাবিত হয়েছে যা আপনাকে প্রশান্তিদায়ক ঘুমের জগতে নিয়ে যাবে এবং অস্ত্রোপচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি কোনও ব্যথাই অনুুভব করবেন না।

৭. অ্যান্টিবায়োটিক

এমন এক সময় ছিল যখন যে কোনও ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব, রোগের সংক্রমণ বা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় মানুষের খুব কমই জানা ছিল। কোনও ধরনের রোগের প্রতিক্রিয়া, ফলাফল দেখার জন্য মানুষকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হতো এবং খারাপ কিছু না হওয়ার জন্য ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে থাকতে হতো। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য একটু আঘাতও ভয়াবহ আকার ধারণ করত, এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়াত। কিন্তু মানুষের কাছে ছিল না এর প্রতিকারের কোনো উপায়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষ এখন সহজেই অধিকাংশ প্রাণঘাতী অনেক ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে পেয়েছে।

৮. জন্মনিয়ন্ত্রক

যদিও হাজার বছর আগে থেকেই অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ রোধের উপায় মানুষের জানা ছিল কিন্তু মানুষ বিশ্বস্ত জন্মনিয়ন্ত্রকের সন্ধান পেয়েছে মাত্র শত বছর আগে। আর এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় মাত্র ৫০ বছর আগে। এর ফলে নারীরা আরও সুুনির্দিষ্ট ও স্বস্তিদায়ক জীবনের সন্ধান পান এবং একই সঙ্গে এর কারণে তারা এমন সব কাজের উদ্যোগ গ্রহণে সাহসী হন, যা কিছুদিন আগেও চিন্তা করা যেত না।

৯. ইন্টারনেট

উদ্ভাবনের কিছু সময়ের মধ্যেই ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং এখনও তা বেড়েই চলেছে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালে গুটিকয়েক পৃথক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে তা সারা বিশ্বের সব তথ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী এমন এক নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে, যার সাহায্যে চোখের নিমিষে আমরা পৌঁছে যাই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

১০. অ্যালকোহল

খুব কম হলেও প্রায় ১২ হাজার বছর আগে মানুষ পানীয় পান করা শুরু করে। তাই একে মানুষের উদ্ভাবন বলে বিবেচনা করা হলেও এর আরও আগে থেকেই প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফলের রসে অ্যালকোহলজাতীয় উপাদান থাকায় তা পান করে মাতাল হয়েছে অনেক প্রাণী। অ্যালকোহল বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হলেও পানীয়র ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুরা ও বিয়ারের মধ্যে থাকা অ্যালকোহল দেহের অণুজীব ধ্বংসে সাহায্য করে।  

বাংলাদেশ সময় ১৭২৫, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।