ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

শতবর্ষে দেশের প্রাচীন জাদুঘর

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১০
শতবর্ষে দেশের প্রাচীন জাদুঘর

শত বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর, বরেন্দ্র জাদুঘর। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রতœতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা এটি।

 

রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁ হাসপাতালের সামনে প্রাচীন এ সংগ্রহশালার ভবন অবস্থিত। এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯১০ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৩ সালে,  আর তা ওই বছরের ১৩ নভেম্বর  উদ্বোধন করেন বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল।

আসুন এই লেখাটির ভেতর দিয়ে জাদুঘরের প্রতিটি ঘরে ঘুরে আসি :

জাদুঘরে ঢুকতে কোনও প্রবেশ মূল্য লাগে না। ঢোকার পর প্রথম কক্ষটিতে কোনও নিদর্শন নেই, আছে একটি খাতা। তাতে প্রবেশকারীর নাম এবং ঠিকানা লিখতে হয়।

ডানের কক্ষটি থেকে শুরু হয় মহেনজোদারো এবং সিন্ধু সভ্যতা থেকে সংগৃহীত অসংখ্য প্রতœতত্ত্ব এবং হাজারো পাথরের মূর্তির প্রদর্শনী। এখানে আছে একাদশ শতকে নির্মিত সূর্যমূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, ভৈরবের মাথা, দুর্গামহিষ, অর্ধনারী-শিবের মূর্তি এবং গঙ্গামূর্তি।

বামের কক্ষ থেকে শুরু হয় শিলালিপি, প্রাচীন মুদ্রা এবং পুঁথির বিশাল ভা-ারের প্রদর্শনী। প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহের দিক দিয়ে এ জাদুঘর অনেক বেশি সমৃদ্ধ। এখানে মোগল আমলের রৌপ্যমুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্যমুদ্রা সংরক্ষিত আছে।
 

ডান বাম দেখে শেষ হয়ে যায় জাদুঘরের প্রথম ভবন। তারপর উঠোনের মতো খালি জায়গা যার চারপাশজুড়ে আছে বিভিন্ন যুগের মূর্তি আর ভাস্কর্য। এরপর আরেকটি ভবন। এতে আছে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক বিভিন্ন নিদর্শন। আছে ঐতিহ্যবাহী সব বাদ্যযন্ত্রের  সমাহার। তাছাড়া আছে প্রাজ্ঞা পারমিতা পুঁথিচিত্র থেকে মুঘল যুগের বিভিন্ন মিনিয়েচার এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদদৌলার অলংকৃত চিত্র।

জাদুঘরে পুঁথির সংগ্রহ প্রায় পাঁচ হাজার। এর মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত, বাকিগুলো বাংলা। আরো আছে পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পর্যন্ত অঙ্কিত চিত্রকর্ম।

সব মিলিয়ে বরেন্দ্র জাদুঘরের বর্তমান সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। মাত্র ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কালো পাথরের গঙ্গামূর্তি। এই অন্বেষন শুরুটা হয়েছিল বগুড়া জেলার সঞ্জপুরসহ রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানের  পুরাতাত্ত্বিক অভিযানের মাধ্যমে। ১৯১০ সালে এই অভিযান শুরু করেছিল ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’।

সমিতি প্রতিষ্ঠার আগে বাংলা অঞ্চলের প্রতœ নিদর্শন এবং ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ১৯০৮ সালে এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় পশ্চিম বাংলার কাশিমবাজারে। তারপর শুরু হয় তাকে সংগঠিত করার চেষ্টা। এর ফলস্বরূপ দ্বিতীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদরি শরৎকুমার রায়, ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ। তাদের উদ্যোগেই তৈরি হয় বরেন্দ্র জাদুঘর।

জাদুঘরের নিজস্ব একটি লাইব্রেরি এবং সমৃদ্ধ প্রকাশনা আছে। প্রকাশনার মধ্যে ‘তারাতন্ত্রম’, ‘ধাতু প্রদীপ’ (১৯১৯), ‘অলংকার কৌস্তুভ’ (১৯২৬) উল্লেখযোগ্য।

১৯৪৭ সালের পর জাদুঘর দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে। পরবর্তী সময়ে এর রক্ষা ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বর্তমানে জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে।

বাংলাদেশ সময় ১৭২৫, ডিসেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।