ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

নাইব উদ্দিন আহমেদ ও নওয়াজেশ আহমেদ স্মরণ

মানিকগঞ্জের পারিলে গুণীদের মিলনমেলা

আশরাফুল আলম লিটন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০
মানিকগঞ্জের পারিলে গুণীদের মিলনমেলা

২৫ ডিসেম্বর বহু গুণী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল ‘জহির মঞ্জিল’। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার নিভৃত পল্লী পারিলের দুই কৃতী সন্তান আলোকচিত্রী, মুক্তিযুদ্ধের চিত্রধারক প্রয়াত নাইব উদ্দিন আহমেদ এবং বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রকৃতিবিদ ও আলোকচিত্রী প্রয়াত ড. নওয়াজেশ আহমেদের পৈতৃক নিবাস এই জহির মঞ্জিল।

প্রতি বছরের এ দিনটিতে এখানে সমাগম হয় দেশের বিখ্যাত লেখক, কবি, সাংবাদিক, অভিনেতাসহ বিশিষ্টজনদের। শত শত মানুষের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে পুরো গ্রামটি। কিন্তু এ বছর সবার সাথে কোলাহলে মেতে উঠতে পারেননি নওয়াজেশ আহমেদ এবং নাইব উদ্দিন আহমেদ। গত বছরের নভেম্বর মাসে নওয়াজেশ আহমেদ এবং  ডিসেম্বর মাসে নাইব উদ্দিন আহমেদ চিরবিদায় নেন।

স্বজনরা সবাই থাকতেন ঢাকায়। তাই বড়দিনের ছুটির এই দিনে আত্মীয়স্বজন এবং পরে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দুই সহোদরের উদ্যোগে ২০০৬ সালে নিজেদের শেকড়ে এই মিলনমেলার শুরু। এই মিলনমেলায় সবাই খুব আনন্দ করে, খেয়েদেয়ে, নেচে গেয়ে কাটিয়ে দিতেন দিনটি। আজ সবাই এসেছেন, আনন্দও হচ্ছে কিন্তু সবার মাঝে থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই দুই সহোদরের শূন্যতা অনুভব করলেন সবাই। কেউ কেউ স্মৃতিচারণও করলেন। তাদের দুই সহোদরের স্মরণে এই উৎসব আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এমনটিই জানালেন নাইব উদ্দিন আহমেদের সন্তান গ্রামীণফোনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার নওফেল আহমেদ পান্থ।
বাড়িটিকে সাজানো হয়েছিল নানান রঙে। সকাল থেকেই একে একে আসতে শুরু করেন গুণীজনরা। তারপর আস্তে আস্তে একসময় পুরো বাড়িটি ভরে যায়। আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বরণ করা হয় তাদের। শীতের আমেজে সকাল থেকেই খেজুরের রস, পিঠা, পায়েশ, মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় সবাইকে। তারপর নাচে আর গানে কাটতে থাকে অনেক সময়। দুপুরের খাবার পরিবেশনের পর শুরু হয় স্মৃতিচারণ।

স্মৃতিচারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, নওয়াজেশ ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিল। ওর সাথে আমি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। প্রথমবার যখন ওদের বাড়িতে এসেছিলাম তখন ছিল বর্ষাকাল। গাবতলী থেকে ট্রলারে করে এসেছিলাম। প্রতি বছর এই দিনে অনেক আনন্দ হয়। এ বছর সবকিছুর মাঝেও একটা শূন্যতা বিরাজ করছে।   নাইব ভাই ও নওয়াজেশকে খুব মনে পড়ছে আজ।

বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, নাইব উদ্দিন অবসরে যাবার পর গ্রামেই অবস্থান করতেন। গোটা গ্রামেই তিনি সাংস্কৃতিক জাগরণের জোয়ার এনেছিলেন। সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমে তিনি একটি অসম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তার ছবিতে সবসময় গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি দেখা যেত। তিনি এলাকায় নৌকা বাইচ, ঘুড়ি উড়ানো উৎসব, যাত্রা, নাটক, মেলা সহ বিভিন্ন কাজের উদ্যোক্তা ছিলেন।

শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার বলেন, নাইব উদ্দিন খুব উঁচু মানের একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি শ্রীলংকা, ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে ছবি তোলার জন্য  ঘুরেছেন। পেয়েছেন আর্ন্তজাতিক সম্মাননা। তাই প্রতি বছর যত কাজই থাকত না কেন, তার ডাকে আমরা সবাই ছুটে আসতাম।

এই মিলনমেলায় অন্যান্যের মধ্যে যোগ দেন  যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব আহমেদ, নাট্যকার আলী যাকের, মাসুদ আলী খান, বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান, লেখক ও সাংবাদিক বেবী মওদুদ, লেখিকা  হোসনে আরাসহ অনেকে।

বাংলাদেশ সময় ২২১৫, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।