ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

অতিথি পাখিতে মুখর জাবি ক্যাম্পাস

এম. ওলি, জাবি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০
অতিথি পাখিতে মুখর জাবি ক্যাম্পাস

আবার অতিথি পাখিতে মুখর হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। একটু দেরিতে হলেও প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর পাখপাখালি ও জীবজন্তুর অভয়ারণ্য এ ক্যাম্পাসে।

সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে এ অতিথিদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল পদ্মের চাদরে ঢাকা লেকগুলো হয়ে উঠেছে ব্যঞ্জনাময়। তাদের কলতান আর ভোরের শিশিরসিক্ত লাল সিরামিকের সবুজ ক্যাম্পাস পাখিপ্রেমীদের করে তুলছে চঞ্চল।

জাবি ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। তবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হলসংলগ্ন দুটি লেকে অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি থাকে। অতিথি পাখিরা এ লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দণি এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের  যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাবি ক্যাম্পাস অন্যতম। এ দেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্র“য়ারি-এপ্রিল এই তিনটি পর্যায়ে অতিথি পাখিরা আসে। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা বাংলাদেশে আসে। আবার মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

তবে জাবিতে এবার পাখি এসেছে একটু দেরিতে। এর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের লেকগুলো অক্টোবর মাসে পরিষ্কার করার লিখিত নিয়ম থাকলেও প্রশাসন এবার লেকগুলো নভেস্বর মাসে পরিষ্কার করেছে। ফলে পাখির খাবার ও পাখির বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে পাখি আসতে দেরি হয়েছে। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জানায়, মূলত দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় বা শুকনা স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁসজাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। মূলত এরাই সবার নজরে  আসে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা  ও কামপাখি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, বামুনিয়া হাঁস, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি পাখিও এসেছে। এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে আসে। পাখি সংরণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ প্রতি বছর ক্যাম্পাসে আয়োজন করে ‘পাখিমেলা’।

তবে ক্যাম্পাসে আগত পাখির প্রজাতি ও সংখ্যা প্রতি বছর কমছে। আগে এখানে ৪৫-৫০ প্রজাতির পাখি এলেও গত কয়েক বছর ধরে এ হার কমছে। ক্যাম্পাসে আগত পাখিরা খাদ্যের সন্ধানে পার্শ্ববর্তী বংশাই নদী ও স্থানীয় খালে বিচরণ করে। তখন স্থানীয় লোকজনের হাতে শিকার ও উত্ত্যক্তের সম্মুখীন হয়। ফলে বিদেশি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে দেশি-বিদেশি পাখি মিলিয়ে ১৩১ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘অতিথি পাখি আমাদের সম্পদ। এদের রা করা আমাদের দায়িত্ব। যেহেতু জাবি ক্যাম্পাস অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত, সেহেতু প্রশাসন অতিথি পাখির প্রতি একটু নজর দিলে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে। ’

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবেশ বিপর্যয়, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, এগ্রো-ক্যামিকাল প্রয়োগ, খাদ্য সংকট ও পাখির উপযুক্ত পরিবেশ ধ্বংসের ফলে বাংলাদেশে শীতকালীন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। শিকারিদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার পাখি। ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে কয়েক প্রজাতির পাখি। পাখি নিধন  রোধে আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।

তবে পাখি এবং পাখিপ্রেমীদের জন্য একেবারেই ব্যতিক্রম এই ক্যাম্পাস। তারপরও পর্যবেকরা মনে করছেন, জাবি ক্যাম্পাসে আগত অতিথি পাখির প্রজাতি ও পরিমাণ প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের বাইরের পরিবেশ যথাযথ ও পাখিবান্ধব না থাকার কারণেই এমন ঘটছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে জলাশয়গুলোর তীর থেকে পাখির অবস্থান অনেকটা দূরে থাকায় দর্শনার্থীদের পাখির দৃশ্য অবলোকন করতে একটু বেগই পেতে হয়। তবে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের দাবি উঠলেও সেটা আর গড়ে উঠেনি।

বাংলাদেশ সময় ২২৪৫, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।