ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

শহীদের তৃতীয় প্রজন্ম কাঁদলেন কাঁদালেন: দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০
শহীদের তৃতীয় প্রজন্ম কাঁদলেন কাঁদালেন: দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার

‘আন্টি আমি হৃদি। আমি শহীদ কাজী শামসুল হকের নাতি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠানে কখন যাবেন। আমি আমার দাদার হত্যার বিচার চাইতে যাব। ৪০ বছরেও আমি দাদার হত্যার বিচার হয়নি। ’

সবাই যেন স্থির হয়ে বসে। অনুষ্ঠানে আমার পাশে বসেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। উপস্থাপন মঞ্চে।

উপস্থাপক মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে এভাবেই শুরু করেন।

এতটুকুন বলতেই উপস্থাপকের চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। পুরো অনুষ্ঠানের দৃশ্য যেন পাল্টে গেল মুহূর্তে। কথা বলতে পারছিলেন না উপস্থাপক। চারদিকে পিনপতন নীরবতা।

দর্শকসারিতে বসা মফিদুল হক চশমা খুলে চোখ মুছছিলেন।

দুঃখ আর ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ছোট্ট হৃদিকে কী বলব? দীর্ঘ ৪০ বছরে যে আমি আমার বাবার হত্যার বিচার পাইনি। হৃদিকে কীভাবে আমি আশার কথা শোনাব?

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা। নিজে কাঁদলেন। কাঁদালেন সবাইকে।

১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজন করে শহীদ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম নিয়ে এই অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শহীদ শফিকুল আনোয়ারের নাতনি আমানা সিফাত প্রিয়াঙ্কা, শহীদ মধুসূদন দের (মধুদা) নাতনী অপরাজিতা রায় এবং শহীদ কাজী শামসুল হকের নাতি কাজী শামস মহসীনসহ বেশ কিছু শহীদ পরিবারের নতুন প্রজন্ম।

তারা কেউ দেখেননি মুক্তিযুদ্ধে তার পরিবারের শহীদ সদস্যকে।

আমানা সিফাত প্রিয়াঙ্কা বললেন, ‘আমার নানাকে ওরা নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি পাকিস্তান এয়ার লাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন দেশের জন্য কাজ করবেন। কিন্তু সেই সুযোগ দেয়নি হানাদাররা। ’

প্রিয়াঙ্কা আর কথা বলতে পারছিলেন না। পুরো অনুষ্ঠান যেন আবারও কেঁদে ওঠে সিফাতের সঙ্গে।

আমরা শহীদ পরিবার কোনও আর্থিক অনুদান চাই না। চাই যুদ্ধাপরাধের বিচার। আমরা কোনও যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে আর দেশের জাতীয় পতাকা দেখতে চাই না।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশকে পবিত্র করতে হবে। জাতি আর কতদিন এই দায় বয়ে যাবে? তা না হলে এই দুঃখ আর ক্ষোভ প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে চলে যাবে। আমি আর আমার বাবার চোখে পানি দেখতে চাই না। ’  ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শহীদ কাজী শামসুল হকের নাতি কাজী শামস মহসীন।

মাত্র ১১ বছরের শামস এও বলছিলেন, যুদ্ধাপরাধীরা যেন আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে তাও খেয়াল রাখতে হবে।

শহীদ মধুসূদনের নাতনি অপরাজিতা রায়ও বলছিলেন একই কথা। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি নয়। আমরা বিচার চাই। আর কাঁদতে চাই না।

হানাদাররা শুধু অপরাজিতার নানাকে হত্যা করেনি। তার মাকেও আহত করে।
 
অপরাজিতা বলছিলেন, ‘আমি আমার নানার জন্য গর্ববোধ করি। কিন্তু কষ্ট হয়, যখন দেখি স্বাধীন দেশে রাজাকাররা বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। ’ 

মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মের কথাগুলো শুনে অনেকের চোখেই পানি জমে যায়। শহীদ পরিবারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিচার চাইলেন। কাঁদলেন বিচার চেয়ে। কাঁদালেন সবাইকে। এমন অনুষ্ঠানে কে চোখে পানি ধরে রাখতে পারে!  

বাংলাদেশ সময় ১১৩৫ ঘণ্টা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।