ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

দেশের একমাত্র আদিবাসী বীর বিক্রম

এস বাসু দাশ, বান্দরবান প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১০
দেশের একমাত্র আদিবাসী বীর বিক্রম

দেশের এক বীর সন্তান ইউ কে চিং। দেশের আদিবাসী বীরদের মধ্যে তিনিই হলেন বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলায় একমাত্র বীরবিক্রম উপাধি পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা।



তাঁর অসামান্য অবদানের কথা এসে যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতা উল্টালেই। যদিও অভাব-অনটন এখন তার নিত্য সঙ্গী। চিন্তিত তার বাকি জীবন ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২৫ মার্চ ইপিআরের নায়েক হিসেবে তিনি রংপুর জেলার হাতিবান্ধা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে রংপুর ৬ নম্বর সেক্টরে মেজর বাশারের নেতৃত্বে ৯ বাঙালি ইপিআর সৈনিককে নিয়ে পাটগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন। পরাধীনতার শেকল থেকে দেশকে মুক্ত করতে বিওপিতে কর্মরত এক বিহারি ও ২ পাঞ্জাবিকে হত্যা করেন এবং নয় মাস যুদ্ধ করে দেশকে শত্র“মুক্ত করেন।

স্বাধীনতার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

বীরবিক্রম ইউ কে চিং বলেন, অভাব তার নিত্যসঙ্গী হলেও তার ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দেননি কোনওদিন। কারো কাছে হাত পাতেননি। এখন এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে তার বেশ কষ্ট হয়। ছেলেমেয়েরা সাঙ্গুর চরে শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় করে তা দিয়েই প্রতিদিনের আহারের জোগান হচ্ছে।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাংগু নদীর তীর ঘেঁষে পাহাড়ের পাদদেশে লাংগিপাড়ায় এক জীর্ণশীর্ণ ঘরে পরিবার নিয়ে বাস করতেন ইউ কে চিং। পরে বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের প থেকে পার্বত্যাঞ্চলের একমাত্র বীর বিক্রম ইউ কে চিং-এর বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। করা হয় একটি সড়কের নামকরণ। জনতা ব্যাংক দেশের একমাত্র আদিবাসী বীর বিক্রম ইউ কে চিংয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৩ অক্টোবর তার হাতে দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেয় তারা। এর বাইরে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা পেলেও তেমন কোনও আর্থিক সহায়তা পাননি তিনি।
 
এরপরও ৭৬ বছর বয়সী এই বীর বলেন, দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করে আমি মহাখুশি, একটি দেশ পেয়েছি, একটি নতুন লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।

তবে স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবে শুধু আদিবাসী হবার কারণে নজরের বাইরে থেকে যান পাহাড়বাসী এই বীর সেনানি। ফলে দেশের অন্য বীরবিক্রম উপাধিধারীদের মতো তার সম্মান এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩৫৫, ডিসেম্বর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।