নদীর স্রোতে পাল তোলা নৌকার ছবি, সাথে মাঝির পরিশ্রমী পেশি। নদীর পাশে কাশফুল, বিশাল আকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধ তার ছবির বিষয়।
জীবনমঞ্চ থেকে নাইব উদ্দিন আহমেদ ও নওয়াজেশ আহমদ বিদায় নেন এক বছর আগে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে। এ দুই গুণী ভাইয়ের স্মরণে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ৪ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এক স্মরণানুষ্ঠান আয়োজন করে।
বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পচর্চার পথিকৃৎ দুই ভাইয়ের জীবন ও কর্ম সবার জন্য হয়ে আছে বিপুল প্রেরণাসঞ্চারী ও আগামীর পথচলার চেতনা। চল্লিশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় অনালোকিত এক সমাজে এ দুই নবীন আগ্রহী হয়েছিলেন আলোকচিত্রচর্চায় এবং ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন জীবন ও প্রকৃতি। জীবনভর তাঁরা সেই সাধনা করে গেছেন এবং নিষ্ঠাবান শিল্পচর্চা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন পরবর্তী প্রজন্মকে। বিশাল হৃদয়ের অধিকারী দুই ভাই সব শিল্পীজনকে বরণ করেছিলেন গভীর মমতা নিয়ে এবং মানিকগঞ্জের পারিল গ্রামের পৈতৃক গৃহকে রূপান্তর করেছিলেন সর্বজনীন শিল্পতীর্থে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্যামেরায়ই আলো ঢোকে, খুব কম ক্যামেরায় ছবি ঢোকে। এই দুই ভাইয়ের ক্যামেরায় ছবি ঢুকেছিল। ’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন ‘ক্যামেরায় ভালো টেকনোলজি ব্যবহার করে ছবি তোলা যায়। তবে ভালো ছবি হয়ে উঠে মানুষ আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে। তাদের দু ভাইয়ের তা ছিল। ’
নাট্যজন আলী যাকের বলেন, ‘দুই জন ছিলেন দু প্রকৃতির। নওয়াজেশ আহমদ ছিলেন খুব খোলামেলা এবং আড্ডাবাজ প্রকৃতির। আর বড়জন নাইব উদ্দিন আহমদ ছিলেন খুব অল্প কথার মানুষ এবং স্বভাবে অন্তর্মুখী। তিনি আমার ছবি তোলা দেখে সে সময়ের প্রায় ২০ লাখ টাকার একটি ক্যামেরা উপহার দিয়েছিলেন। নওয়াজেশ ভাইয়ের সাথে একসাথে কাজ করেছি। তিনি ছিলেন খুব গোছানো মানুষ। বেশভূষা ও চলাফেরায় ছিলেন ইউরোপিয়ান কিন্তু চেতনায় ছিলেন পুরো বাঙালি।
সংস্কৃতিকর্মী মফিদুল হক বলেন, ‘এ দুই ভাই যখন আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন তখন এ সস্পর্কে অনেকের ধারণাই ছিলো না। নওয়াজেশ ভাই প্রকৃতি নিয়ে যেসব বই এবং ছবির কাজ করেছেন তা আর কারো পক্ষে করা সম্ভব হবে কি না আমি সন্দিহান। নাইব উদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের নারী নির্যাতনের যে ছবি তুলেছেন তা আমাদের ইতিহাসের জন্য দলিলের মতো। ’
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক সুবীর চৌধুরী।
দ্বিতীয় পর্বে নাইবউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে স্বেচ্ছসেবী সংগঠন প্রজ্ঞা নির্মিত ‘একটি নত্র জাগে’ প্রদর্শন করা হয়। সেখানে দেখানো হয়েছে নাইব উদ্দিন আহমেদের জীবন এবং কর্ম। তারপর প্রদর্শিত হয় নওয়াজেশ আহমদের ক্যামেরায় ‘রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র।
এছাড়া বেঙ্গলের গ্যালারিজুড়ে ছিল দুই ভাইয়ের বিশিষ্ট কিছু আলোকচিত্রের প্রদর্শনী।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২১০, ডিসেম্বর ৪, ২০১০