‘তুমি জানো না জানো না রে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা’, ‘এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’- বিখ্যাত এসব গানসহ অসংখ্য মরমী গানের রচয়িতা চারণ কবি কবিয়াল বিজয় সরকার। কবিগানের উৎকর্ষ সাধনে তার অবদান অসামান্য।
বিজয় সরকার ১৯০৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নবকৃষ্ণ আধিকারী, মায়ের নাম হিমালয় দেবী। কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা করে বিজয় সরকার নিজেই তা পরিবেশন করতেন। ১৯২৯ সালে তিনি কবিগানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে কবিয়াল বিজয় সরকারের গানের আসরে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদদীন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। তারা তার গান শুনে মুগ্ধ হন এবং তাকে আশীর্বাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ তাকে সংবর্ধিত করেন।
জাতিধর্মবর্ণের ঊর্ধ্বে থেকে চারণ কবি বিজয় সরকার প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদি গান, শোকগীতি, ইসলামি গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান। বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের সঙ্গে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। সুলতান বার বার ছুটে যেতেন বিজয় সরকারের বাড়িতে ।
বিজয় সরকারের পালিত পুত্র জীবন অধিকারী ‘বাংলানিউজ’কে বলেন, বর্তমানে বিজয়ের গান অনেক শিল্পীই পরিবেশন করে থাকেন কিন্তু তারা গানগুলো বিকৃতভাবে পরিবেশন করেন, যা খুব দুঃখজনক।
বিজয়গীতির শিল্পী বিপ্লব বলেন, বিজয় সরকার তার গানে বাংলার মানুষের প্রাণের কথা বলেছেন।
বিজয়ভক্ত খাজা মিয়া বলেন, বিজয়ের নিজ বাড়িতে তৈরিকৃত বিজয় মঞ্চটি কিছুদিন আগেও তৈরি করা হলে ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে এটি সংস্কারের দাবি জানান।
বিজয় সরকারের স্মৃতিরায় গঠিত বিজয় সংসদ-এর সভাপতি ভামিনী মোহন রায় বাংলানিউজকে জানান, বিজয় সরকারের গানের পান্ডুলিপিগুলো সংরণ করে সঠিকভাবে পরিবেশনের ব্যবস্থা করা দরকার। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনেরও দাবি জানান।
বিজয় সদনের সাধারণ সম্পাদক আকরাম শাহীদ চুন্নু বিজয় সরকারকে জাতীয় চারণ কবির স্বীকৃতি প্রদান করে নড়াইলে একটি পূর্ণাঙ্গ ফোক ইনিস্টিটিউট স্থাপনের জন্য দাবি জানান।
স্মরণ-অনুষ্ঠান
এদিকে বিজয় সরকারের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিজয় সদন নড়াইল শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর দু দিনব্যাপী বিজয়মেলা এবং বিজয় সংসদ বিজয় সরকারের জন্মস্থান ডুমদি গ্রামে ৮ ডিসেম্বর দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭১৭, ডিসেম্বর ৪, ২০১০