ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কবুতরের বিরাট হাট!

শরিফুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
কবুতরের বিরাট হাট!

‘যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলে না মোরে’র মতো হাজারো গান আর ছন্দের মাধ্যমে বাঙালি জীবনের সাথে পাখির ভূমিকা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কেবল গান বা শিল্প-সাহিত্যে নয়, প্রাচীনকালের রাজা-বাদশাদের আমলে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করত কবুতর।

আধুনিক ডাকব্যবস্থা গড়ে ওঠার আগ পর্যন্ত যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কবুতর সুদীর্ঘকাল রাজত্ব করেছে।

সময়ের ধারাবাহিকতায় যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও বাঙালির জীবনের সাথে কবুতরের সম্পর্ক আজও গভীর। কবুতর পোষা এখনো অনেকেরই প্রিয় শখ। তাই দেখা যায় ৯ থেকে ৯০ বছরের শৌখিন পাখিপ্রেমীরা কবুতর পালন করছেন মনের আনন্দে, ভালোবাসার টানে। নিজেদের ভালোবাসাকে একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সপ্তাহে একদিন তারা একত্র হচ্ছেন কবুতরের হাটে। রাজধানীর বিভিন্ন বিখ্যাত বাজার, শৌখিন মার্কেটে কবুতর থাকলেও সেখানে যেন নেই ভালোবাসার টান, নেই প্রাণের সম্মিলন। শৌখিন কবুতরপ্রেমীরা তাই প্রতি শুক্রবার সারা দিনের জন্য একত্র হচ্ছেন গুলিস্থানের কবুতর হাটে।

হোমা, লাখা, গ্রীবাজ, মিহিরবাজ, সিরাজী, গিয়াছুল্লী, শাটিং, কিং, শর্ট এঞ্জেল, গররা, পোয়ার্টার, রেসার, কিলা, র‌্যাগস, বার্মিজ, বোম্বে এগুলো এলোমেলো কোনও নাম নয়। এগুলো বিভিন্ন জাতের কবুতর। কোনও কবুতর দেখতে বড়, কোনওটি দেখতে সুন্দর আবার কোনওটি উড়তে পারে না, কোনও কবুতর আকাশে খেলা করতে পারে ভালো। এক এক জাত এক এক গুণে গুণান্বিত। তবে বাজারে সবচে দামি ‘হোমা’ জাতের কবুতর। এক জোড়া কবুতরের দাম লাখ টাকারও বেশি। এ কবুতরের বিশেষত্ব, অনেক সময় ধরে উড়তে পারে। এছাড়া যত দূর থেকেই এই কবুতরকে ছেড়ে দেওয়া হোক না কেন, নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসবে বলে জানান মুগদার কবুতর ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কবুতরের দামের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। চোখে যদি ভালো লাগে, তাহলে ক্রেতারা দামের দিকে তাকান না। ’

বাজারে সবচে বেশি দেখা যায় ‘গ্রীবাজ’ শ্রেণীর কবুতর। এই শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে ৫০ ধরনের জাত। সবচে ভালো  সবুজ গলা ও লাল গলা গ্রীবাজ। এরা আকাশে অনেক ধরনের খেলা দেখাতে পারে। কবুতরপ্রেমী থেকে শুরু করে সবাই এই কবুতর পছন্দ করে। জোড়ার দাম ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া বড় আকারের কবুতর কিং জাত বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায়, তীè ও জোরালো ডাকের র‌্যাগস জাত বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়, মিহিরবাজ জাত বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়, ময়ূরী জাত ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়, সিরাজী জাত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়, শাটিং জাত ২ হাজার টাকা জোড়ায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান পুরান ঢাকার কবুতরপ্রেমী আরমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারে সাধারণত কম দামের কবুতর বিক্রি হয় আর এলাকায় বিক্রি হয় বেশি দামের কবুতর। ’

হাট থেকে কবুতর কেনার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি আছে অনেক সমস্যা। সময়টা শীত হওয়ায় সমস্যাগুলো সম্পর্কে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। আমেরিকাফেরত কবুতরপ্রেমী জাকির হোসেনের সঙ্গে আলাপ হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘শীতের সময় রোগবালাই বেশি হয়। তাই কবুতরকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। ’

হাট থেকে কবুতর কেনার সময় চোখ, ঠোঁট, গলা, ডানার নিচ ভালো করে দেখে কেনার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া বাসায় নিয়েই গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

কবুতর পালনে যেমন শখ পূরণ হয়, তেমনি এ খাত থেকে আসতে পারে কিছু বাড়তি আয়। বাংলানিউজকে তেমনটাই বলছিলেন সদ্য ডিপ্লোমা শেষ করা পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার মিঠু। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর বয়স থেকে কবুতর পালন করি। কিং, র‌্যাগসের মতো যেসব কবুতর কম উড়ে, সেসব কবুতর আমি খাঁচায় পুষি । মাস শেষে আমার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়। ’

গাড়ি, মোটর সাইকেল, বাসে করে ঢাকার আশপাশের নানা ধরনের ক্রেতা আসেন এই কবুতরের হাটে। কেউ আসেন বাড়তি কিছু কবুতর কিনে সংগ্রহশালা বৃদ্ধি করতে, কেউ আসেন নতুন কবুতর কিনে জোড় পূরণ করতে। আবার কেউ আসেন বাড়তি কবুতর বিক্রি করে খাবার সংগ্রহ করতে। তাই প্রতি শুক্রবার গুলিস্তানের এই হাটে জমে উঠে বেচাকেনা। কবুতরের খাবার ও পালনের খাঁচাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসারও সমাবেশ ঘটে এখানে।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪০, ডিসেম্বর ১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।