মেক্সিকান-ক্যারিবিয়ান বিচ রিসোর্টে সৈকতের জলের ৩০ ফুট নিচের সেই আর্ট মিউজিয়াম ‘দ্য সাইলেন্ট ইভল্যুশন’ জলের তলেই উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর শুক্রবার রীতিমতো আয়োজন করে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তা উদ্বোধন করা হয়।
ব্যতিক্রমধর্মী এই মিউজিয়ামের ৪০০ মানব ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডিকেইরস টেইলর।
এই আর্ট মিউজিয়াম পানির নিচে তৈরি করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম। কৃত্রিম মানবজগতের এ মিউজিয়ামটি স্থায়ীভাবেই এখানে থাকবে।
সামুদ্রিক কোরাল ও শৈবালের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে ওই ভাস্কর্যগুলোতে কৃত্রিম কোরাল ও শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে।
মেক্সিকোর ওই সমুদ্র সৈকত এমনিতেই পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তার ওপর এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার পর ধারণা করা হচ্ছে, মিউজিয়ামটি পরিদর্শনে প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ পর্যটক আসবেন।
এই মিউজিয়ামটি স্কুবা ডাইভিংয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন করতে হবে। এছাড়া যারা স্কুবা ডাইভ পারেন না তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তা পরিদর্শন করতে হবে।
সমুদ্রের প্রবল ঢেউ বা ঝড় জলোচ্ছ্বাসে ভাস্কর্যগুলো উপড়ে যাবে না বা কোনো ক্ষতি হবে না। এর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভিন্নধর্মী এই মিউজিয়ামে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে মানবসমান চার শ’ মানব ভাস্কর্য। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ জগতের নাম ‘দ্য সাইলেন্ট ইভল্যুশন’। কানকুনের মেক্সিকান-ক্যারিবিয়ান বিচ রিসোর্টে সৈকতের জলের ৩০ ফুট নিচে বিস্ময়কর এ জগৎ সৃষ্টি করা হয়েছে।
দুই বছর আগে ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডিকেইরস টেইলর এ কাজে হাত দেন। মিউজিয়ামটি তিনি মা-বাবার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন। এই ভিন্নধর্মী মানবজগতের ৪০০ বিভিন্ন বয়সী মানব-মানবী নানা ধরনের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এদের প্রত্যেকের দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে নিজস্ব অভিব্যক্তি আর ব্যস্ততা ফুটে উঠেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে এক বিশাল কর্মব্যবস্ত মানবজগৎ যেন জীবন্ত হয়ে আছে জলের তলায়।
পানির নিচে এমন শিল্পকর্মের প্রদর্শনী এটাই তার প্রথম নয়। এর আগে তিনি গ্রানাডা এবং ইংল্যান্ডেও ছোট আকারে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।
ভাস্কর্যগুলো তৈরি করা হয়েছে ডাঙাতেই। আর এ মাসের শুরু থেকে সেগুলো পানির নিচে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। গোটা মাস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অবশেষে সব কাজ শেষ করা হয়েছে।
ভাস্কর্যগুলো তৈরিতে শিল্পী ব্যবহার করেছেন ১২০ টন সিমেন্ট, বালি ও নুড়ি পাথর, ৩ হাজার ৮০০ মিটার ফাইবার গ্লাস, ৪০০ কেজি সিলিকন ও ৮ হাজার মাইল লম্বা লাল ফিতা।
এছাড়া ৩০ ফুট পানির নিচে সেগুলো স্থাপনের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১২০ ঘণ্টা। আর পুরো ব্যাপারটিতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ ডলার।
ভাস্কর্যগুলো স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে শিল্পী ও তার সহযোগীদের ২৫ হাজারবার পিঁপড়া আর মশার কামড় খেতে হয়েছে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছের কামড় খেতে হয়েছে ২০ বার। ভাস্কর টেইলর তার অবশ্য সব খরচ আর পরিশ্রমের সঙ্গে মজা করে এই বিষয়টিও যোগ করেছেন।
শেষ করার আগে আরেকটি তথ্য, এই ভাস্কর্যগুলোতে এমন সব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যে দীর্ঘদিন পানিতে থাকলেও কোনও সমস্যা হবে না। আর পর্যটকদের জন্য এগুলো স্থায়ীভাবে পানিতেই থাকবে।
ভাস্কর জেসন ডিকেইরস টেইলর ইউরোপ এবং এমিয়ার পরিবেশে বড় হয়েছেন। বাবা ইংলিশ মা গোয়ানিজ। তার ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে মালয়েশিয়ার কোরালসমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত এলাকায়। স্কুবা ডাইভিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কিছুদিন তিনি কাজ করেন। তিনি আন্ডারওয়াটার নিউট্রালিজম ও ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া তিনি লন্ডল ইন্সটিটিউট অব আর্টস থেকে ভাস্কর ও সিরামিক শিল্পের ওপর অনার্স পাস করেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৩০, নভেম্বর ২৯, ২০১০