ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সৌন্দর্যের প্রতীক নিঝুম দ্বীপ

শাহেদুল ইসলাম শফিক, হাতিয়া প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০
সৌন্দর্যের প্রতীক নিঝুম দ্বীপ

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় চল্লিশের দশকের শুরুতে সাগরের বালুকণা দিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠে অপার সৌন্দর্যের প্রতীক হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ। সাগরের উত্তাল তরঙ্গ, মুহুর্মুহু গর্জন যখন দ্বীপটির দিকে ধেয়ে আসে তখন মেঘনার রুপালি ঢেউ তাকে প্রতিহত করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও মেঘনার মোহনায় স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে এ দ্বীপটি। দেশের দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম।

নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন। ২৫ হাজার একর ভূমির ওপর গড়ে উঠা এ দ্বীপটি দেশের  মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। ২০০১ সালে সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান ও ২০০৮ সালে ইউনিয়ন ঘোষণা করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিঝুম দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ হরিণ। এখানে-সেখানে ঝাঁক বেঁধে হুটোপুটি খাচ্ছে হরেকরকম পশু-পাখি, কেওড়াবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মায়াবী হরিণের দল। শীতকালে অতিথি পাখির কলতানে আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। তখন এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকেরা ছুটে আসেন এখানে। দ্বীপের ছঁয়োয়াখালী, নামার বাজার, সতফুল বাজারসহ অন্যান্য স্থান থেকে তারা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখেন। দিনে দিনে বাড়ছে এই সৌন্দর্যপিপাসুদের সংখ্যা।

নিঝুম দ্বীপের লোকসংখ্যা ৩০ হাজার আর হরিণের সংখ্যা ৪০ হাজার। এটি সরকারি সংরতি বন এলাকা। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দ্বীপে আটটি পুরুষ ও সাতটি মাদি হরিণ, দুটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী বানর এবং দুটি অজগর সাপ ছেড়ে দেন। বন কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় দ্বীপের বনাঞ্চলে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী ছাড়া হয়। তবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক প্রাণী কমে গেছে। খাবার ও পানির সংকট, মানুষ, কুকুর ও শেয়ালের হামলাসহ নানা বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দ্বীপে এখন বাস করছে প্রায় ৪০ হাজার চিত্রা হরিণ, যা দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ।

নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশ জুড়ে রয়েছে এক বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। এদিক থেকে বিবেচনা করলে নিঝুম দ্বীপ সুন্দরবন, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও কুয়াকাটার মতো একটি মনোরম পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে। যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন, বিনোদনসহ নিরাপত্তার সুব্যবস্থা থাকলে দ্বীপে পর্যটক-সমাগম বাড়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

নিঝুম দ্বীপের চর বাহাউদ্দিনে পানিকাটা পাখি (ওহফরধহ ঝশরসসবৎ) বলে পরিচিত বিরল প্রজাতির এক পাখি রয়েছে। পাখিবিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশসহ শুধু বিশ্বের তিনটি দেশেই পাখিটির দেখা মেলে।
 
নিঝুম দ্বীপে রয়েছে নয়টি গুচ্ছগ্রাম, বন বিভাগের একটি বিট অফিস, একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, রেড ক্রিসেন্টের দুটি আশ্রয়কেন্দ্র, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) একটি ইউনিট অফিস, ছয়টি বাজার, একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত ১২টি কমিউনিটি বিদ্যালয়, আটটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ১৫টি গভীর নলকূপ, একটি বেসরকারি ডাকবাংলা (নিঝুম রিসোর্ট) ও একটি বেসরকারি বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্র।

অক্টোবর থেকে মে মাস নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও গাইডের ব্যবস্থা থাকলে বছরের যে কোনো সময় নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যেতে পারে। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। পরদিন সকাল নয়টা-দশটায় (আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল) হাতিয়ার তমরদ্দি লঞ্চঘাটে এটি পৌঁছায়। তমরুদ্দি থেকে নানাভাবে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে নোয়াখালীর মাইজদী হয়ে চার ঘণ্টায় সোনাপুর পৌঁছানো যায়। তারপর বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় সোনাপুর থেকে বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট, সেখান থেকে সি-ট্রাকে হাতিয়া পৌঁছানো যায়। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকেও জাহাজে হাতিয়া পৌঁছানো যায়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে যাত্রীবাহী জাহাজ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

নিঝুম দ্বীপে সরকারি কোনো হোটেল-মোটেল নেই। সেখানকার সরকারি ডাকবাংলো এখন বেসরকারি ডাকবাংলায় (নিঝুম রিসোর্ট) রূপান্তরিত হয়েছে। সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬২৫, অক্টোবর ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।